সন্ধি: বিজেপি রুখতে শত্রুতা ভুলছেন মায়া ও অখিলেশ। —ফাইল চিত্র
পিসির ডাকে সাড়া দিলেন ভাইপো!
গত কালই বিএসপি নেত্রী মায়াবতী ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পরাস্ত করতে মহাজোটের ডাক দিয়েছিলেন। আজ তাতে সুর মেলালেন মুলায়ম-পুত্র অখিলেশ যাদব। বুঝিয়ে দিলেন, বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি এক ছাতায় জমা হলে তাতে তিনিও যোগ দেবেন। দরকারে শত্রুপক্ষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতেও আপত্তি নেই তাঁর।
এমন নয় যে অখিলেশ আজই প্রথম এমন মহাজোটের ডাক দিলেন। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে ত্রিশঙ্কু ফলের আশঙ্কায় ভোট গণনার ঠিক আগের দিন ‘বুয়া (পিসি)’-র দল বসপা-র সঙ্গে হাত মেলানোর প্রস্তাব আলগোছে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন অখিলেশ। লক্ষ্য ছিল, বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখা। আজও যেন সে দিনেরই কথার রেশ টেনে সাংবাদিক বৈঠকে অখিলেশ বলেন, ‘‘বিজেপির বিরুদ্ধে বৃহত্তর জোট গড়ার প্রশ্নে আমি তৈরি। এই জোটে আমি আমার দায়িত্ব পালন করব।’’
বিজেপি অবশ্য এতে আমল দিচ্ছে না মোটে। রবিশঙ্করপ্রসাদ এ দিন ভুবনেশ্বরে বলেছেন, ‘‘হেরে গিয়ে এখন ওরা জোট বাঁধতে মরিয়া। কিন্তু ওরা একজোট হলেও লাভ কিছু হবে না।’’ যদিও বিরোধীরা মনে করছেন, যে পরের লোকসভা ভোটে মোদীকে ঠেকাতে তাঁদের একজোট হতেই হবে। কংগ্রেস অখিলেশের এই উদ্যোগকে স্বাগতই জানিয়েছে এ দিন। দলের প্রবীণ নেতা গুলাম নবি আজাদের কথায়, ‘‘এটা খুবই ভাল ভাবনা।
আরও পড়ুন: বিজেপির নতুন ডাক ‘বিরোধী-মুক্ত’ ভারত
সদ্য শেষ হওয়া সংসদ অধিবেশনের শেষবেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি এসে এই একতার সুরটি বেঁধে দিয়ে গিয়েছেন অনেকটাই। এর পরে প্রায় ১৩ দলের জোট প্রথমে নির্বাচন কমিশন ও পরে রাষ্ট্রপতির কাছে ইভিএম নিয়ে দরবার করে আসে। এমনকী, বিরোধী শিবির এ-ও ঠিক করেছে, সংসদের অধিবেশনের পরেও ওই ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। একজোট হয়ে রাজ্যওয়াড়ি আন্দোলনে নামবে সব দল। আর এই মহাজোটে সমাজবাদী পার্টির ভূমিকা নিয়ে অখিলেশ বলেছেন, ‘‘দেশে যে মহাজোট হতে চলেছে তাতে আমাদের দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।’’
উত্তরপ্রদেশে ভোটের পর থেকেই ইভিএমে কারচুপি নিয়ে সরব রয়েছেন মায়াবতী। মহাজোটে সপা-বসপা যে এক সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারে তা বোঝাতে অখিলেশ আজ মায়াবতীর মতোই ইভিএম নিয়ে সরব হন। এটাকে পিসির পাশে থাকার বার্তা বলেই মনে করা হচ্ছে। উভয় শিবিরই বুঝতে পারছে, তাঁদের দলের কেউই প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হতে পারবেন না আগামী ভোটে। উত্তরপ্রদেশে পরের বিধানসভা ভোট ২০২২ সালে। তখন আবার স্বার্থের সংঘাত বড় হয়ে উঠলেও আপাতত দু’পক্ষই চাইছে, বড় শত্রু বিজেপির মোকাবিলায় ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত সন্ধি করে চলতে।
ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, মায়াবতী বুঝে গিয়েছেন আগামী নির্বাচনে ২০%-এর বেশি ভোট পাওয়ার আশা নেই বসপার। ফলে কারও সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতেই হবে তাঁকে। তা ছাড়া ব্যক্তিগত ভাবে মায়াবতীর শত্রুতা মুলায়মের সঙ্গে। দলের হারে অখিলেশ কোণঠাসা হলেও দলের রাশ ফিরে পাননি মুলায়ম। যাদব কূলপতি এখন কার্যত নিঃসঙ্গ, ক্ষমতাহীন। অন্য দিকে অখিলেশ শুরু থেকেই মায়াবতীকে প্রাপ্য সম্মান দিয়ে এসেছেন। বরাবরই ‘বুয়া’ বলে সম্বোধন করে এসেছেন। ফলে মুলায়মের সঙ্গে মায়াবতীর যে সমস্যা রয়েছে তা তাঁর ছেলের সঙ্গে নেই। ফলে পিসি-ভাইপোয় মিলমিশ হতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। মায়াবতী সম্পর্কে বিশেষ আপত্তি নেই কংগ্রেসেরও। আগে থেকেই অখিলেশে সঙ্গে জোট হয়ে রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। ফলে অখিলেশ-মায়া জোট হলে বিরোধী শক্তি বাড়বে বলেই মনে করছেন কংগ্রেসের নেতারা।