একেবারে আত্মঘাতী গোল! তা-ও আবার এমন দিনে, যে দিন সবে মাত্র কর্নাটকের ভোট ঘোষণা হয়েছে।
বেঙ্গালুরুতে আজ ছিল বিজেপি সভাপতির সাংবাদিক বৈঠক। কয়েক দিন আগেই সে রাজ্যে গিয়ে রাহুল গাঁধী হাজারো অভিযোগ এনেছেন বিজেপির বিরুদ্ধে। ফলে আজ পাল্টা তিরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন সাংবাদিকেরা। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া আর কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গিয়ে মুখ ফস্কে অমিতের মন্তব্য, ‘‘কিছু দিন আগেই সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি বলেছিলেন, যদি কখনও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়, তা হলে এক নম্বরে থাকবে ইয়েদুরাপ্পার সরকার!’’
খোদ ইয়েদুরাপ্পা তখন অমিতের ডান পাশে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান তিনি। চমকে ওঠেন অমিতের অন্য পাশে থাকা বিজেপির আর এক নেতা প্রহ্লাদ জোশী। মুহূর্তে অমিতের কানের কাছে মুখ এনে প্রহ্লাদ বলেন, ‘‘সিদ্দারামাইয়া বলুন!’’ অবাক ইয়েদুরাপ্পা ভেবে পাচ্ছিলেন না ঠিক কী বলবেন। প্রহ্লাদ ভুল ধরিয়ে দিতেই অমিতের কানের কাছে তিনিও বলেন, ‘‘সিদ্দারামাইয়া! সিদ্দারামাইয়া!’’ মুহূর্তে ভুল শুধরে নেন অমিত। বলেন, ‘‘সিদ্দারামাইয়ার হাতে ৪০ লক্ষ টাকার ঘড়ি। ওঁর দুর্নীতি এ থেকেই বোঝা যায়।’’
বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে চাষিদের হাল কর্নাটকের তুলনায় কতটা ভাল, সেই দাবিও করতে থাকেন অমিত। বলেন, ‘‘গত ১৫ বছরে ওই সব রাজ্যে কৃষকদের আত্মহত্যার ঘটনা অনেক কম।’’ মহারাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে তাঁর দাবি, বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেই চাষিদের আত্মহত্যা কমে গিয়েছে।
কিন্তু তত ক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। নিজেদের মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থীকে সব থেকে ‘সব থেকে দুর্নীতিগ্রস্ত’ আখ্যা দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি— টেলিভিশনের সেই ফুটেজ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় রসিকতার বন্যা। এতটুকু সময় নষ্ট না করে টুইট করেন খোদ সিদ্দারামাইয়া। লেখেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত সত্যি কথাটা বলে ফেলেছেন। অমিত শাহ, আপনাকে ধন্যবাদ!’’ পরে অমিতকে মন্তব্য টুইটারে পোস্ট করেন রাহুল গাঁধী। বলেন, ‘‘বিজেপি সভাপতি আজ আমাদের একটা উপহার দিয়েছেন।’’ এই অসাবধানী ভুল নিয়ে অনেকেই ফ্রয়েডীয় স্খলনের তত্ত্বকেই টেনে আনছেন।
আর যাঁকে নিয়ে এত বিতর্ক, সেই ইয়েদুরাপ্পা ২০০৮ সালে কর্নাটকে বিজেপি সরকারের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে তিন বছরের মাথাতেই পদ ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে। এ বার প্রথা পাল্টে ৭৫ বছর বয়সি সেই নেতাকেই মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরেছে বিজেপি।