ফাইল চিত্র।
রাজ্য সভাপতিকে নিয়ে খুশি সর্বভারতীয় সভাপতি।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঠিক করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তৃণমূল স্তরে যে ‘মডেল’ নিয়ে এগোচ্ছেন, এগোনো হবে সেটিকে সামনে রেখেই। ফলে উগ্র-বেফাঁস মন্তব্যে অভ্যস্ত দিলীপকে বদলানো তো দূর, তাঁর অবস্থানেই সিলমোহর বসাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সভাপতি যে মতাদর্শ নিয়ে এগোচ্ছেন, জেলায়-জেলায় ঘুরছেন, তাতে আমরা খুশি। বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করবেই। কিন্তু শুধু বিরোধিতাই দলের লক্ষ্য নয়।
নরেন্দ্র মোদীর যেমন উন্নয়নের একটি বিকল্প মডেল আছে, তেমনই বিজেপির একটি বিকল্প রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ভূমিতে সেটিই মেলে ধরছেন রাজ্য সভাপতি।’’
অথচ এই দিলীপকেই যখন রাজ্য সভাপতি করা হয়েছিল, অনেক তাবড় নেতাও ভাবেননি তিনি সফল হবেন। দিল্লিতে মনোজ তিওয়ারি, উত্তরপ্রদেশে কেশবপ্রসাদ মৌর্যকে দলীয় সভাপতি করার সময়েও অনেকে ভুরু কুঁচকেছিলেন। কিন্তু এঁরাই পরে সফল হন। পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস আমলে বাস-ট্রাম পোড়াত সিপিএম। সেই ‘অতি-বিপ্লবী’ পথেই কখনও মমতা হেঁটেছেন, কখনও বিজেপি। কিন্তু বিজেপির যে নিজস্ব মৌলিক দর্শন ও বিচারধারা রয়েছে, দিলীপের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে সেটি অনেক বেশি মেলে ধরা গিয়েছে বলেই মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁদের বিশ্লেষণ, এর ফলেই রাজ্যে দলের যাঁরা আগে দূরে দূরে ছিলেন, সাম্প্রতিক কয়েকটি উপনির্বাচনে সাফল্যের স্বাদ পেয়ে তাঁরাও দিলীপের ছাতার তলায় এসেছেন।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু জাতীয়তাবাদের শিকড়টি লুকিয়ে আছে। এই রাজ্যে সম্প্রতি যে ভাবে রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী পালিত হয়েছে, তাতেই সেটি স্পষ্ট। এবং ‘অতি-বিপ্লবী’ রাজনীতি যে দলের আসল লাইন নয়, এই সব কর্মসূচির স্বতঃস্ফূর্ততাতেই বোঝা গিয়েছে তা। সম্প্রতি দিলীপের কয়েকটি মন্তব্য নিয়ে অবশ্য বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। অমর্ত্য সেনকে যখন দিলীপ ‘মেরুদণ্ডহীন’ বলেছিলেন, ঝড় উঠেছিল গোটা দেশেই। কিন্তু বিজেপির এক নেতার ব্যাখ্যা, দলের লাইনের সঙ্গে খাপ খাইয়েই নোবেলজয়ীর অবস্থানকে খারিজ করেছিলেন দিলীপ।
বিজেপি নেতাদের মতে, বাঙালিদের মধ্যেও অনেক বিবর্তন হয়েছে। হিন্দি বলয়ের সংস্কৃতির সঙ্গেও অনেকটা সম্পৃক্ত হয়েছেন তাঁরা। বাঙালিয়ানা মানেই এখন হিন্দির বিরোধিতা নয়। দিলীপের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে সেই বিষয়টিই মেলে ধরে বাঙালির কাছে নিজেদের ‘বিকল্প বিচারধারা’ সফল ভাবে পেশ করা যাচ্ছে বলে মনে করছেন অমিত শাহেরা।