ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
নিজের ভাইয়ের বিয়ের জন্য পণ চেয়েছেন। ভাইয়ের স্ত্রীর বাড়ির লোকজনকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসাতে চেয়েছেন। তদন্তকারী অফিসারকে প্রভাবিত করতে চেয়েছেন। প্রভাবিত করতে চেয়েছেন এক বিচারককেও!
এই সমস্ত অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি নিজেও একজন বিচারক ছিলেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরে তাঁর চাকরি যায়। সেই শাস্তির বিরুদ্ধে তিনি রিট পিটিশন করেছিলেন ইলাহাবাদ হাই কোর্টে। সাম্প্রতিক রায়ে হাই কোর্ট সাজা বহাল রেখেছে। শুধু তাই নয়, ২ মে-র ওই রায়ে হাই কোর্ট বলেছে, ‘‘ন্যায়কে যদি মন্দিরের সঙ্গে তুলনা করা যায়, তা হলে বিচারবিভাগীয় আধিকারিকদের হতে হবে উচ্চ শ্রেণির পুরোহিত। তাঁরা শুধু নিয়ম মেনে সব আচার পালনই করবেন না, মন্দিরের পবিত্রতা রক্ষার ভারও নেবেন।’’ বিচারপতি সৌমিত্র দয়াল সিংহ এবং বিচারপতি দোনাড়ি রমেশের বেঞ্চ বুঝিয়ে দিয়েছে, বিচারবিভাগের সঙ্গে জড়িতেরা যদি অপরাধমূলক কাজকর্মে লিপ্ত হন, তাঁরা যেন কোনও ছাড় আশা না করেন।
দোষী প্রাক্তন অতিরিক্ত জেলা বিচারকের নাম উমেশ কুমার সিরোহি। তাঁর বিরুদ্ধে দু’টি চার্জশিট জমা পড়ে ২০১৬ এবং ২০১৭-তে। প্রথম চার্জশিটে সিরোহির বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ ছিল। বলা হয়েছিল, সিরোহি তাঁর ভাইয়ের বিয়ের জন্য পণ দাবি করেছিলেন। ভাই নিজেও বিচারবিভাগীয় আধিকারিক। এখানেই না থেমে সিরোহি নিজের হাতে নিজেই ক্ষত সৃষ্টি করে ভ্রাতৃবধূর পরিবারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। সিরোহির স্ত্রী ওই ভ্রাতৃবধূর পরিবারের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। তার পর সিরোহি এবং তাঁর ভাই মিলে নিজেদের পদমর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে পুলিশি তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয় চার্জশিটে বলা হয়েছে, ওই মামলা যখন আদালতে যায়, সেখানেও সিরোহি এক অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। মিরাটের তৎকালীন জেলা বিচারকের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগও তুলেছিলেন তিনি। ২০২০ সালে হাই কোর্ট এই তদন্ত রিপোর্ট মেনে নেয় এবং সিরোহিকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করে। রাজ্য সরকার ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল সিরোহিকে বরখাস্ত করার সুপারিশ কার্যকর করে। সিরোহি সে সময় ললিতপুরের অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারক হিসেবে কাজ করছিলেন। অবিলম্বে তিনি অপসারিত হন। তার বিরুদ্ধেই তিনি রিট পিটিশন করেছিলেন হাই কোর্টে।
হাই কোর্ট বলেছে, পণ চাওয়া ও তদন্তে প্রভাব খাটানোর চেষ্টার অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত। সিরোহি যে গুরুতর বেআইনি কাজ করেছেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। বিচারপতিদের মত হল, প্রভাব খাটানোর কোনও রাস্তা খোলা রাখার প্রশ্ন নেই। ‘‘খারাপ মাছ চিহ্নিত হলে তাকে আর পুকুরে রাখা চলে না। কোনও বিচারবিভাগীয় আধিকারিক যদি নিজের বা পরিজনের স্বার্থে অন্যায় সুবিধা ভোগ করার চেষ্টা করেন, তা কঠোর ভাবে প্রতিরোধ করা হবে।’’