কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।
উপলক্ষ আহোম সেনাপতি লাচিত বরফুকনের ৪০০তম জন্মজয়ন্তী। তাঁর বীরগাথা ও শরাইঘাট যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ দিন দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে হওয়া লাচিত উৎসবে বারবার মোগলদের ‘ধর্মান্ধ আক্রমণকারী’ হিসেবে তুলে ধরলেন। শাহ নিজেকে ‘ইতিহাসের বিদ্যার্থী’ বলে দাবি করে বললেন, “ধর্মান্ধ আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে দক্ষিণে শিবাজি, পশ্চিমে দুর্গাদাস রাঠৌর, পঞ্জাবে গুরু গোবিন্দ সিংহ ও অসমে লাচিত বরফুকন এক সঙ্গে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই মোগল সাম্রাজ্যের পতন হয় ও দেশ ফের স্বরাজের পথে এগোয়।” ইতিহাসের এমন ‘পুনর্নির্মাণ’-এর পরে তিনি ফের বলেন, “ভারতের ইতিহাসকে অনেকে বিকৃত করেছে। হাজির ইতিহাসবিদ ও ইতিহাসের ছাত্রদের বলছি, দেশের ইতিহাসকে গৌরবময় করে লেখার সময় এসেছে। গবেষণা করুন, সব অসত্য দূর করে নতুন করে ইতিহাস লিখুন। সরকার পাশে থাকবে।”
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা শরাইঘাটের যুদ্ধ ও লাচিত বরফুকনের বীরত্বের কথা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরে বলেন, “১৬৭১ সালে লাচিতের জন্য শুধু অসম নয়, দেশের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা পেয়েছে। অসুস্থ অবস্থাতেও সেনার মনোবল বাড়াতে লড়াই চালান লাচিত। অসম যুদ্ধে আহোমদের জয় শুধু অসম নয়, গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তখন মোগল আক্রমণ রুখতে না পারলে মায়ানমার-সহ গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই মোগল শাসনাধীন হত।”
লাচিত ও শরাইঘাটের যুদ্ধ নিয়ে ইতিহাসবিদদের ভাষ্যসমৃদ্ধ তথ্যচিত্রের উদ্বোধন করেন শাহ। বলেন, “লাচিতের সাহস, প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের জন্যই উত্তর-পূর্ব ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ধর্মান্ধ আক্রমণকারীদের হাত থেকে রক্ষা পায়। না হলে পূর্বোত্তর হয়ত আর ভারতের অংশই থাকত না। মোগল আক্রমণ ২২ বার রুখে দেওয়ার ফলেই এখনও উত্তর-পূর্বের জনজাতিদের ভাষা-সংস্কৃতি অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
শরাইঘাটের ইতিহাস তুলে ধরতে গিয়ে প্রচলিত লোককথাকেই ইতিহাস হিসেবে তুলে ধরেন শাহ। বলেন, “লাচিত নিজের মামাকে কেল্লা তৈরির দায়িত্ব দেন। সময় মতো কেল্লা তৈরি করতে না পারায় নিজের মামার মাথা কেটে ফেলে তিনি বলেছিলেন, ‘দেশের থেকে মামা বড় নয়’।” আহোম ইতিহাসবিদদের মতে, লাচিত তাঁর নিজের মামা নয়, লাহোন হিলৈধারি নামে কেল্লার তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘মৌ-মাই’ বা তাই (আহোম ভাষায় অভিজ্ঞ প্রযুক্তিবিদ)-এর মাথা কেটেছিলেন। শাহ বলেন, “১৯৯৯ সাল থেকেই এনডিএ সেরা ক্যাডেটকে লাচিতের নামাঙ্কিত স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। ১০টি ভাষায় লাচিতের জীবনী অনুবাদ করে দেশের সব শিশুকে পড়ানো হবে।”