(বাঁ দিকে) রাহুল গান্ধী এবং অমিত শাহ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
‘তিনি’ চোখে ঠুলি এঁটে রয়েছেন। তাই জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়ন ‘তাঁর’ চোখে পড়ে না। আজ রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাজকর্ম সংক্রান্ত আলোচনায় লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর নাম না-করে তাঁর উদ্দেশে এমনই কটাক্ষ ছুড়ে দিলেন অমিত শাহ। নিজের মন্ত্রক সংক্রান্ত বিতর্কের জবাবি বক্তৃতায় তিনি বহু বিষয় নিয়ে সরব হলেও জনগণনা প্রশ্নে একটি শব্দ খরচ করেননি। এড়িয়ে যান মণিপুরের প্রসঙ্গও। কেবল বলেন, মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হওয়ার বিষয়টি যখন রাজ্যসভায় আসবে, তখন বিস্তারিত আলোচনা হবে।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পরে প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু উপত্যকার তেমন কোনও উন্নয়ন হয়নি বলে আজ সরব হয়েছিলেন অধিকাংশ বিরোধী দলের সাংসদেরা। সেই সমালোচনার জবাবে ২০২৩ সালে রাহুলের কাশ্মীর যাত্রাকে হাতিয়ার করেন শাহ। লোকসভা ভোটের আগের বছরে কন্যাকুমারিকা থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ করেছিলেন রাহুল। শাহের কথায়, ‘‘তিনি (রাহুল) নির্বিঘ্নে কাশ্মীর গিয়েছিলেন। সেখানে বরফ দিয়ে হোলি খেলেন। তার পর বলে বসেন, তিনি নাকি সেখানে সন্ত্রাসবাদীদের দেখতে পেয়েছেন।’’ এর পরেই শাহ-কটাক্ষ, ‘‘আরে ভাই, মনে যদি সন্ত্রাসবাদী ঘর করে, তা হলে সে তো স্বপ্নেও এসে উপস্থিত হবে, কাশ্মীরেও উপস্থিত হবে।’’ রাহুল ঠিক কোথায় জঙ্গি দেখেছিলেন, সে বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যা আজ দেননি শাহ। তবে ২০২৩ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ চলাকালীন কাশ্মীর যাওয়ার স্মৃতি রোমন্থন করে রাহুল বলেছিলেন, তিনি নিরাপত্তারক্ষীদের বারণ সত্ত্বেও কাশ্মীরের জঙ্গি-উপদ্রুত এলাকা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছিলেন। রাহুলের দাবি, সেই সময়ে এক জন অচেনা লোক তাঁর সঙ্গে দেখা করে দূরে দাঁড়ানো কিছু লোককে দেখিয়ে বলেছিল, ওই লোকগুলি আসলে জঙ্গি। ওই ‘জঙ্গি’রা তাঁকে মেরে ফেলতে পারে,
এক বার মনে হলেও শেষ পর্যন্ত সে রকম কিছুই হয়নি।
আজ রাজ্যসভায় শাহ বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, বর্তমান সরকার জঙ্গি দমনে কড়া নীতি নিয়ে চলেছে। ফের রাহুলকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি চোখে ঠুলি পরে থাকে, তা হলে সে উন্নয়ন দেখবে কী করে! উনি রাস্তায় জঙ্গি দেখতে পান! আর আমরা জঙ্গি দেখলেই তাদের চোখের মাঝখানে গুলি মেরে থাকি। আগে জঙ্গিদের মৃতদেহ নিয়ে শোভাযাত্রা বেরোত। এখন যেখানে তাদের গুলি করা হয়, সেখানেই কবর দেওয়া হয়।’’ শাহ দাবি করেন, বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর থেকে ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে জম্মু ও কাশ্মীর। ২০১৯ সালে বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সঙ্গেই জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। বলা হয়েছিল, বিধানসভা নির্বাচনে জিতে আসা সরকার এলেই রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। ওই মর্যাদা ফেরানো নিয়ে কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহের প্রশ্নের উত্তর দেননি শাহ। করোনার কারণে ২০২১ সাল থেকে আটকে থাকা জনগণনার কাজ কবে থেকে শুরু হবে, সেই প্রশ্নের উত্তরও এড়িয়ে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।