বিজেপির সঙ্গে ‘মাখামাখি’ করে তিনি পদ্মবিভূষণ পেয়েছেন বলে চর্চা হয়েছে বিস্তর। এর উপরে শিবসেনা ভোটে একা লড়ার কথা জানাতেই মহারাষ্ট্রে সরকার বাঁচাতে তড়িঘড়ি তিনি বিজেপিকে সমর্থনের আশ্বাস দিয়ে বসায় এনসিপি-র নেতা-কর্মীরা বুঝতে করছেন, মহারাষ্ট্রে ভুল বার্তা যাচ্ছে এতে। এ বার তাই ভারসাম্যের কৌশল নিলেন এনসিপি সভাপতি শরদ পওয়ার। সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপিকে তেড়ে আক্রমণ করে নিজের বিরোধী ভাবমূর্তি ধরে রাখার চেষ্টা চালালেন।
গোয়ার ভাস্কোয় গত কাল এক জনসভায় পওয়ার বলেন, ‘‘বিজেপি-এনসিপি ঘনিষ্ঠতা নিয়ে ভুল খবর রটানো হচ্ছে। আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে কোনও সমঝোতা করব না। সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে জোটও করব না।’’ সম্প্রতি পঞ্জাবে এক সভায় কংগ্রেসকে ‘অতীতের বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেসের মতো ডুবন্ত জাহাজে কারও ওঠা উচিত নয়।’’ সেই প্রসঙ্গ টেনে মোদীকে বেঁধেন পওয়ার। তাঁর দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী দেশকে কংগ্রেসমুক্ত করার কথা বলছেন। সংসদীয় ব্যবস্থায় এমন কথা বলা যায় না। কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদেরও মতপার্থক্য আছে। কিন্তু আমরা কখনও তাদের নির্মূল করার কথা বলি না।’’ নোট বাতিল নিয়েও মোদীকে আক্রমণ করে পওয়ারের দাবি, ‘‘এর ফলে অসংগঠিত ক্ষেত্রে বহু মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তাঁত শিল্পের অবস্থা খুবই খারাপ। ভোটের খরচ মেটানোও মুশকিল হচ্ছে।’’
শিবসেনা জানিয়েছে, বৃহন্মুম্বই-সহ পুরসভা, পঞ্চায়েত ও জেলা স্তরের কোনও নির্বাচনে বিজেপি সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা নেই। সংবাদমাধ্যমের একাংশে খবর, শিবসেনা-প্রধান উদ্ধব ঠাকরে এখন তাঁর ভাই রাজ ঠাকরের সঙ্গে সমঝোতার পথ খুঁজছেন। এই পরিস্থিতিতে শিবসেনা যদি রাজ্যের সরকার থেকে সরে আসে, সে ক্ষেত্রে অকাল নির্বাচনের মুখে পড়বে রাজ্য। যা কোনও দলই চাইছে না। এই যুক্তিকে সামনে রেখেই রাজ্যের সরকার বাঁচাতে প্রয়োজনে বিজেপির পাশে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পওয়ার। মোদী সরকার তাঁকে পদ্মবিভূষণ সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল এর ঠিক আগেই। এই ঘটনা পরপরম্পায় পওয়ারের সরকার-বিরোধী ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে বলে মত এনসিপি-র নেতা-কর্মীদের। আগামিকাল সংসদের অধিবেশন শুরু হচ্ছে। সেখানে সরকারকে কোণঠাসা করতে সক্রিয় হবে বিরোধী দলগুলি। তার আগে বিজেপির সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠতার বার্তা যে খুব সুবিধের হবে না, তা-ও বুঝতে পারছেন পওয়ার। তাই নিজের বিরোধী ভাবমূর্তিটিকে ফের চাঙ্গা করে রাখলেন তিনি। মহারাষ্ট্রের এক রাজনীতিকের কথায়, ‘‘বরাবরই সব নৌকোয় পা রেখে চলাটা পওয়ারের স্বভাব। এখনও সেটাই করে যাচ্ছেন!’’