প্রতীকী ছবি।
সব পরীক্ষাতেই সফলদের তালিকা হয় কৃতিত্বের উজ্জ্বলতার ভিত্তিতে। ব্যর্থতার তালিকা করলে সারা দেশের নিরিখে শীর্ষে রাখতে হবে রেলকে। কেননা দেশ জুড়ে যথাসময়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্প শেষ করতে না-পারার ব্যর্থতায় তারাই প্রথম! আর ওই সব প্রকল্প বকেয়া পড়ে থাকার মূল কারণই হল লাল ফিতের ফাঁস।
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক সূত্রের খবর, সারা দেশে থমকে থাকা ৩৪৯টি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মধ্যে ২১৩টি অর্থাৎ ৬০ শতাংশই রেলের। প্রকল্প রূপায়ণের কাজ ক্রমাগত বিলম্বিত হতে থাকায় খরচের সীমাও বেড়ে চলেছে লাফিয়ে। রেল দফতরের হিসেব, অসমাপ্ত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে অনুমিত ব্যয়ের চেয়ে অন্তত এক লক্ষ ৭৩ হাজার কোটি টাকা বেশি খরচ হবে।
প্রকল্প আটকে থাকার দেশজোড়া এই চিত্রে পশ্চিমবঙ্গ আছে প্রবল ভাবেই। এ রাজ্যের বেশ কয়েকটি রেল প্রকল্প থমকে আছে। তার মধ্যে বাংলার বিভিন্ন মেট্রো প্রকল্প, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের অধীনে থাকা কমবেশি ২০টি অসমাপ্ত প্রকল্প শেষ করার জন্য খরচ অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রেলকর্তারা। ওই সব প্রকল্পের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা অবশ্য জমি-জট।
রেল সূত্রের খবর, রাজ্যে বর্তমানে চালু থাকা পাঁচটি মেট্রো প্রকল্পের অগ্রগতি বিভিন্ন সময়ে জমি-জটে বিঘ্নিত হয়েছে। বিলম্বের জেরে জোকা-বি বা দী বাগ এবং ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের খরচ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গিয়েছে।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের অনুমিত ব্যয় ছিল ৪৩৩৮ কোটি টাকা। তা বেড়ে সাড়ে আট হাজার কোটিতে পৌঁছেছে। একই ভাবে খরচ
বাড়তে পারে জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রো প্রকল্পে।
কিছু দিন আগে রেললাইনের উপরে ২০টি উড়ালপুল (আরওবি)-এর অনুমোদন দিয়েছেন রেল-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জমি-সহ বিভিন্ন সমস্যায় তার ন’টিতে এখনও কাজ শুরু করা যায়নি। জমি-জটে হুগলির ভাবাদিঘিতে আটকে রয়েছে রেললাইন পাতার কাজ। বাগনান-আমতা, বোঁয়াইচণ্ডী-আরামবাগ, বাঁকুড়া-মুকুটমণিপুরের মতো বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে জমি-সমস্যায় থমকে আছে নতুন লাইন তৈরির প্রকল্প।
রেল সূত্রের অভিযোগ, কোথাও প্রশাসনিক ঢিলেমিতে, আবার কোথাও রাজনৈতিক টানাপড়েনে, কোথাও বা জমি-জটে আটকে গিয়েছে রেল প্রকল্প। রেলের এক কর্তা জানাচ্ছেন, সারা দেশে আটকে থাকা ওই ২১৩টি প্রকল্প ঘোষণার সময়ে অনুমিত মোট ব্যয় ছিল এক লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা। রেল দফতরের আশঙ্কা, ওই সব ক’টি প্রকল্পের কাজ শেষ করতে অনুমিত ব্যয়ের চেয়ে এক লক্ষ ৭৩ হাজার কোটি টাকা বেশি খরচ হবে। যা প্রকল্প ঘোষণার সময়কার অনুমিত ব্যয়ের চেয়ে ১৪০ শতাংশ বেশি!
এক রেলকর্তা জানান, ১৫০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ হয়েছে, এমন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অগ্রগতির দিকে কয়েক বছর ধরে নজর রাখছে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রক। যে-সব প্রকল্প এক বছরের বেশি সময় ধরে থমকে থেকেছে বা এখনও থমকে রয়েছে, সেগুলিকে তালিকাভুক্ত করেছে পরিসংখ্যান মন্ত্রক।
ওই মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী রেলের পরে সব চেয়ে বেশি প্রকল্প থমকে রয়েছে বিদ্যুৎ দফতরের। ওই দফতরের অধীনে বিভিন্ন সময়ে থমকে থাকা ৪৩টি প্রকল্পের কাজ শেষ করতে অতিরিক্ত ৫৮ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা খরচ হতে পারে।