(বাঁ দিকে) যোগী আদিত্যনাথ এবং অখিলেশ যাদব। —ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের ভাঙনের খবর উড়ে বেড়াচ্ছে রাজনীতির অলিন্দে। সুযোগ বুঝে ময়দানে নামলেন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব। শাসকদলের নেতা এবং বিধায়কদের উদ্দেশে ‘বিশেষ প্রস্তাবের’ ইঙ্গিত দিয়ে নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেছেন উত্তরপ্রদেশের বিরোধী শিবিরের প্রধান। তাতে লেখা: ‘‘মনসুন অফার: ১০০ আনুন সরকার গড়ুন’’।
মঙ্গলবার থেকেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগীর ‘সংসারে’ কোন্দলের আঁচ মিলতে শুরু করেছে। রাজ্যে যখন ১০টি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন নিয়ে যোগীর নেতৃত্বে পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি, ঠিক তখনই উপমুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্য হঠাৎ দিল্লি গিয়ে বৈঠক করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সঙ্গে। আলাদা ভাবে নড্ডার সঙ্গে বৈঠক করেছেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সভাপতি ভূপেন্দ্র চৌধুরিও। দিল্লিতে ওই দুই বৈঠকের পর থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রীর ‘সংঘাত’ নিয়ে। আর সেই আবহে অখিলেশের এই পোস্টের বক্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা ভোট হয়েছে ২০২২ সালে। ৪০৩ আসনের বিধানসভায় যোগীর নেতৃত্বাধীন বিজেপির হাতে রয়েছে ২৫৫টি আসন। অন্য দিকে অখিলেশের সমাজবাদী পার্টির হাতে রয়েছে ১১১টি। এর মধ্যে ১০টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হতে চলেছে যোগীর রাজ্যে। সেই আবহেই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে উত্তরপ্রদেশের বিজেপির অন্তর্কলহ। অনেকের মতে, লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে খারাপ ফল হওয়ার দৌলতে দলের মধ্যে বিভেদ তৈরি হওয়ারই কথা ছিল। খারাপ ফলের ‘দায়’ কার, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব হওয়াও অস্বাভাবিক নয়। উপনির্বাচনেও দেশ জুড়ে বিজেপির খারাপ ফল সম্ভবত সেই বিভেদকে উস্কে দিয়েছে। কারণ, সাতটি রাজ্যে ১৩টি আসনে উপনির্বাচনে বিজেপি মাত্র দু’টি আসনে জিততে পেরেছে। বাকি ১১টিতেই জিতেছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকেরা।
সূত্রের খবর, ১০ আসনে বিজেপির প্রার্থী কী ভাবে মনোনয়ন করা হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই নিজের ফরমান জারি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী। তিনি বলেছেন, ‘‘যাঁদের সৎ ভাবমূর্তি রয়েছে এবং এলাকায় জেতার সম্ভাবনা জোরদার, তাঁদেরকেই টিকিট দেওয়া হবে।’’ যোগী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘প্রভাব’ বা ‘প্রতিপত্তি’ নয়, ভোটের সম্ভাব্য প্রার্থীর যোগ্যতা নিরূপণ করা হবে জনতা জনার্দনের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের ভিত্তিতে। উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, যোগীর এই সিদ্ধান্তেই বিদ্রোহের সূত্রপাত হয়েছে উত্তরপ্রদেশ বিজেপিতে। রাজনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, বিজেপির এই পরিস্থিতিতেই ভরা বর্ষার ‘অফার’ বর্ষণ করেছেন অখিলেশ। তাতে ফাটল চওড়া হোক বা না হোক, অখিলেশ খাঁটি রাজনীতিবিদের কাজটিই করেছেন। যদিও অখিলেশের অনেক আগে এমন কৌশল প্রয়োগ করেছেন এবং সফল হয়ে দেখিয়েছেন অমিত শাহ। সরকার ভাঙাগড়ার খেলায় তাঁর নামই সকলের আগে আসে।