কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
ব্যক্তি নয়, দেশের কথা ভেবে নতুন দণ্ডসংহিতা আইন প্রণয়নে সক্রিয় হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বুধবার দণ্ডসংহিতা সংক্রান্ত তিনটি বিল নিয়ে লোকসভায় বিতর্কের সূচনা করে এ কথা জানালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জঙ্গি দমনে কঠোর পদক্ষেপের উদ্দেশ্যে এই তিনটি বিল আনা হয়েছে।’’
৯৭ সাংসদের সাসপেনশনের জেরে প্রায় বিরোধীহীন লোকসভায় শাহের দাবি, ব্রিটিশ জমানায় রাজদ্রোহ আইন শুধু নাম বদলে স্বাধীন ভারতে দেশদ্রোহ আইন হিসাবে কার্যকর হয়েছিল। এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই দাসত্বের সব চিহ্ন মুছে দিতে চলেছেন।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘স্বাধীনতার পরে নরেন্দ্র মোদীর সরকারই এক মাত্র ভোটের আগে দেওয়া সমস্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে চলেছে।’’
প্রায় বিরোধীহীন পরিস্থিতিতে শীতকালীন অধিবেশনেই লোকসভায় নতুন দণ্ডসংহিতা সংক্রান্ত তিনটি বিল পাশ করাতে সক্রিয় হয়েছে মোদী সরকার। বুধবার সেই প্রক্রিয়ারই সূচনা করেছেন শাহ। সংসদের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিবৃতির দাবিতে বিক্ষোভের ‘অপরাধে’ ৯৭ জন বিরোধী সাংসদ গোটা শীতকালীন অধিবেশনপর্বের জন্য সাসপেন্ড হওয়ার পরে অবশেষে সংসদে বক্তৃতা শোনা গেল তাঁর।
প্রসঙ্গত, গত ১১ অগস্ট সংসদের বাদল অধিবেশনের শেষ দিনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় তিনটি বিল পেশ করে জানিয়েছিলেন, ১৮৬০ সালে তৈরি ‘ইন্ডিয়ান পেনাল কোড’ (ভারতীয় দণ্ডবিধি) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’ দিয়ে। ১৮৯৮ সালের ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অ্যাক্ট’ (ফৌজদারি দণ্ডবিধি) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’ দ্বারা এবং ১৮৭২ সালের ‘ইন্ডিয়ান এভিডেন্স অ্যাক্ট’ (ভারতীয় সাক্ষ্য আইন) প্রতিস্থাপিত হবে ‘ভারতীয় সাক্ষ্য বিল’-এ।
এর পরেই বিল তিনটি সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, শাহ বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের এই আইন বদলের বিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাঠানো ২২ অগস্টের সেই চিঠির জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘‘আইন বদলের এই উদ্যোগ ভারতীয় জনজীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই চূড়ান্ত সতর্কতা বজায় রেখেই এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপ করতে হবে।’’
চিঠিতে মমতা জানিয়েছিলেন, বর্তমান লোকসভার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। তাই তাড়াহুড়ো করে শীতকালীন অধিবেশনে যেন এ সংক্রান্ত বিল পাশের চেষ্টা না করা হয়। কংগ্রেস, ডিএমকে-সহ একাধিক বিরোধী দলও বিল পাশে তাড়াহুড়ো নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। এর পরে তিনটি বিল প্রত্যাহার করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু বুধবার শাহ দাবি করেছেন, বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মতামত নেওয়ার পরেই দণ্ডসংহিতা সংক্রান্ত তিনটি বিল নিয়ে সংসদে বিতর্কে সক্রিয় হয়েছে কেন্দ্র। যদিও মঙ্গলবারই নতুন করে দণ্ডসংহিতা সংক্রান্ত তিনটি বিল নিয়ে আলোচনার জন্য সরকারের তরফে নোটিস দেওয়া হয়েছিল।