সদ্য প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। —ফাইল চিত্র
সাকুল্যে দেড় বছর। কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে রাহুল গাঁধীর কার্যকালের মেয়াদ প্রথম দফায় অন্তত তার বেশি এগলো না। কারণ লোকসভা ভোটে দলের বিপর্যয়। দু’দশকেরও বেশি সময় পর ফের কংগ্রেসের রাশ যাচ্ছে গাঁধী পরিবারের বাইরে দলের কোনও নেতার হাতে। পরবর্তী সভাপতি হিসাবে আপাতত উঠে আসছে দলের বর্ষীয়ান দুই নেতার নাম— সুশীল কুমার শিন্ডে এবং মল্লিকার্জুন খড়্গে। যদিও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পুরোপুরি গাঁধী পরিবারের ছায়া এড়িয়ে কংগ্রেসের পথ চলা কার্যত অসম্ভব। ফলে নতুন সভাপতি নির্বাচনেও সনিয়া, রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কা— তিন গাঁধীর সম্মতি ছাড়া হওয়া সম্ভব নয়।
রাহুলের নাছোড় মনোভাবের জেরে তাঁর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প ছিল না কংগ্রেসের কাছে। তাই আজ বুধবার দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠকে তাঁর ইস্তফা গ্রহণের পর থেকেই আপাতত রাহুলের সভাপতিত্বের জমানার ইতি ঘটল কংগ্রেসে। সেই সঙ্গেই শুরু হল নতুন সভাপতির খোঁজ। আপাতত দু’টি নাম ভাসছে। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ৭৭ বছরের সুশীল কুমার শিন্ডে দলের অন্যতম দলিত মুখ। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বহু অভিজ্ঞতার সাক্ষী তিনি। দল এবং সরকারে বহু গুরুদায়িত্ব সামলেছেন।সর্বোপরি গাঁধী পরিবারে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা।
অন্য জন মল্লিকার্জুন খড়্গে (৭৬)। আগের বারের অর্থাৎ ষোড়শ লোকসভার বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব সামলেছেন দক্ষ হাতে। দক্ষিণের রাজ্য কর্নাটকের এই নেতাও দল-এবং সংসদীয় রাজনীতিতে অভিজ্ঞ। এই দু’জনের পাশাপাশি অবশ্য বিবেচনায় আরও কয়েক জনের নাম রয়েছে। তবে আপাতত দৌড়ে এগিয়ে শিন্ডে এবং খড়্গেই। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই কংগ্রেসের নতুন নেতা বেছে নেওয়া হবে বলে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে খবর।
বুধবারই রাহুল তাঁর ইস্তফা নিয়ে চার পাতার একটি চিঠি পোস্ট করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। লোকসভা ভোটে দলের বিপর্যয়ের জন্য বারবার নিজেকে দায়ী করেছেন রাহুল। বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি এখন আর কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ নন, এক জন সাংসদ এবং কংগ্রেস নেতা। ওই চিঠিতে তিনি রাহুলের বক্তব্য, অনেকেই তাঁকে বলেছেন নতুন সভাপতির নাম তিনিই মনোনীত করে দিন। কিন্তু রাহুল সেটাও মানতে চাননি। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমাদের দলের একটা সুদীর্ঘ ঐতিহ্য ও ইতিহাস রয়েছে। সেটাকে আমি গভীর শ্রদ্ধা করি। এটা (কংগ্রেস) দেশের বুননের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। আমি মনে করি, সঠিক নেতাই নির্বাচন করবেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।’’'
আরও পডু়ন: ‘আর কংগ্রেসের সভাপতি নই’, রাহুলের আবেগ বিহ্বল চিঠি টুইটারে, অন্তর্বর্তী দায়িত্বে ভোরা
আরও পডু়ন: ‘বাংলা’ নয়, ‘পশ্চিমবঙ্গ’ই ভাল: অধীর-বাবুল একসুর, তৃণমূল এখনও নীরব
লোকসভা ভোটের প্রচারে রাজীব গাঁধী, ইন্দিরা গাঁধীকে টেনে কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন মোদী-অমিত শাহ সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু রাহুল গাঁধী বলেছেন, তিনি ঘৃণা নয়, ভালবাসায় বিশ্বাসী। টুইটারে পোস্ট করা ওই চিঠিতে রাহুল টেনে এনেছেন সেই প্রসঙ্গও। লিখেছেন, ‘‘শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য আমার লড়াই ছিল না। বিজেপির বিরুদ্ধে আমার কোনও ঘৃণা বা হিংসা নেই, কিন্তু আমার দেহের প্রতিটি সজীব কোষ ভারত সম্পর্কে বিজেপির ধ্যানধারণার বিরোধী।’’
রাজীব গাঁধী হত্যার পর কংগ্রেসে নেতৃত্ব নিয়ে এক অদ্ভুত সঙ্কট তৈরি হয়। সেই সময় দলের দায়িত্বভার নেওয়ার মতো গাঁধী পরিবারের কেউ ছিলেন না। সনিয়া গাঁধী তার আগে পর্যন্ত সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না। রাহুল-প্রিয়ঙ্কা দু’জনেই অল্পবয়সী ছিলেন। সেই ইন্দিরা জমানার পর গাঁধী পরিবারের বাইরে থেকে পি ভি নরসিংহ রাওকে দলের সভাপতি করা হয়। পাঁচ বছর তিনি দায়িত্ব সামলানোর পর দায়িত্ব পান সীতারাম কেশরী। তিনি পদে ছিলেন এক বছর। ততদিনে সক্রিয় রাজনীতিতে সড়গড় হয়ে গিয়েছেন সনিয়া গাঁধী। তাই ফের কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ ফিরে যায় গাঁধী পরিবারেই। সভাপতি হন সনিয়া গাধী। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রায় দু’দশক তিনি দলের দায়িত্বে থাকার পর ছেলে রাহুল গাঁধীকে ওই চেয়ারে বসান সনিয়া।
রাহুল সরকারি ভাবে দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। তার মধ্যে লোকসভা ভোটে এমন এক ঝড় এল, যে তাতেই তিনি স্বেচ্ছ্বায় দায়িত্ব ছাড়লেন। কোনও ভোটে বা অন্য কোনও কারণে দলের খারাপ পারফরম্যান্সের জেরে অথবা দায়িত্ব নেওয়ার পর দেড় বছরের মধ্যে গাঁধী পরিবারের কেউ ইস্তফা দিচ্ছেন, এমন নজিরও কার্যত নেই বললেই চলে।