জোটশক্তি: বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে চন্দ্রবাবু নায়ডু, এইচ ডি দেবগৌড়া, শরদ পওয়ার, রাহুল গাঁধী, শরদ যাদব, গুলাম নবি আজাদ-সহ বিরোধী নেতারা। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
অখিলেশ-মায়াবতী এ যাত্রায় আসতে না পারলেও বিরোধী শিবিরের বৈঠকে নতুন সংযোজন চন্দ্রবাবু নায়ডু, প্রথম বার এলেন অরবিন্দ কেজরীবাল, নাগাল্যান্ডের আরও একটি দল। লোকসভায় বিজেপিকে হারানোর পণ করে বিরোধী জোটের সলতে পাকানো চলছিলই। তার মধ্যেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলের পদত্যাগের খবর আসতে নিমেষেই আরও পোক্ত হয়ে উঠল বিরোধী ঐক্যের ছবিটি। নরেন্দ্র মোদীকে তুলোধোনা করতে রাহুল গাঁধীর পাশে দাঁড়ালেন বাকি বিরোধীরা।
নির্বাচন কমিশনে বৈঠকের জন্য মমতা একটু আগেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তবে বৈঠক শেষে রাহুল গাঁধী যখন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন, তখন তাঁর পাশে চন্দ্রবাবু, শরদ পওয়ার, ফারুক আবদুল্লা, দেবগৌড়া, এম কে স্ট্যালিনের মতো তাবড় নেতা। আর সেখানেই সব বিরোধী দলের মুখ হয়ে রাহুল বললেন, ‘‘বিজেপি-আরএসএস তাদের এজেন্ডা আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। উর্জিত পটেল পদত্যাগ করেছেন। বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সিবিআই, নির্বাচন কমিশন, সংবিধানের উপর আঘাতকে আমরা রুখব। রাফালে নরেন্দ্র মোদীর ব্যক্তিগত দুর্নীতি, নোটবন্দির মুখোশ খুলব। সংসদের ভিতরে ও বাইরে আরও সমন্বয় করে সকলে কাজ করব আমরা ।’’
তখনই প্রশ্ন ছুটে এল রাহুলের দিকে। বিজয় মাল্যকে দেশে ফেরানো কী সরকারের বড় জয় নয়? আরও আক্রমণাত্মক রাহুল: ‘‘কীসের জয়? গোটা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী নিজের বন্ধুদের হাতে তুলে দিয়েছেন। বিজয় মাল্য ৯ হাজার কোটি টাকা, নীরব মোদী ৩৫ হাজার কোটি টাকা চুরি করে দেশ ছেড়েছেন। বন্ধু অনিল অম্বানীর হাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা তুলে দিয়েছেন মোদী নিজে। কিন্তু তা নিয়ে নিজে মুখ খোলেন না কেন? কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন। কিন্তু ব্যাঙ্ক তাঁদের পাশে নেই।’’
রাহুল যখন মোদীকে নিশানা করছেন, বাকি নেতারা তাকে সম্মতি জানাচ্ছেন। চন্দ্রবাবু জানালেন, ‘‘রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বেই সব বিরোধী দল আক্রমণাত্মক হবে। রাষ্ট্রপতির কাছেও যাবে। আরও দল যোগ দেবে জোটে।’’ সেই সময়ই নিঃশব্দে পিছন থেকে চলে গেলেন সনিয়া গাঁধী, বৈঠকের শুরুতেই সব দলকে মতপার্থক্য ভুলে একসঙ্গে লড়াই করার আহ্বান জানান যিনি। বলেন, ‘‘সংবিধান আক্রান্ত, গণতন্ত্রও বিপদে। দেশের স্বার্থেই সকলকে এক সঙ্গে আসতে হবে।’’ এমনকি মনমোহন সিংহও কর্নাটকে এক সঙ্গে সরকার গড়ার নজির তুলে বলেন— পশ্চিমবঙ্গ, বিহারের মতো রাজ্যেও মিলেমিশেই লড়তে হবে।
কংগ্রেস বলছে— বিরোধী জোট যাতে দানা না-বাঁধে, তাই অখিলেশ-মায়াবতীর উপর চাপ বাড়াচ্ছে বিজেপি। কিন্তু আজ ২১টি দল যে ভাবে এক সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপিকে হারানোর পণ করেছে, তাতে অচিরে বাকিদেরও সঙ্গে আসতে হবে। কেজরীবালও আজ পুরনো তিক্ততা ভুলে এক সঙ্গে কাজ করার কথা বলেছেন। কাল পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলের পরে খেলা আরও ঘুরবে। লোকসভায় মোদীকে গদিচ্যুত করাই সকলের লক্ষ্য।