Samvidhaan Hatya Diwas

২৫ জুন পালন করা হবে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’! শাহের ঘোষণা কি বিরোধী ঐক্য ভাঙার রণকৌশল?

শুক্রবার এই ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে তাঁর ঘোষণার পরেই সিদ্ধান্তটির ‘আড়ালে’ থাকা কেন্দ্রের ‘আসল উদ্দেশ্য’ নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪ ১৭:২৭
Share:

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

দেশের নবগঠিত সরকারকে শুরু থেকেই ‘সংবিধান বিরোধী’ বলে দেগে দেওয়ার রণকৌশল নিয়েছে বিরোধীরা। পাল্টা কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার সিদ্ধান্ত নিল, তারা কংগ্রেসের আমলের সংবিধান বিরোধিতাকে দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরবে। ৪৯ বছর আগে কংগ্রেস সরকার দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল যে দিন, সেই ২৫ জুন তারিখটিকে ‘সংবিধান হত্যা দিবস’ হিসাবে পালন করবে তারা।

Advertisement

শুক্রবার ওই ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে তাঁর ঘোষণার পরেই সিদ্ধান্তটির ‘আড়ালে’ থাকা কেন্দ্রের ‘আসল উদ্দেশ্য’ নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। প্রশ্ন উঠেছে, যে জরুরি অবস্থা নিয়ে গত ১০ বছরে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করেনি বিজেপি, তারা হঠাৎ এতদিন পরে তৎপর হল কেন? একই সঙ্গে এ প্রশ্নও উঠেছে যে, তবে কি শক্তিবৃদ্ধি করা বিরোধীকে দুর্বল করতেই বিশেষ উদ্যোগ?

শাহ যে সময়ে এই ঘোষণা করেছেন, প্রায় সেই সময়েই মুম্বইয়ে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিক উদ্ধব ঠাকরে এবং শরদ পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে তাঁকে সংবিধান হত্যা দিবস এবং জরুরি অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মমতা বলেন, ‘‘মোদী জমানাতেই দেশে সবচেয়ে বেশি জরুরি অবস্থা কায়েম হয়েছে। আমরা জরুরি অবস্থার পক্ষে নই। কিন্তু এখন কী হচ্ছে? ন্যায় সংহিতার নামে কী চলছে? এফআইআর কী ভাবে হবে, কী শাস্তি, কেউ কিছু জানে না। সারা দেশে একটা ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করে রাখা হয়েছে।’’

Advertisement

শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘১৯৭৫ সালের ২৫ জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আমাদের দেশের গণতন্ত্রের আত্মাকে গলা টিপে হত্যা করেছিলেন। দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন স্বৈরাচারী মানসিকতা কাকে বলে। বিনা অপরাধে সেই সময়ে জেলে গিয়েছিলেন লাখ লাখ মানুষ। সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধও করা হয়েছিল। সরকার তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রতি বছর ২৫ জুন তারিখটিকে সংবিধান হত্যা দিবস হিসাবে পালন করার। ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার সময় যাঁরা ওই অমানবিক বেদনা সহ্য করেছিলেন, তাঁদের প্রতিই সম্মান জানাবে দিনটি।’’

শাহের ওই পোস্টের বক্তব্য আপাতদৃষ্টিতে সোজাসাপ্টা মনে হলেও এর নেপথ্যে অন্য ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তারা বলছে যে, কেন্দ্র সরকারের ঘোষণা আদতে বিরোধী ঐক্যকে দুর্বল করে দেওয়ার লক্ষ্যে।

প্রথম যুক্তি হল ‘সময়’! গত ১০ বছর ধরে কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছে মোদী সরকার। কিন্তু ১৯৭৫ সালে হওয়া জরুরি অবস্থা নিয়ে এর আগে বিশেষ জোর দিয়ে সমালোচনা করতে দেখা যায়নি তাদের। বরং এর আগে যখন সংবিধান দিবস পালন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল মোদী সরকার, তখন ২৬ নভেম্বর তারিখটিকে বেছেছিল তারা। বিরোধীরা তখন ২৬ জানুয়ারির কথা বলে আপত্তি তুলেছিল (সম্প্রতি সে কথা সংসদের বক্তৃতায় উল্লেখও করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী)। দশ বছর পরে সংবিধান হত্যা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত মোদী সরকার তখন নিয়েছে, যখন কেন্দ্রে বিরোধীরা শক্তিশালী।

১৯৭৫ সালে তৎকালীন কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা জরুরি অবস্থা যখন জারি করেছিলেন, তখন বিজেপির জন্ম হয়নি। বিজেপির প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৮০ সালে। জরুরি অবস্থার পাঁচ বছর পরে। তবে তার আগে ১৯৭৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় তৈরি হয় জনতা পার্টি। কংগ্রেস বিরোধী বহু দল একসঙ্গে মিলে তৈরি হয়েছিল ওই দল। সেই সমস্ত দলের বহু শাখাই এখন আবার কংগ্রেসের সঙ্গে এসে মিলেছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’য়। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, একদা যারা কংগ্রেসের ঘোষিত জরুরি অবস্থার শিকার হয়েছিলেন, তাঁদের সেই স্মৃতি উস্কে দিতেই মোদী সরকারের এই ঘোষণা। বিরোধীদের ঐক্য ভাঙতে তাঁদের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছে তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement