Draupadi Murmu

Draupadi Murmu: ‘দ্রৌপদী আগে ওড়িশার মন্ত্রী ছিলেন, ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল, কী করেছেন আদিবাসীদের জন্য?’

ওড়িশার ভোগরাই, রাইরামপুর-সহ একাধিক এলাকায় উৎসব হচ্ছে। বাজি ফাটানো, ধামসা, মাদল সহযোগে চলছে উল্লাস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২২ ০৭:৪৪
Share:

হালকা মেজাজে। মেয়ে ইতিশ্রীর সঙ্গে দ্রৌপদী মুর্মু। ছবি পিটিআই।

বৃহস্পতিবার সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিহারী বৈদ্যনাথ মহাপাত্র। চটজলদি মন্দিরে পুজো দিয়েছেন ‘হাই প্রোফাইল’ যজমানের নামে। ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার ভক্তদের কুলপান্ডা বৈদ্যনাথের যজমান-তালিকায় এ দিন কার্যত দেশের ভাবী রাষ্ট্রপতিও ঢুকে পড়লেন।

Advertisement

বৈদ্যনাথ বিকেলে ফোনে বলছিলেন, ‘‘বছরখানেক আগেও শ্রী মন্দিরে এসে পুজো দিয়েছেন দ্রৌপদীদেবী। ভক্তিমতি নারী। প্রভু জগন্নাথের প্রিয়পাত্র তো প্রেসিডেন্ট হবেনই।’’ এর কিছুক্ষণ আগেই কথা হচ্ছিল উত্তর ওড়িশা সর্ব আদিবাসী সমূহের নেত্রী, বারিপদার মহারাজ পূর্ণচন্দ্র কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সুকান্তি নায়েকের সঙ্গে। বেশ বিরক্ত স্বরে তিনি বললেন, ‘‘দ্রৌপদীদেবী যে এত মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে ঝাড়ু দিলেন, সেটা ওঁর ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আদিবাসীদের অনেকেরই তা ভাল লাগেনি।’’ বহু বছর আগে দ্রৌপদী তখন ভুবনেশ্বরে উইমেন্স কলেজে পড়ছেন। সুকান্তি উৎকল বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ-র ছাত্রী। দু’জনে ভুবনেশ্বরের ‘ট্রাইবাল হস্টেলে’ একসঙ্গে থাকতেন। সুকান্তি বললেন, ‘‘আমাদের চেনাশোনাও ছিল। ভাল মেয়ে দ্রৌপদী। কিন্তু আদিবাসী হিসেবে উনি রাষ্ট্রপতি হওয়ায় আমি খুশির এক ফোঁটাও কারণ দেখছি না।’’

সুকান্তি নায়েক গোন্দ জনজাতির। দ্রৌপদী মুর্মু সাঁওতাল। দু’জনেই ময়ূরভঞ্জ জেলার। সুকান্তির ব্যাখ্যা, ‘‘ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক দখল করতেই এ সব বিজেপির চাল। দ্রৌপদী আগে ওড়িশার মন্ত্রী ছিলেন। ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল। কিন্তু আলাদা করে আদিবাসীদের জন্য করেছেনটা কী! এ ভাবে জনজাতির মন জয় সম্ভব নয়।’’ প্রকৃতি উপাসক আদিবাসীরা যখন ক্রমশ তাঁদের সরনা ধর্ম বিষয়ে সচেতন হচ্ছেন, তখন হিন্দু দেবদেবীর ভক্ত দ্রৌপদীকেমেলে ধরার মধ্যে আদিবাসী সংস্কৃতির উপরে আগ্রাসনের ছাপওদেখছেন ওড়িশা-ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন সমাজকর্মী।

Advertisement

ময়ূরভঞ্জে রাইরঙ্গপুর মহকুমায় উপরবেড়া গ্রামের মেয়ে দ্রৌপদী। তবে দিল্লি যাওয়ার আগে থাকতেন রাইরঙ্গপুর শহরে। তাঁর স্বামী ব্যাঙ্ককর্মী ছিলেন। কয়েক বছর আগে স্বামীর পরে দুই পুত্রকেও দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন দ্রৌপদী। রাইরঙ্গপুরের বাড়িতে মেয়ে, জামাইকে নিয়েই থাকতেন। দ্রৌপদীর জয়ের উৎসব নিন্দুকেরা ‘রাজনৈতিক ভাবে সংঘটিত’ বলে খারিজ করে দিচ্ছেন। স্থানীয় সাঁওতাল নেতা হরিশ মুর্মুও বলছেন, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে দ্রৌপদীকে সমর্থন করি না।’’

তবে ওড়িশার ভোগরাই, রাইরামপুর-সহ একাধিক এলাকায় উৎসব হচ্ছে। বাজি ফাটানো, ধামসা, মাদল সহযোগে চলছে উল্লাস। এ দিন ভোগরাই ব্লক অফিস-ভোগরাই থানাচক পর্যন্ত দু’কিলোমিটার ৫০০ আদিবাসী শোভাযাত্রায় অংশ নেন। পশ্চিমবঙ্গের গোপীবল্লভপুর ঘেঁষে ওড়িশার আদিবাসী গ্রাম কিংবা জামবনি, বেলপাহাড়ি লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়া-ঘাটশিলাও ধামসা, মাদলে মুখর। রাইরঙ্গপুর থেকে কাছের বড় শহর ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর যাওয়ার রাস্তায় দিনভর যানজট। রাস্তা জুড়ে নাচগান, বিজেপির তরফে লাড্ডু বিলি চলছে। রাইরঙ্গপুরের কংগ্রেস নেতা ভজহরি মহান্তি ফোনে বললেন,‘‘আমি কংগ্রেসি বলে দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলাম। লোকে খুশি। হাজার হোক এই মফস্‌সলি শহরের বাসিন্দা এক মহিলা কি না রাষ্ট্রপতি হলেন!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement