কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়েছে কংগ্রেস সাংসদের বাড়ি থেকে। এখনও চলছে গুনতি। প্রকাশ্যে আসা ছবি-ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, আলমারি খুলতেই বেরিয়ে আসছে নোটের বান্ডিল! কোনওটা পাঁচশো, কোনওটা দু’শোর। একে একে পর পর দশটা আলমারির দরজা খুলতেই চক্ষু চড়কগাছ আয়কর আধিকারিকদের। সেই দৃশ্য ঘিরে তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি। তল্লাশি অভিযানে এত বিপুল অঙ্কের টাকার হদিস অতীতে আর কখনও মেলেনি! ওড়িশা-ঝাড়খণ্ডে গত কয়েকদিন ধরে চলা তল্লাশি অভিযানে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কোটি মতো উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ ধীরজপ্রসাদ সাহুর বাড়ি থেকেই শনিবার পর্যন্ত মিলেছে প্রায় ২২৫ কোটি টাকা। এ নিয়ে শনিবার কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ বার সুর চড়ালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও।
সাংসদের বাড়িতে নগদ টাকার উদ্ধার নিয়ে শাহের দাবি, দুর্নীতির টাকা যাতে ধরা না পড়ে যায়, তার জন্যই প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আটকাতে চেয়েছিল কংগ্রেস! মোদী জমানায় কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির তৎপরতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সুর চড়াচ্ছেন বিরোধী দলের নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, ইডি, সিবিআই ও আয়কর দফতরের মতো সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে বিজেপি। এই অভিযোগ তুলে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনেই শাহ বলেন, ‘‘সাংসদের বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেও কংগ্রেস চুপ, কারণ এটাই ওদের স্বভাব। কিন্তু জেডিইউ, আরজেডি, ডিএমকে, এসপি-র মতো দলগুলিও চুপ! এখন বুঝতে পারছি, নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে কেন প্রচারে নেমেছিল। সেটা খুবই স্পষ্ট।’’ শাহের সংযোজন, ‘‘তার কারণ, ওদের মনে ভয় ছিল, দুর্নীতির সব কথাই ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসবে।’’
ওড়িশা-ঝাড়খণ্ডে বিরাট অঙ্কের কালো টাকা উদ্ধার হতেই কংগ্রেসকে নিশানা করেছিলেন মোদী। সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘‘দেশের মানুষের উচিত উদ্ধার হওয়া এই বিপুল অঙ্কের টাকার দিকে নজর দেওয়া আর সততা নিয়ে কংগ্রেসের নেতাদের ভাষণ শোনা।’’ মানুষের থেকে লুট করা প্রতিটি টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টিও দিয়েছিলেন মোদী। এরপরেই ওড়িশার শাসক দল বিজেডি আয়কর তল্লাশিকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘‘ঝাড়খণ্ডের বিজেপি নেতারা বলছেন, উদ্ধার হওয়া টাকা কংগ্রেস নেতাদের। আর কংগ্রেস বলছে, এসব বিজেপি নেতাদের টাকা। ওরা পরস্পরকে দোষারোপ করছে। মনে হচ্ছে, দু’টো দলই তাদের টাকা ওই ব্যবসায়ীর কাছে লুকিয়ে রেখেছিল।’’
তবে কালো টাকা উদ্ধারের এই ঘটনার সঙ্গে বিজেডিকেও জড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। ওড়িশার বিজেপি মুখপাত্র মনোজ মহাপাত্র ওই মদ ব্যবসায়ীর সঙ্গে ওড়িশার এক জন মহিলা মন্ত্রীর ছবি সামনে এনেছেন। তাঁর দাবি, স্থানীয় নেতা ও রাজ্য সরকারের মদত না থাকলে আয়কর ফাঁকির এত বড় ঘটনা ঘটতে পারত না। ওড়িশা সরকারের তদন্তকারী বিভিন্ন দফতর এতদিন কী করছিল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘সাংসদ ধীরজ সাহুর ব্যবসার সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের কোনও রকম সম্পর্ক নেই। আয়কর কর্তৃপক্ষ তাঁর ঠিকানায় এত বিপুল টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে যে দাবি করছেন, তার ব্যাখ্যা শুধুমাত্র তিনিই দিতে পারবেন। দেওয়াও উচিত।’