মমতার ঘুম নেই কেন, কটাক্ষে অমিতও

দু’পক্ষের সংঘাত ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে! নোট বাতিলের বিষয়টিকে হাতিয়ার করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাগাড়ে কেন্দ্র-বিরোধী সুর চড়াচ্ছেন। এ ব্যাপারে সংসদে সরকারকে কোণঠাসা করতে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে সমন্বয়েও নেমে পড়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১৪
Share:

দু’পক্ষের সংঘাত ক্রমশ তীব্রতর হচ্ছে!

Advertisement

নোট বাতিলের বিষয়টিকে হাতিয়ার করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাগাড়ে কেন্দ্র-বিরোধী সুর চড়াচ্ছেন। এ ব্যাপারে সংসদে সরকারকে কোণঠাসা করতে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে সমন্বয়েও নেমে পড়েছেন। এই অবস্থায় পাল্টা আক্রমণের ধার বাড়াল বিজেপি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির পর শুক্রবার তৃণমূল নেত্রীর তীব্র সমালোচনা করলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।

নোট বাতিল নিয়ে তৃণমূলের আপত্তি প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে এ দিন অমিত বলেন, ‘‘কীসের বিরোধিতা করছেন মমতাজি? নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত গরিব-বিরোধী— এ কথা এক মাত্র উনিই বলতে পারেন! কই আর কেউ তো বলছেন না!’’ এখানেই না থেমে অমিত শাহের কটাক্ষ, ‘‘এতে গরিবের কোনও লোকসান হয়নি। যাঁদের কালো টাকা রয়েছে, তাঁদেরই ঘুম চলে গেছে! তবে হ্যাঁ, কিছু রাজনৈতিক দলও এর ফলে দেউলিয়া হয়ে যাবে!’’

Advertisement

কেন্দ্রের শাসক দলকে অবশ্য ফাঁকা মাঠ দেয়নি তৃণমূল। বিজেপি সভাপতির সাংবাদিক বৈঠক শেষ হতেই মোদী-অমিত শাহকে পাল্টা কটাক্ষ করে মুখ খোলেন তৃণমূল মুখপাত্রেরা। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়-ডেরেক ও’ব্রায়েনদের বক্তব্য, ‘‘দিল্লিতে বসে কোন হরিদাস পাল কী বললেন, তৃণমূল তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না।’’ একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, সংসদে বিজেপির নানা জনবিরোধী পদক্ষেপের বিরোধিতায় সুর আরও চড়াবে তৃণমূল।

সংসদের গত অধিবেশন পর্যন্ত বিজেপি-তৃণমূলে প্রকাশ্যে চাপানউতোর থাকলেও তলে তলে সমঝোতা ছিল বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। সংসদে একাধিক বিল পাশ করাতে কেন্দ্রকে সাহায্য করেছে তৃণমূল। পাল্টা হিসেবে অমিত শাহরা মমতা-বিরোধী আক্রমণের সুর নরম করেছিলেন। এই সমঝোতাকে মোদীভাই-দিদিভাই বলে কটাক্ষ করার পাশাপাশি

বাম-কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপির চাপেই সারদা-তদন্ত নিয়ে সিবিআই দীর্ঘদিন ধরে গা-ছাড়া

মনোভাব দেখাচ্ছে।

সমঝোতার এই মনোভাবটাই গত কয়েক সপ্তাহে দ্রুত বদলেছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাই, একশো দিনের কাজে সরাসরি শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মজুরির টাকা পাঠানোর মতো সিদ্ধান্তে মোদী সরকারের ওপর চটেছেন মমতা। বিভিন্ন বিষয়ে মোদী সরকারকে চাপে পড়তে দেখে বিজেপি-বিরোধী দলগুলিকে এককাট্টা করতেও ইদানীং সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি।

এই অবস্থায় মমতা সম্পর্কে অন্তত এখনই আর নরম মনোভাব দেখাতে নারাজ বিজেপি। দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, এমন নয় যে সংসদের আসন্ন অধিবেশনে তৃণমূলের সমর্থন লাগবে না। এখনও পণ্য পরিষেবা কর সংক্রান্ত দু’টি বিল সংসদে পাশ করাতে হবে। কিন্তু এই দু’টি বিলকে ‘অর্থবিল’ করে লোকসভায় পাশ করিয়ে রাজ্যসভা এড়ানোর ভাবনাও রয়েছে সরকারের। তা ছাড়া রোজ কোনও না কোনও বিষয়ে মমতা যখন কেন্দ্র-বিরোধী সুর চড়াচ্ছেন, তখন জমি ছাড়তে নারাজ বিজেপি। দলের বক্তব্য, নোট বাতিল নিয়ে মমতার বিরোধিতা আসলে ছুতো। তৃণমূলের আসল লক্ষ্য, বাকি বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে বিজেপিকে চাপে ফেলা।

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে বিজেপি-তৃণমূল দ্বৈরথে বলি হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে সংসদের আসন্ন অধিবেশনের। সংশয় নেই, কেন্দ্র বিরোধিতায় এ বারের অধিবেশনে সবাইকে ছাপিয়ে যেতে চাইবে তৃণমূল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement