ফাইল ছবি
প্রস্তাব ছিল জওয়ানদের অবসরের বয়স ৫৮ করার। যে প্রস্তাব রেখেছিলেন দেশের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়ত। কিন্তু সেই প্রস্তাবকে কার্যত এড়িয়ে গিয়ে উল্টে অগ্নিপথ প্রকল্পের মাধ্যমে সেনায় জওয়ান পদে যোগদানের চার বছরের পরে বাধ্যতামূলক অবসরের প্রকল্প নিয়ে এসেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ওই প্রকল্প এনে মৃত বিপিন রাওয়তকে কেন্দ্র অপমান করেছে, এই অভিযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা।
প্রতিরক্ষা সূত্রের মতে, সেনা জওয়ানদের গড় বয়স কমানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় ছিল কেন্দ্র। শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় সেনার অপারেশন কিংবা কার্গিল রিপোর্ট— সবতেই সেনায় কর্মরত জওয়ানদের গড় বয়স কমানোর উপরে জোর দেওয়া হয়েছিল। সরকারের দাবি, জওয়ানদের গড় বয়স কমাতেই চুক্তিভিক্তিক চার বছরের জন্য সেনা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। গত মঙ্গলবার অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণা করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। এতে সেনার তরুণ ও অভিজ্ঞ অফিসারের গড় বয়স হবে ২৫-২৬ বছর। অগ্নিপথ প্রকল্পে সেনা থেকে অবসরের পরে জীবিকা নির্বাহে বেছে নিতে হবে অন্য কাজ। চুক্তিভিত্তিক ওই নিয়োগের প্রতিবাদে সরব হয় দেশের যুব সমাজের একাংশ।
সূত্রের মতে, প্রথম ওই প্রকল্পের প্রস্তাবটি সামনে আসে ২০২০ সালে। সেই সময়েই তার বিরোধিতা করে সরব হয়েছিলেন বিপিন রাওয়ত। তাঁর বক্তব্য ছিল, সাধারণত জওয়ানদের এক বছরের প্রশিক্ষণ শেষে মূলত কাশ্মীর, দ্রাস, কার্গিল, সিকিমের মতো উঁচু পাহাড়ি এলাকায় মোতায়েন করা হয়। জওয়ানদের এক বছরের প্রশিক্ষণের পিছনেও বড় মাপের অর্থ খরচ হয়ে থাকে। সেই কঠোর প্রশিক্ষণ শেষে মাত্র চার বছরের মাথায় কোনও সেনাকে অবসর নিতে বলা আদৌও যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মত
দিয়েছিলেন রাওয়ত।
উল্টে তাঁর পরামর্শ ছিল, সেনায় চাকরির সময়সীমা বৃদ্ধির। এত দিন জওয়ানেরা ভর্তির ১৭ বছরের মাথায় অবসর নিতেন। বিপিন রাওয়তের মতে, চাকরি থেকে অবসর নিলেও, জওয়ানদের সংসার চালানোর দায়িত্ব কিন্তু থেকেই যায়। অথচ অবসরের পরে জওয়ানেরা মাত্র ১৮ হাজার টাকা পেনশন পেয়ে থাকেন। ফলে তাঁদের নতুন করে চাকরি খুঁজতে হয়। তাই জওয়ানদের জীবন নির্বাহে যাতে সমস্যা নয়, তাই তিনি সেনায় অবসরের বয়স ৫৮ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মোদী সরকার সেই প্রস্তাব তো মানেইনি, উল্টে অবসরের বয়স ২১ বছর করে অগ্নিবীরদের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছেন বলে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হার কথায়, ‘‘বিজেপি নেতারা এখন অবসরপ্রাপ্ত ওই সেনাদের দারোয়ানের চাকরি দেওয়ার কথা বলছেন। গোড়া থেকেই প্রাক্তন সেনাকর্তাদের একটি বড় অংশ অগ্নিপথের বিরুদ্ধে। এমনকি বিপিন রাওয়তও চেয়েছিলেন জওয়ানদের অবসরের বয়স ৫৮ করতে। তিনি চলে যেতেই এখন ভিন্ন সুরে কথা বলা হচ্ছে। দেশের উচিত জওয়ানের পিছনে দাঁড়ানো।’’ কংগ্রেসের মতে, বিপিন রাওয়তের মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তুললেও, তাঁর মতামতকে অগ্রাহ্য করে তাঁকে অসম্মান করেছে মোদী সরকার।
কংগ্রেসের সচিন পাইলটের মতে, অগ্নিপথ প্রকল্পটি আনা হয়েছে হয়েছে পেনশন খাতে খরচ কমানোর লক্ষ্যে। চলতি বছরে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫.২৫ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে ১.১৯ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে স্রেফ পেনশন দিতে। যা প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশের কাছাকাছি। ২০২০ সালে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনও কেন্দ্রকে প্রতিরক্ষা খাতে বেতন ও পেনশন খরচ কমানোর পরামর্শ দেয়। বিরোধীদের মতে, সেই পথে হেঁটেই এককালীন অর্থ দিয়ে অগ্নিবীরদের অবসরের পরবর্তী দায় ঝেড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের মতে, ‘‘ওই সিদ্ধান্তে কোষাগারের অর্থ কিছু হয়তো বাঁচবে ঠিকই, কিন্তু আখেরে দেশের সীমান্ত নিরাপত্তায় বড় মাপের ঝুঁকি তৈরি হল।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।