অমিত শাহ।—ছবি পিটিআই।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জি ঘিরে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পরস্পরবিরোধী মন্তব্যে নতুন করে আবার ধোঁয়াশা তৈরি হল। এর আগে এনআরসি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য খণ্ডন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে এক প্রস্ত বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। আর আজ নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য কার্যত খণ্ডন করে অমিত শাহ আর এক প্রস্ত ধোঁয়াশা তৈরি করলেন। নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, এনআরসি নিয়ে সরকারে কোনও আলোচনা হয়নি। আজ অমিত শাহ বললেন, এনআরসি নিয়ে ‘এখন’ কোনও আলোচনা হয়নি।
এর আগে নাগরিকত্ব আইন-বিতর্কের সময় অমিত নিজেই সংসদে জানিয়েছিলেন, দেশের সব রাজ্যে অসমের ধাঁচেই এনআরসি হবে। ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনী প্রচারেও তিনি বলেন, এনআরসি হবে ২০২৪ সালের আগেই। সেই মতো প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। কিন্তু দেশব্যাপী প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হওয়ার ক’দিনের মধ্যে দিল্লির রামলীলা ময়দানের প্রচারসভায় মোদী দাবি করেন, অসমে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এনআরসি হয়েছে। দেশব্যাপী এনআরসি নিয়ে সরকারের মধ্যে কোনও কথাই হয়নি। অমিত নিজে আবার পরে একটি অনুষ্ঠানে বলেন, প্রধানমন্ত্রীই ঠিক বলছেন।
আজ তবে কী হল? এবিপি নিউজের শিখর সম্মেলন অনুষ্ঠানে এনআরসি নিয়ে অমিত শাহ কার্যত মোদীর বক্তব্যের এক নতুন ব্যাখ্যা হাজির করলেন। বললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীও এ কথাই বলেছেন যে, এখন দেশে এনআরসি আসছে না। আর আমিও বলছি, ‘এখন’ এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনা নেই। এখন আসছে না। এখন শুধু সিএএ এসেছে।’’ বারবার তিনি যে ভাবে ‘এখন’ শব্দটির উপরে জোর দিলেন আজ, তা নিয়েই জল্পনা শুরু হয়েছে ফের। বিজেপি তথা সরকারের দুই শীর্ষ নেতার এই কার্যত বিপরীত অবস্থানকে প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘এ তো দেখা যাচ্ছে একে অপরের বক্তব্য ভুল প্রমাণে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কে সত্যি বলেছেন বোঝা যাচ্ছে না। হতে পারে, দু’জনেই পরিকল্পিত ভাবে দেশকে বিভ্রান্ত করছেন।’’ বিরোধীদের অনেকেরই বক্তব্য, অমিত শাহ ‘এখন’ শব্দটি বলে ভবিষ্যতে এনআরসি আসার রাস্তা খুলে রাখলেন।
আরও পড়ুন: দুই-তৃতীয়াংশ আসন বাংলায়, দাবি অমিতের
তবে দেশজোড়া প্রতিবাদের মুখে কেন্দ্র যে খানিকটা হলেও ব্যাকফুটে, সেটা এ দিন অমিতের কথাতেও বোঝা গিয়েছে। সিএএ বির্তকের পর থেকেই বিরোধীদের একাংশ বলে আসছিলেন, সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে বিষয়টি আলোচনা করতে পারত সরকার। আজ বিরোধীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েই অমিত বলেন, ‘‘যদি কারও ওই আইনগুলি বোঝার প্রশ্নে কোনও সংশয় থাকে, তা হলে আমার দরজা তাঁদের জন্য খোলা রয়েছে।’’এনআরসি ও সিএএ-র পরে এখন এনপিআর বা জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আজ অমিত স্পষ্ট বলেছেন, এনপিআর তথ্যের সাপেক্ষে কোনও নথি দেখাতে হবে না। অমিতের বরং দাবি, শুধু বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতেই আন্দোলন হচ্ছে! এর পিছনে কংগ্রেসকে দুষে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেন ওই বিক্ষোভ-আন্দোলন কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে দেখা যাচ্ছে না?’’
আরও পড়ুন: সিএএ, এনআরসি পুনর্বিবেচনা চান অভিজিৎ-এস্থার