নাগাল্যান্ড, অসমের পর এ বার অরুণাচল প্রদেশেও শাসক দলে ভাঙনের ছায়া।
দলীয় সূত্রে খবর, অসম কংগ্রেসের মতোই অরুণাচলেও কংগ্রেসের একাংশ নেতা ও বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে হাইকম্যান্ডের দ্বারস্থ হয়েছেন। সুযোগ বুঝে বিজেপি দাবি তুলেছে, কংগ্রেসে ভাঙন আসন্ন। তাঁরা অন্তর্বতীকালীন নির্বাচনের জন্য তৈরি। এই পরিস্থিতিতেই আজ সন্ধেয় কংগ্রেসের তিন বিধায়ক ইস্তফা দিয়েছেন।
কয়েক মাস ধরেই অরুণাচল কংগ্রেসের একাংশ নেতা-বিধায়ক গোপন বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকির বিরোধী ওই দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কালিখো পুল। দ্বন্দ্বের জেরে জেরবার কংগ্রেসে বিধায়করা নিজেদের কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন না। থমকে ছিল অনেক প্রকল্পের কাজও। রাজ্যে দুর্নীতি, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয়ছয় হওয়ার অভিযোগ, চাকমা-হাজোংদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিবাদে পরিস্থিতি উত্তপ্ত। কিন্তু সে দিকে পুরোপুরি মন দিতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
৬০ সদস্যের অরুণাচল বিধানসভায় কংগ্রেসের ৪৭ জন, বিজেপির ১১ জন ও দুই নির্দল বিধায়ক রয়েছেন। কংগ্রেস সূত্রে খবর, ৪৭ জনের মধ্যে ৬ মন্ত্রী-সহ তিরিশ জনের বেশি বিধায়ক টুকিকে সরানোর ছক কষছেন। এমনও অভিযোগ উঠছে, টিরাপ, খোনসা ও লংডিং জেলায় এনএসসিএন (আই-এম) টুকির বিরুদ্ধে বিধায়কদের উস্কাচ্ছে। সরকারি ভাবে টুকি শিবির বা পুল শিবির বিভেদের কথা স্বীকার না করলেও, দলীয় বিবৃতিতে বিভাজনের আঁচ মিলেছে। তাতে বলা হয়েছে, দলবিরোধী কাজ কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না।
অবশ্য বিবৃতিতে টুকির বিরুদ্ধে বিধায়কদের জোট বাঁধার খবরও অস্বীকার করা হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পাদি রিচো বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দলে কোনও বিদ্রোহ হয়নি। দল বা সরকার ভাঙারও কোনও আশঙ্কা নেই। পুলের মতো বহিষ্কৃত বিধায়ক মোটেই টুকির বিরুদ্ধে মন্ত্রী-বিধায়কদের একজোট করতে পারবেন না।’’ তবে, যে সব মন্ত্রী বা বিধায়কদের নাম ‘টুকি-বিরোধী’ হিসেবে সংবাদমাধ্যমে বের হয়েছে, তাঁদের অবস্থান ও মতামত সরাসরি ঘোষণা করতে বলেছেন পাদি। এ বছর ২ এপ্রিল দলবিরোধী কাজের জন্য রাজ্য কংগ্রেস ছয় বছরের জন্য পুলকে বহিষ্কার করার কথা ঘোষণা করে।
বিপদ আঁচ করে টুকি ইতিমধ্যে হাইকম্যান্ডের সঙ্গে দিল্লিতে দেখা করেছেন। টুকি শিবিরের দাবি, হাইকম্যান্ড তাঁকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছে, রাজ্যে দলের নেতৃত্বে কোনও বদল হবে না।
এ দিকে, প্রদেশ বিজেপি সভাপতি টাই টাগাক বলেন, ‘‘কংগ্রেস এখন কোমায় চলে গিয়েছে। রাজ্য চালানোর মতো ক্ষমতা বা মনের অবস্থা মুখ্যমন্ত্রীর নেই। তিনি এখন দলের ঝামেলা ও নিজের গদি সামলাতে ব্যস্ত। এতে রাজ্যের উন্নয়ন থমকে গিয়েছে। রাজ্যবাসীর স্বার্থে, সরকার ভেঙে ফের নির্বাচন করা হোক।’’ তবে তিনি জানান, কংগ্রেসের ঘর ভাঙার খেলায় বিজেপির কোনও হাত নেই।