প্রতীকী ছবি।
চার দশক পরে প্রথম বার আলফার ডাকা বন্ধ ছাড়াই স্বাধীনতা দিবস পালন হল অসমে। সেই সঙ্গে চলছে আলফার একতরফা সংঘর্ষবিরতিও। অবশ্য তার মধ্যেই নগাঁও, কোকরাঝাড়, কৈলাশপুর, খোবাং, টিয়ক, শদিয়ার বিভিন্ন স্কুলে ১৪ অগস্ট রাতেই আলফার পতাকা ওড়ানো হল। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা আজ স্বাধীনতা দিবসে পতাকা উত্তোলন করে আলফাকে ফের শান্তি আলোচনায় যোগ দিয়ে মূল স্রোতে ফেরার আহ্বান জানালেন। বললেন, “চার দশক পরে অসমের মানুষ প্রথম বার খোলা মনে স্বাধীনতা দিবস পালন করছেন। তার জন্য আলফা সেনাধ্যক্ষ পরেশ বরুয়াকে ধন্যবাদ। অসমের মানুষের হয়ে আমি পরেশ বরুয়াকে শান্তি আলোচনার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। রাজ্যে স্থায়ী শান্তি ফিরে আসুক, যাতে আরও কখনও কোনও যুবককে প্রাণ না দিতে হয়।” মিজোরামের সঙ্গে সীমানা বিবাদে নিহত ৬ পুলিশ কর্মীর স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের মরণোত্তর পুলিশ মেডেল দেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘোষণা করেন, প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সঙ্গে সীমানা বিবাদ শান্তিপূর্ণ ভাবে মেটাতে বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার। কিন্তু অসমের এক ইঞ্চি জমির সঙ্গেও আপস করা হবে না।
গত কাল পাশ হওয়া গো-সংরক্ষণ আইন নিয়ে বিতর্ক চরমে। হিমন্ত দাবি করেন, এই আইন উল্টে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাড়াবে। রাজ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতি নিয়ে চলা বিতর্ক প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অনুন্নত এলাকাগুলিতে দারিদ্র্যের মূল কারণ অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি। জন্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই রাজ্য সরকার দারিদ্র্যমোচনের রাস্তায় হাঁটবে।”
৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজ্যবাসীর উদ্দেশে ১০টি আবেদন রাখলেন হিমন্তবিশ্ব। ঘোষণা করলেন, বয়স্ক বাবা-মার সঙ্গে সময় কাটাতে বছরে সাত দিন ছুটি পাবেন সরকারি কর্মীরা। কিন্তু ওই সাত দিন অবশ্যই বাবা-মায়ের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে। সম্ভব হলে তাঁদের ধর্মস্থান বা অন্যত্র ভ্রমণ করাতে নিয়ে যেতে হবে। হিমন্তর আবেদন, শ্রীমন্ত শঙ্করদেব, মাধবদেব, হরিদেবদের মতো গুরুজনের জন্মতিথি শুধুই ছুটির দিন হিসেবে না দেখে, ওই দিনগুলিতে গুরুজনদের সে বার অন্তত এক ঘণ্টা ব্যয় করুক সরকারি কর্মীরা। তাঁর আরও অনুরোধ, স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে অন্তত তিনটি ভাল করা করা বা মহৎ লক্ষ্য পূরণ করার অঙ্গীকার করুক প্রত্যেক রাজ্যবাসী। সব স্কুল-কলেজে লাগানো হোক ৭৫টি গাছের চারা। নিজেদের স্কুলের উন্নতির জন্য সাধ্যমতো ভার নিক প্রাক্তনীরা। বন্ধ হোক একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার। দফতরে স্বেচ্ছায় আরও এক ঘণ্টা সময় দান করুক কর্মীরা। সব অনুষ্ঠানের আগে-পরে গাওয়া হোক জাতীয় সঙ্গীত ও রাষ্ট্র গান। মাদক ও মানব পাচার ও গরু চোরা কারবারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলুক রাজ্যবাসী।
মেয়েদের ২১ বছরের নীচে বিয়ে দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করার আবেদন জানিয়ে হিমন্ত বলেন, “কন্যাসন্তান ভগবানের পবিত্রতম উপহার। আমার নিজের মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সারা দিনের পরিশ্রম, কষ্ট ভুলে যাই। আইন মতে ১৮ বছর হলেই মেয়েকে বিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু আসুন সংকল্প করি, ২১ বছরের কমে মেয়েদের বিয়ে দেব না।”
হিমন্ত আরও ঘোষণা করেন, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পেনশনের পরিমাণ ২৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩৬ হাজার টাকা করা হচ্ছে।