গুরমিত রাম রহিম সিংহ। — ফাইল চিত্র।
ভোটের আগে প্যারোলে মুক্তির ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন ধর্ষণের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংহ। হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটের আগে তাঁর এই প্যারোলে মুক্তির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে কংগ্রেস।
মঙ্গলবার সকালে গুরমিতের আর্জি মেনে ২০ দিনের জন্য তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে জানানো হয়, প্যারোলের শর্ত হিসাবে তিনি হরিয়ানা যেতে পারবেন না। গুরমিতকে থাকতে হবে উত্তরপ্রদেশের বাগপতের আশ্রমে। অতীতে পঞ্জাব এবং হরিয়ানার বিধানসভা ভোটের আগে একই ভাবে প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন গুরমিত। গত লোকসভা ভোটের আগেও বজার সেই সেই ধারা। গত জানুয়ারিতে মুক্তির পর তরোয়াল দিয়ে কেক কেটে ‘স্বাধীনতা দিবস’ উদ্যাপন করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, প্রায় এক কোটি ভক্ত রয়েছে রাম রহিমের। রয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির। তাই ডেরা কোনও দলকে সমর্থন করলে তার প্রভাব ইভিএমে পড়ার সম্ভাবনা। কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ, সেই ভোটের দিকে নজর রেখেই নির্বাচনের আগে তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করে বিজেপি। অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনের সময়েও জেলবন্দি রাম রহিমের ‘ক্ষমতা’ দেখা গিয়েছে। এ বারের লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস, বিজেপি, আম আদমি পার্টি, শিরোমণি অকালি দলের নেতা ও প্রার্থীদের দেখা গিয়েছিল ডেরার সিরসার সদর দফতরে। রাম রহিমের উত্তরসূরি গুরিন্দর সিংহ ধীলোঁর ‘দরবারে’ আশীর্বাদ নিতে গিয়েছিলেন রাজনীতিকেরা।
সে বার প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার পর বিজেপি নেতাদের নিয়ে অনলাইনে সৎসঙ্গ করার জন্যও বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন ডেরা প্রধান। হরিয়ানা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠিয়ে জানানো হয়েছে, রাম রহিম প্যারোলে মুক্তি পেলে ভোটের ফল প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধির সময়সীমা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে মুক্তি না দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে কংগ্রেস। এই নিয়ে গত চার বছরে রাম রহিমকে ১৫ বার প্যারোলে মুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
২০০২ সালে রাম রহিমের ডেরার রাজ্য কমিটির সদস্য রণজিৎ সিংহের খুনের মামলায় নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলেও গত মে মাসে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট মুক্তি দিয়েছে রাম রহিমকে। তবে আশ্রমের ভিতরে দুই শিষ্যাকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০১৭ সালে নিম্ন আদালতে ২০ বছরের সাজার মেয়াদ খাটছেন ডেরা প্রধান। তিনি হরিয়ানার রোহটকের সুনিয়া জেলে বন্দি। অতীতে ডেরার পদাধিকারিরা কংগ্রেসের কাছাকাছি ছিলেন। ২০০৭ সালে পঞ্জাবের ভোটে কংগ্রেসকে খোলাখুলি ভাবে সমর্থনও করেছিলেন তাঁরা। তবে ২০১৭-র পর থেকে দারাবাহিক ভাবে বিজেপির ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে রাম রহিমের ঘনিষ্ঠ অনুচরেরা।