উন্নয়ন নেই, ফুঁসছে উপজাতি গ্রাম

কেউ কথা রাখেননি। পঞ্চায়েত সদস্য থেকে মন্ত্রী— শুধু আশ্বাসই দিয়ে গিয়েছেন। ভোটের পর সবাই উধাও। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কান পাতলে এমনই অভিযোগ শোনা যায় দক্ষিণ হাইলাকান্দির অসম-মিজোরাম সীমানার গ্রামগুলিতে। স্বাধীনতার পর থেকেই উপজাতি অধ্যুষিত ওই সব এলাকাগুলিতে উন্নয়নের আঁচ পৌঁছয়নি।

Advertisement

অমিত দাস

হাইলাকান্দি শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৫
Share:

কেউ কথা রাখেননি। পঞ্চায়েত সদস্য থেকে মন্ত্রী— শুধু আশ্বাসই দিয়ে গিয়েছেন। ভোটের পর সবাই উধাও। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কান পাতলে এমনই অভিযোগ শোনা যায় দক্ষিণ হাইলাকান্দির অসম-মিজোরাম সীমানার গ্রামগুলিতে।

Advertisement

স্বাধীনতার পর থেকেই উপজাতি অধ্যুষিত ওই সব এলাকাগুলিতে উন্নয়নের আঁচ পৌঁছয়নি। হাইলাকান্দি জেলা উপজাতি সঙ্ঘের সভাপতি জামাপাউ কাবুই বলেন, “মানুষের মর্যাদাটুকু আমরা পাচ্ছি না। অনুন্নয়নের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তরুণ-যুবকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে জঙ্গিরা।’’ এলাকাবাসীর বক্তব্য, অসম-মিজোরাম সীমানার চেহারা না বদলালে সন্ত্রাসের মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। তাঁরা বলছেন, উপজাতি কল্যাণে সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করছে। কিন্তু সীমানা-সংলগ্ন উপজাতি গ্রামগুলির ছবিটা তাতে বদলাচ্ছে না।

হাইলাকান্দি জেলা উপজাতি সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক রাজেন্দ্র রিয়াং বলেন, “উন্নয়নের টাকা লুঠ হয়ে যাচ্ছে। গ্রামগুলিতে শিক্ষা, চিকিৎসা, আলো, পানীয় জল, রাস্তাঘাট কিছুই নেই। স্বাধীনতার এত বছর পরও সেখানকার ৩৫ হাজার উপজাতি মানুষ এ ভাবেই দিন কাটাচ্ছেন। তার জেরে সেখানে জঙ্গিদের ঘাঁটির শক্তি বাড়ছে।’’ হাইলাকান্দির বিজেপি নেতা সৈকত দত্ত চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘বন্দুক পুলিশ দিয়ে এখানে সন্ত্রাস দমন করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন উন্নয়নের। দীর্ঘ দিন ধরে উপজাতি এলাকার জন্য বরাদ্দ টাকা কারা আত্মসাৎ করেছে— তাঁদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে।’’

Advertisement

ওই এলাকায় উন্নয়নের কাজ না হওয়ার কারণ হিসেবে জঙ্গি-সমস্যার কথা তুলে ধরেন দক্ষিণ হাইলাকান্দির বিডিও কিশোর বরুয়া। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় বড় সড়ক তৈরির দায়িত্ব পূর্ত বিভাগের। ইন্দিরা আবাস যোজনার মতো প্রকল্পের টাকা বিতরণ করে গ্রামসভা। এতেও আমাদের কোনও হাত নেই।’’

২০০৮ সালে বরাকের প্রথম জঙ্গিগোষ্ঠী ইউএলবিভি-র ৩০২ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করে। ২০০০ সালে স্কুলশিক্ষক পঞ্চুরাম রিয়াং উপত্যকায় প্রথম জঙ্গিদল গঠন করেছিলেন। ২০০৮ সালে বরাকের উপজাতিদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তার দাবিকে সামনে রেখে অস্ত্রসমর্পণ করে পঞ্চুরাম বাহিনী। তার পরও ৮ বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু বরাকের উপজাতি এলাকার ছবিটা পাল্টায়নি।

দক্ষিণ হাইলাকান্দির মিজোরাম সীমানার রাইফেলমারা, বাঘছড়া, কচ্ছপছড়া, কুন্দানালা, বাংলাবাসা, টিয়াপুঞ্জি, রেমাপুঞ্জি, সেনাপুঞ্জি, কফল আলা এলাকায় ঘুরলে মনে হয় মানুষ এখনও যেন মধ্যযুগেই রয়েছে। জীবনযাপনের ন্যূনতম সুবিধা সেখানে নেই। হাইলাকান্দির ২০টি গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায় থাকেন উপজাতিরা। প্রতি বছর এই সব এলাকার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ তোলেন, কাজের কাজ কিছুই হয় না। উধাও হয় সরকারি অর্থ। স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০০৭ সালে দক্ষিণ হাইলাকান্দির ধলছড়া-বিলাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৫২ জন জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে রাইফেলমারা, ঘুটঘুটি গ্রামে অজানা জ্বরে ১২ জন মারা যায়। বেশিরভাগই ছিল শিশু। কার্যত বিনা চিকিৎসাতেই মৃত্যু হয় সকলের।

সরকারি বরাদ্দ কোথা থেকে আসে, কোথায় উধাও হয়— তা জানেন না গ্রামবাসীরা। উপজাতি গ্রামগুলির জন্য ইন্দিরা আবাস যোজনা, নলকূপ, সড়ক, সেতুর নির্মাণে টাকা বরাদ্দের খবর মেলে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয় না সেখানে। দীর্ঘ দিন ধরে বঞ্চিত উপজাতি মানুষ এখন ক্ষোভে ফুঁসছেন। প্রাক্তন জঙ্গিনেতা পঞ্চুরাম রিয়াং বলেন, ‘‘অধিকারের জন্য মানুষ লড়াই করবে এটাই তো স্বাভাবিক। দক্ষিণ হাইলাকান্দির উপজাতিরা চুড়ান্ত ভাবে বঞ্চিত। অধিকারের জন্য তাঁদের আন্দোলন কখনও উগ্র হয়ে ওঠে। কিন্তু সে জন্য দায়ী প্রশাসনই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement