Amit Shah

UP Election 2022: পাখির চোখ উত্তরপ্রদেশ, বারাণসীতে শাহ

আজ বারাণসীতে পা দিয়েই মদনমোহন মালব্যের মূর্তিতে মালা দিয়ে প্রচারাভিয়ান শুরু করেন অমিত শাহ। এর পরে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৪৩
Share:

বারাণসীর অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শুক্রবার। ছবি পিটিআই।

প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশে লক্ষ্য অন্তত তিনশো আসন। দলের ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশল ঠিক করতে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে একসঙ্গে ৭০০ বিজেপি নেতা-কর্মীর দিগদর্শনে মাঠে নামলেন অমিত শাহ। দু’দিনের সফরে কাল আজমগঢ়ে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস করবেন শাহ। বিজেপির প্রধান বিরোধী সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুখ অখিলেশ সিংহ যাদবের লোকসভা কেন্দ্র হল সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আজমগঢ়। অমিত শাহ-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রীদের এ ভাবে ঘন ঘন উত্তরপ্রদেশ আসা নিয়ে আজ অখিলেশের কটাক্ষ, ‘‘পরাজয় নিশ্চিত বুঝেই উত্তরপ্রদেশ আসার ঢল নেমেছে বিজেপি নেতাদের।’’

Advertisement

আজ বারাণসীতে পা দিয়েই মদনমোহন মালব্যের মূর্তিতে মালা দিয়ে প্রচারাভিয়ান শুরু করেন অমিত শাহ। এর পরে দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। সূত্রের মতে, বৈঠকে মূলত উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চল এলাকায় জনসংযোগ, শক্তিশালী সংগঠন গড়তে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করার মতো বিষয়গুলিতে জোর দেন অমিত শাহ। বৈঠকে রাজ্যের প্রত্যেকটি বুথে বুথ কমিটি গড়ার উপরে জোর দিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে রাজ্যে অন্তত দেড় লক্ষ বুথ কমিটি তৈরি করতে বলেছেন। এ ছাড়া গুজরাতের ধাঁচে প্রতিটি বুথ কমিটির আওতায় ভোটার তালিকার প্রতি পাতার দায়িত্ব এক জন করে কর্মীর হাতে তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অমিত। ওই কর্মীদের কাজ হবে এক-একটি পাতায় যত জনের নাম রয়েছে সেই সব ব্যক্তির বাড়ি গিয়ে বিজেপির ভাবাদর্শ প্রচার করা ও ভোটের দিন সেই ভোটারদের ভোট নিশ্চিত করা।

বিজেপি সূত্রের মতে, আজকের বৈঠকে রাজ্যের ছটি অঞ্চলের ছয় বিভাগীয় প্রধান, ৯৮ জন জেলা সভাপতি ও ৪০৩টি বিধানসভা আসনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব মৌর্য, রাজ্য সভাপতি স্বতন্ত্র দেও সিংহ ও উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতা ধর্মেন্দ্র প্রধান। বিজেপি কর্মীদের অমিত বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে জয় ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে জয়ের পথ খুলে দেবে।’’ তাঁর মতে, ‘‘প্রত্যেক কর্মীর দায়িত্ব হবে ৬০ জন ব্যক্তিকে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার বিষয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা। তার মধ্যে অন্তত ২০টি ভোট নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেক কর্মীকে নিশ্চিত করতে হবে অন্তত তিনটি পরিবারের সদস্যদের ভোট।’’

Advertisement

একাধিক জনমত সমীক্ষা উত্তরপ্রদেশে বিজেপিকে এগিয়ে রাখলেও, সে রাজ্যে প্রচারে ঝুঁকি রাখতে চায় না দল। গত দু’সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয় বার উত্তরপ্রদেশ সফরে গেলেন অমিত শাহ। তেমনই কেন্দ্র যে উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নের জন্য দায়বদ্ধ তা প্রমাণে রাজ্যে একের পর এক প্রকল্পের ঘোষণা ও তার শিলান্যাসে মন দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ সকালে উত্তরপ্রদেশের প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা করিডর নির্মানের বিষয়টি নিয়ে লখনউয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। পিছিয়ে নেই খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদীও। আগামী কয়েক দিনে একাধিক বার উত্তরপ্রদেশ সফর করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। এর মধ্যে ১৬ নভেম্বর পূর্বাঞ্চল এক্সপ্রেসওয়ে ও ৫ ডিসেম্বর গোরক্ষপুরে সার কারখানার উদ্বোধন ও ১৩ ডিসেম্বর প্রস্তাবিত কাশী-বিশ্বনাথ করিডর প্রকল্পের সূচনা করার কথা রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে উত্তরপ্রদেশভিত্তিক প্রকল্পের উদ্বোধন সম্ভব হলে সে রাজ্য থেকে করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। যাতে কেন্দ্র যে রাজ্যের পাশে রয়েছে সেই বার্তা দেওয়া সম্ভবপর হয়।

প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ধারাবাহিক উত্তরপ্রদেশ সফর নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধী সপা নেতা অখিলেশ সিংহ। তাঁর কথায়, ‘‘উত্তরপ্রদেশে হার যে নিশ্চিত সেই দেওয়াল লিখন পড়ে ফেলেছেন বিজেপি নেতারা। আর তাই প্রতি সপ্তাহে এক জন করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দিল্লি থেকে রাজ্যে উড়ে আসছেন। যত হারের ভয় বাড়বে তত আনাগোনা বাড়বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের।’’ পরিস্থিতি যে খুব অনুকূলে নেই তা বুঝতে পারছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিশেষ করে হিমাচল প্রদেশ থেকে কর্নাটক-দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উপনির্বাচনে হার রীতিমতো অস্বস্তিতে রেখেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। পেট্রো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, জিনিসপত্রের দাম বাড়া, দুর্বল অর্থনীতি, মানুষের কাজ হারানোর মতো নানাবিধ ঘটনায় আমজনতার ক্ষোভ যে বিজেপির উপরে বাড়ছে তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন দলীয় নেতারা। কৃষক আন্দোলনের কারণে রাজ্যের কৃষক সমাজের একটি বড় অংশ ইতিমধ্যেই বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ ঘুরিয়েছে। যোগীর সাড়ে চার বছরের বেশি শাসনে ঠাকুর-ক্ষত্রিয় সম্প্রদায় প্রাধান্য পাওয়ায় ক্ষুব্ধ ব্রাহ্মণ থেকে দলিত সব শ্রেণিই। মুখ ফেরাচ্ছে ওবিসি সমাজও। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার হাওয়া চর্তুদিকেই। অখিলেশের কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা সব ক্ষেত্রে অরাজকতা দেখা দিয়েছে। মহিলারা সুরক্ষিত নন। যুব সম্প্রদায় চাকুরিহীন। কৃষকদের স্বার্থ অগ্রাহ্য করে পুঁজিপতিদের স্বার্থে নীতি আনছে মোদী সরকার। উত্তরপ্রদেশের মানুষ সমস্ত বঞ্চনার বিরুদ্ধে জবাব দিতে প্রস্তুত হচ্ছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement