অন্ধ্রে গুলিতে ২০ জনের মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ। নয়াদিল্লির অন্ধ্র ভবনের সামনে। ছবি: পিটিআই।
চন্দনকাঠ পাচারকারী সন্দেহে অন্ধ্র পুলিশের টাস্ক ফোর্সের গুলিতে ২০ জনের মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্য সরকারকে খুনের মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিল হায়দরাবাদ হাইকোর্ট। ঘটনার পর কেটে গিয়েছে চার দিন। রাজ্যের তরফে এখনও অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হল না কেন, সেই প্রশ্ন তুলে অন্ধ্র সরকারকে ভর্ৎসনাও করেছে কোর্ট। বিচারপতি জানিয়েছেন, ঘটনা নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি-র রিপোর্টে সন্তুষ্ট নয় আদালত। রিপোর্টটি ফের খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। অন্ধ্রের জঙ্গলে ২০ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি প্রতিবেশী রাজ্য তেলঙ্গানায় পুলিশ ভ্যানে পাঁচ বিচারাধীন বন্দির মৃত্যুর ঘটনাতেও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করেছে তারা। শুক্রবার অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানা সরকারকে নোটিস পাঠিয়েছেন সংস্থার সভাপতি তথা প্রাক্তন বিচারপতি কে জি বালকৃষ্ণন। দু’টি ঘটনাতেই মানবাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ এনে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির ডিজি এবং মুখ্যসচিবদের কাছে জবাবদিহি চেয়েছেন তিনি। ২২ এপ্রিল থেকে পরপর তিন দিন তিরুঅনন্তপুরমে শুনানি হবে বলে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে।
চন্দনকাঠ পাচারকারী সন্দেহে নিহতদের প্রত্যেকেই তামিলনাড়ুর। ৭ এপ্রিল সকালে চিত্তুরের সেশচলম জঙ্গল এলাকায় অন্ধ্র পুলিশ এবং স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁদের। ঘটনার দ্রুত এবং যথাযথ তদন্তের দাবিতে সে দিনই অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুকে চিঠি লিখেছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পনিরসেলভম। নিহতদের পরিবার-পিছু ক্ষতিপূরণের দাবিও জানিয়েছিলেন সেই চিঠিতে। শুক্রবার পনিরসেলভমের সেই চিঠির জবাবে চন্দ্রবাবু জানিয়েছেন, ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি আশ্বাস দিচ্ছি, দ্রুত তদন্ত সেরে ফেলা হবে। তার ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপও করা হবে।’’ চিত্তুর-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন ভেলোর থেকে চিত্তুর পর্যন্ত একটি মিছিলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এমডিএমকে প্রধান ভাইকো। পথে তামিলনাড়ুর পুলিশ বাধা দেয় তাঁদের। ভাইকো-সহ এমডিএমকে-র এক হাজার সমর্থককে আটক করা হয়। ভেলোর ফোর্ট থেকে শুরু হয়েছিল সেই মিছিল। চিত্তুরের জেলাশাসকের অফিস ঘেরাও করার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। পুলিশি বাধায় মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। হেফাজত থেকেই ভাইকো বলেন, ‘‘ঘটনাটিকে সংঘর্ষের তকমা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তারই প্রতিবাদে এই মিছিল। ২০ জন তামিল খুনে অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।’’
চিত্তুরে নিহতদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত দু’জনের পরিচয় জানা গিয়েছে। নাম শশীকুমার এবং মুরুগান। এই দু’জনের দেহ নিয়েই বৃহস্পতিবার থেকে তামিলনাড়ুর তিরুঅন্নামালাইয়ের রাস্তায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁদের পরিবার-পরিজন। দেহগুলি সমাহিতও করতে দিচ্ছেন না তাঁরা। শশীকুমারের স্ত্রী পুনরায় ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন তামিলনাড়ু সরকারের কাছে। এ নিয়ে মাদ্রাজ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় তামিলনাড়ু সরকার। শুক্রবার সেই মামলাতেই শশীকুমার, মুরুগান-সহ আরও ছ’জনের দেহ ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। তবে নতুন করে ময়নাতদন্ত নিয়ে কোনও রায় দেয়নি আদালত। বিচারপতি বলেছেন, ‘‘এই সময়ের মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট অথবা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারেন শশীকুমারের স্ত্রী। তত দিন পর্যন্ত দেহগুলি সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হল।’’ তিরুঅন্নামালাইয়ের সরকারি হাসপাতালে দেহগুলি রাখা থাকবে। তামিলনাড়ুর ধর্মপুরীর এক যুবক শুক্রবার দাবি করেন, চন্দনকাঠ পাচারকারী সন্দেহে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর বাবাও। তাঁর দাবি, ধর্মপুরী থেকে কাজের খোঁজে তিনি, তাঁর বাবা ও আরও ছ’জন বাসে করে তিরুপতি যাচ্ছিলেন। মাঝপথে তিনি নেমে গিয়েছিলেন। তাঁকে ছেড়েই চলে যায় বাসটি। শিবকুমার নামের এক যুবকের মোবাইলে ফোন করে তিনি জানতে পারেন তাঁর বাবা এবং ছয় সঙ্গীকে নগরি থানায় নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। খোঁজ নিতে ঘণ্টাখানেক পর ফের ফোন করেন যুবক। এক পুলিশকর্মী তখন ফোন ধরে বলেন, নিয়মমাফিক তদন্তের জন্য আটক করা হয়েছে সাত জনকে। যুবকের দাবি, তার পর বারবার ফোন করা সত্ত্বেও আর জবাব মেলেনি।
আজই ৪০ জন তামিল আদিবাসীর নিখোঁজ হওয়ার একটি মামলায় মাদ্রাজ হাইকোর্টে আবেদন করেছেন কে মহারাজন নামে এক আইনজীবী। তাঁর দাবি, এই ৪০ জন কাজের খোঁজে অন্ধ্রে এসেছিলেন। সম্ভবত কাজের লোভ দেখিয়ে তাঁদের সেই সেশচলমেই নিয়ে আসা হয়েছিল। এঁদের অধিকাংশেরই এখন কোনও খোঁজ নেই। ওই আইনজীবীর সন্দেহ, এই ৪০ জন হয়তো চন্দনদস্যুদের খপ্পরেই পড়েছেন।