তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি। —ফাইল চিত্র।
কেরলের পরে এ বার তামিলনাড়ু। ফের রাজ্য সরকার বনাম রাজ্যপালের দ্বন্দ্ব।
রাজ্যের ডিএমকে সরকারের তৈরি করা বক্তৃতা বিধানসভায় পড়া শুরু করে কয়েক মিনিটেই ইতি টানলেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি। সরকারকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও জাতীয় সঙ্গীতের যথাযোগ্য সম্মান না দেওয়ার অভিযোগও তোলেন তিনি। পরে রাজভবন জানায়, সরকারের লিখে দেওয়া বয়ানে ‘তথ্যগত ও নীতিগত’ কারণে আপত্তি রয়েছে রাজ্যপালের। রাজভবনের সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজ্যপালকে স্পিকার এম আপ্পাভু ‘নাথুরাম গডসের অনুগামী’ বলায় তিনি তাঁর পদের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে বিধানসভা ছেড়ে গিয়েছেন।
আজ বক্তৃতা শুরু করে অচিরেই রাজ্যপাল জানান, রাজ্য সরকারের যে সব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে তিনি ভিন্নমত, তা পাঠ করার জন্য নিজের ‘গলা ধার দেওয়া’টা ‘সাংবিধানিক তামাশা’ হয়ে দাঁড়াবে। তিনি বিধানসভার অধিবেশন শুরু ও শেষের সময় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু অধিবেশনের শুরুতে তা না-হওয়ায় তিনি স্পিকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, “সুতরাং, বিধানসভার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি বক্তব্য শেষ করছি।”
পরে রাজভবনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় সঙ্গীত প্রসঙ্গে ডিএমকে সরকার রাজ্যপালের কথা ইচ্ছাকৃত ভাবে অগ্রাহ্য করছে। লিখিত বক্তৃতায় সরকারের সাফল্য বিষয়ে অনেক ‘বিভ্রান্তিকর’ কথা ছিল বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
৪৬ পাতার লিখিত বক্তৃতা কয়েক মিনিটে রাজ্যপাল পড়া শেষ করে দেন। আর তার পরেই স্পিকার নিজে তামিলে তা পাঠ করতে শুরু করেন। সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টিতে তামিলনাড়ু বিপর্যস্ত হয়েছে। কিন্তু ‘পিএম কেয়ার্স ফান্ড’-এ কোটি কোটি টাকা থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্র এক পয়সাও রাজ্যকে দিয়ে সাহায্য করেনি বলে স্পিকার দাবি করেন। কারও নাম না করে বলেন, “ভি ডি সাভারকর এবং (নাথুরাম) গডসের অনুগামীদের থেকে আপনি কম
কিছু নন।” এর ঠিক পরেই বিধানসভা ছেড়ে রাজ্যপালকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
পরে স্পিকার জানান, রাজ্যপাল বক্তৃতার মধ্যে যে সমস্ত ‘ব্যক্তিগত’ মন্তব্য করেছেন, তা বিধানসভার রেকর্ড থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ দিনের অধিবেশনের শেষে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে স্পিকার জানান, বিধানসভার নিয়ম অনুযায়ী অধিবেশনের শুরুতে রাজ্য সঙ্গীত ‘তামিল তায় ওয়ালত্তু’ গাওয়া হয়। আর অধিবেশনের শেষে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়ে থাকে।
স্পিকার বক্তৃতার যে অংশ পাঠ করেছেন, তাতে জিএসটি ও চেন্নাই মেট্রোর বকেয়া না পাওয়া নিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ধারণা সঙ্কটাপন্ন হবে বলে দাবি করে অঙ্গীকার করা হয়েছে, রাজ্যে কখনও সিএএ চালু করতে দেওয়া হবে না। ছিল রাজ্য সরকারের নানা সাফল্যের কথাও। গত বছরও সরকারের তৈরি করা বক্তৃতার কিছু অংশ রাজ্যপালের না পড়ায় বিতর্ক হয়েছিল। সে বার বক্তৃতায় ‘দ্রাবিড় মডেল’ প্রসঙ্গ উহ্য রেখেছিলেন তিনি। এ বারও বক্তৃতায় রাজ্যের উন্নতিতে ‘দ্রাবিড় মডেল’ প্রসঙ্গ ছিল।