কেজরীবাল।
ক্যামেরা বন্দি ‘বিপ্লব’ মাল্টিপ্লেক্সের পর্দায়। বক্স অফিসে পাল্লা বিদ্যা বালনের সঙ্গে। পপকর্নের সঙ্গে ‘পলিটিক্যাল থ্রিলার’ মিলেমিশে এক।
দেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা তৈরি করে দিল ‘অ্যান ইনসিগনিফিক্যান্ট ম্যান’। অরবিন্দ কেজরীবাল ও তাঁর আম আদমি পার্টির উত্থান নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র এখন দিল্লি ও দেশের নানা শহরে রমরমিয়ে চলছে। দিল্লিতে তো বটেই, গুজরাতের ভোটের বাজারে অমদাবাদেও ‘হাউসফুল’ ‘এক অকিঞ্চিৎকর ব্যক্তি’-র কাহিনি। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, ‘এক অকিঞ্চিৎকর ব্যক্তি’-র পিছনে কি কিঞ্চিৎ রাজনীতিও রয়েছে? নিজের উপরেই তথ্যচিত্র হলে দেখিয়ে, আসলে পায়ের নিচে জমি শক্ত করতে চাইছেন অরবিন্দ কেজরাবীল?
জীবিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে এ দেশে তথ্যচিত্র আগেও তৈরি হয়েছে। জ্যোতি বসুকে নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন গৌতম ঘোষ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলন নিয়েও তথ্যচিত্র কম হয়নি। কিন্তু তা বাণিজ্যিক ভাবে মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পাচ্ছে— এমন ঘটনা বিরল।
আপের অন্তঃকলহ নিত্যদিনের ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরীর জনপ্রিয়তা নিম্নমুখী। অথচ ২০১৯-এর আগে মোদী-বিরোধী জোটেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চান কেজরী। মমতাও সে জন্য কেজরী ও রাহুল গাঁধীর মধ্যে দূরত্ব কমাতে চান।
বিরোধীদের প্রশ্ন, ঠিক এই সময়েই কি আম আদমি পার্টিকে ঘিরে মানুষের আবেগ উস্কে দিতে চান কেজরীবাল?
ছবির পরিচালক খুশবু রাঙ্কা ও বিনয় শুক্ল অবশ্য এই অভিযোগ মানতে রাজি নন। তাঁদের দাবি, কেজরীবাল যখন দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চ থেকে আপ-এর সলতে পাকানো শুরু করেছেন, সেই সময়েই তাঁরা ভিডিও ক্যামেরা হাতে হাজির হন। ইতিহাস ধরে রাখতে চান। কেজরীবাল ও তাঁর বিশ্বস্ত মনীশ সিসৌদিয়া আপত্তি তোলেননি। সেই সুবাদেই আপ-এর জন্ম থেকে ২০১৩-র দিল্লি ভোটে ক্ষমতা দখল—প্রায় ৪০০ ঘণ্টার ঘটনাক্রম ক্যামেরাবন্দি। তাকেই কেটেছেঁটে দেড় ঘণ্টার তথ্যচিত্র।
পহলাজ নিহালনির সেন্সর বোর্ড অনেক দিন আটকে রেখেছিল। দাবি ছিল, নরেন্দ্র মোদী, শীলা দীক্ষিতদের ‘নো অবজেকশন লেটার’ আনতে হবে। কেজরীর মুখে কালি ছেটানো নচিকেত ওয়ালহেকর সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন। সব বাধা পেরিয়ে, নানা বিদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে সমাদর কুড়িয়ে গত সপ্তাহে ছবিটি এ দেশে মুক্তি পেয়েছে। বিদ্যা বালনের ‘তুমহারি সুলু’-র পাশাপাশি মাল্টিপ্লেক্সে ভিড় টানছে।
বলিউডের আয়ুস্মান খুরানা, সোনম কপূররাও এই ‘পলিটিক্যাল থ্রিলার’ ঘিরে উচ্ছ্বসিত। শুরুতে একসঙ্গে থাকলেও পরে দল ভেঙে বেরিয়ে যাওয়া যোগেন্দ্র যাদবও বলছেন, ‘‘ছবিটা সৎ। কোনও এক জন, দু’জনকে নিয়ে নয়, ছবিটা আমাদের সবাইকে নিয়ে।’’
সৎ না বলে উপায়ও নেই। কারণ খুশবু-বিনয়ের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে, কেজরীর শপথের সময়ই মঞ্চ থেকে দূরে, ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে যোগেন্দ্র যাদব। কেজরীর রণকৌশল তৈরির বৈঠক, তাঁর কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার দৃশ্যও ছবিতে এসেছে।
বিরোধীরা বলছেন, কেজরীবাল নিজেকে আমজনতার কাছের মানুষ দেখাতে ভালোবাসেন। ছবির প্রযোজক আনন্দ গাঁধীর পাল্টা দাবি, ‘‘আমরা চাই, ছবিটা থেকে গণতন্ত্র নিয়ে বিতর্ক হোক। এটাই আসল।’’