লোকসভায় ওয়েইসি এবং অমিত শাহের মধ্যে বাদানুবাদ। —ফাইল চিত্র।
বিরোধীদের আপত্তি উড়িয়ে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকসভায় পাশ হয়ে গেল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) সংশোধনী বিল। আর সেখানেই তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এমআইএম) প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। ‘‘এ ভাবে ভয় দেখাতে পারবেন না’’ বলে সরাসরি অমিত শাহের উদ্দেশে মন্তব্য ছুড়ে দেন ওয়েইসি। জবাবে শাহ বলেন, ‘‘আপনার মনে ভয় ঢুকে গেলে আমরা কী করতে পারি!’’
২৬/১১ মুম্বই হামলার পর, ২০০৯ সালে মনমোহন সিংহ সরকারের আমলে এনআইএ গঠিত হয়। এত দিন এনআইয়ের ভূমিকা সন্ত্রাস দমন তথা তদন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এ বার তাতে মানব পাচার, দেশবিরোধী গতিবিধি, জাল নোট, বেআইনি অস্ত্রের নির্মাণ ও কারবার, সাইবার সন্ত্রাস এবং ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক পদার্থ আইনের আওতায় থাকা অপরাধগুলিও অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ বার থেকে বিশেষ আদালত গড়ে কোনও মামলার শুনানিও করতে পারবে এনআইএ।
সেই সঙ্গে, এ বার থেকে শুধুমাত্র দেশের অন্দরেই নয়, বিদেশ বিভুঁইয়ে ভারতীয়দের উপর হামলা হলে, সেখানে গিয়েও তদন্ত করতে পারবেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। তবে লোকসভায় বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে বিলটি পাশ হয়ে গেলেও, রাজ্যসভাতেও সেটিকে পাশ করাতে হবে বিজেপিকে। তাতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ স্বাক্ষর করলে তবেই নয়া আইন চালু হবে।
আরও পড়ুন: প্রযুক্তিগত ত্রুটি নিয়ে কারশেডে প়ড়েছিল এসি রেক, নামাতেই বিপর্যয় পার্ক স্ট্রিটে
এ দিন সেই নিয়ে আলোচনা চলাকালীনই বিলটির বিরুদ্ধে আপত্তি তোলেন বিরোধীরা। বিলটিতে সংশোধন ঘটিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আদতে এনআইএ-র অপব্যবহার করতে চাইছে বলে অভিযোগ তোলেন তাঁরা। তাঁদের নিরস্ত করতে শাহ জানান, ধর্মের নিরিখে এই বিলের অপব্যবহার কোনও ভাবেই হতে দেবে না সরকার। বরং ধর্ম যাই হোক না কেন, সব ধরনের সন্ত্রাসকে নির্মূল করাই তাঁদের লক্ষ্য। কিন্তু তা নিয়ে হই হট্টগোলের মধ্যেই মারাত্মক অভিযোগ তোলেন বিজেপি নেতা সত্যপাল সিংহ। নাম না করে বলেন, একসময় এনআইএ-কে তদন্তে বাধা দিয়েছিলেন হায়দরাবাদের এক নেতা।
সত্যপালের এই অভিযোগেই মেজাজ হারান ওয়েইসি। তা নিয়ে বাদানুবাদ শুরু হলে ওয়েইসিকে শান্ত হতে বলেন অমিত শাহ। চুপ করে শুনতে বলেন। কিন্তু বিজেপি সভাপতি তাঁর দিকে আঙুল তোলায় চটে ওঠেন ওয়েইসি। বলেন, ‘‘এ ভাবে ভয় দেখাতে পারবেন না আমাদের।’’ জবাবে শাহ বলেন, ‘‘কথার মাঝে এ ভাবে কথা বলা যায় না। এখানে কাউকে ভয় দেখাচ্ছি না আমি। কিন্তু আপনার মনে ভয় ঢুকে গিয়ে থাকলে কী-ই বা করতে পারি!’’
আরও পড়ুন: কর্নাটকে আস্থা ভোট বৃহস্পতিবার, পুলিশি নিরাপত্তা চাইলেন বিক্ষুব্ধরা
তবে এতে দমে যাননি ওয়েইসি। এনআইএ সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘‘বিদেশে তদন্ত করতে পাঠিয়ে এনআইএ-কে কী ক্ষমতা দিচ্ছেন আপনারা? অন্য সার্বভৌম দেশগুলি আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাকে তদন্তের অনুমতি দেবে কী ভাবে? আফগানিস্তানে ভারতীয় দূতাবাসে যদি হামলা হয়, সে ক্ষেত্রে সেই দেশের আইন মেনেই তদন্ত হবে। সেখানে এনআইএ-কে কী বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছে?’’ ওয়েইসি আরও বলেন, ‘‘অজমেঢ়, সমঝোতা বিস্ফোরণ নিয়ে তো আজও কোনও পদক্ষেপ করেনি সরকার। বেশ কিছু মামলায় কোর্টে প্রমাণ পর্যন্ত পেশ করতে পারেনি এনআইএ। হামলাকারী যদি অ-মুসলিম হয় আর পীড়িত যদি হয় মুসলিম, সে ক্ষেত্রে সরকার হাত গুটিয়েই বসে থাকবে।’’
কংগ্রেসের তরফেও এই সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করা হয়। তাদের দাবি, এনআইএ-র হাতে ব্যাপক ক্ষমতা তুলে দিয়ে দেশে পুলিশতন্ত্র কায়েম করার প্রচেষ্টা চলছে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।