২৪-এর ভোটের আগেই সব অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করে তাড়িয়ে দেওয়া হবে: অমিত শাহ

ভোটের আগেই সব অনুপ্রবেশকারী বিদেশিকে তাড়ানো হবে দেশ থেকে। বিদেশি তকমা দিয়ে বিতাড়নের এই উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের জন্য প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীকে আজ তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন অমিত।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

রাঁচী শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১৬
Share:

ভোটের প্রচারে অমিত শাহ। ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুরে। ছবি: পিটিআই।

ক’দিন ধরে বলে আসছেন, করতে হবে। করা হবে। ঝাড়খণ্ডে ভোট প্রচারে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ প্রথম বার নির্দিষ্ট করে বলে দিলেন, ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগেই গোটা দেশের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) তৈরি করে প্রত্যেক অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করা হবে।

Advertisement

ভোটের আগেই সব অনুপ্রবেশকারী বিদেশিকে তাড়ানো হবে দেশ থেকে। বিদেশি তকমা দিয়ে বিতাড়নের এই উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের জন্য প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীকে আজ তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন অমিত। রাহুলের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘অনুপ্রবেশকারীরা কি আপনার খুড়তুতো ভাই?’’

বিদেশি আখ্যা দিয়ে দেশ থেকে মানুষ তাড়ানোর প্রশ্নে কিছু মানবিক প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল। এর জন্য তাঁকে বিদ্রুপ করে চক্রধরপুর ও বহরাগোড়ার সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাহুলবাবা বলেন, ওদের তাড়াবেন না। ওরা কোথায় যাবে? কী খাবে? কেন তাড়াব না? ওরা কি আপনার খুড়তুতো ভাই?’’ এরই সঙ্গে অমিতের হুঙ্কার, ‘‘আপনারা নিশ্চিত থাকুন ২০২৪-এর ভোটের আগে সব অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্নিত করে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: তেলঙ্গানা গণধর্ষণ-খুন কাণ্ডের অভিযুক্তেরা জেলে বসে খেল মাংস-ফ্রায়েড রাইস

সারা দেশে এনআরসির ভাবনা নিয়ে গোড়া থেকেই তীব্র বিরোধিতা করে যাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি মমতার আপত্তি খারিজ করে তাঁর যুক্তিগুলি কার্যত উপেক্ষা করে চলার বার্তা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। মমতার প্রশ্ন, স্বাধীনতার পর থেকে দেশে এত দিন যাঁরা ভোট দিলেন, সরকার গড়লেন, তাঁদের কেন নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে? অমিত জানিয়ে দেন, মুখ্যমন্ত্রী বা তৃণমূল নেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কোনও অবস্থান নিতে পারেন, তাতে সারা দেশে এনআরসি তৈরির কাজ আটকে থাকবে না। এটা হবেই।

বাংলা দখলের লক্ষ্যে অসমে এনআরসির কাজ চলার সময় থেকেই বিজেপি বলতে শুরু করেছিল, এ বার এনআরসি হবে পশ্চিমবঙ্গে। দলের নেতারাই এখন মানছেন, এর জন্যই ধাক্কা খেতে হয়েছে রাজ্যের তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। দলের রাজ্য সভাপতির ছেড়ে যাওয়া আসনও ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি।

কিন্তু তাতে দমছে না বিজেপি। দলের নেতারা মানছেন, এনআরসি নিয়ে আতঙ্ক দূর করতে পারেনি দল। সংসদের শীত অধিবেশন শেষ হতে আর সপ্তাহ দুই বাকি। এর মধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করিয়ে বিদেশ থেকে আসা অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব নিয়ে আশঙ্কা দুর করতে চায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। পাশাপাশি অন্য (মুসলিম) অনুপ্রবেশকারীদের সম্পর্কে সরকারের কড়া অবস্থানের কথা বারবার বলছে বিজেপি। বিরোধীদের ধারণা, বিদেশি ও অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গড়ে তুলে তাকে আগামী ভোটের প্রধান বিষয় করতে চাইছে বিজেপি। যে কারণে রাজনাথ সিংহও জনসভায় জানতে চাইছেন, ‘‘আপনার পাশের লোকটি বিদেশি কি না, আপনারা কি তা জানতে চান না?’’

অমিত-রাজনাথদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘এ সব ওঁদের রাজনৈতিক স্লোগান। আমাদের রাজ্যে কী হবে, বা হবে না, সেটা মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।’’

ভোটের প্রচারে রাহুলও আজ ঝাড়খণ্ডে ছিলেন। সিমডেগার সভায় তিনি বলেন, ‘‘ছত্তীসগঢ়ে ক্ষমতায় এসে সেখানকার ছবিই পাল্টে দিয়েছে কংগ্রেস। ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতায় ফিরলে কৃষিঋণ মকুব করে দেওয়া হবে।’’ রাজ্যটি জনজাতি অধ্যুষিত। তাঁদের উদ্দেশে রাহুলের বার্তা, ‘‘আপনাদের জমি আছে, জঙ্গল আছে, জল আছে। আমরা তা সুরক্ষিত রাখব।’’ ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রীও একই আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন। অমিত এ দিনের প্রচারে সন্ত্রাস ও মাওবাদী কট্টরপন্থীদের কাজকর্ম বন্ধ করা, অযোধ্যার রায় ও রাম মন্দির নির্মাণের প্রসঙ্গও তোলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement