National News

দরজা খুলল শবরীমালার, ঢুকতে পারলেন না মহিলারা

যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা আর না ঘটে, সে জন্য এ দিন কড়া পুলিশ পাহারা ছিল গোটা এলাকায়। কিন্তু ‘শবরীমালা মন্দির বাঁচাও’ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে শুরু করেন। তখন পুলিশও লাঠি নিয়ে তেড়ে যায় বিক্ষোভকারীদের দিকে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নীলাক্কাল/পাম্বা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৩৫
Share:

শবরীমালা মন্দির চত্বর। ছবি- পিটিআই।

গত কয়েক দিন ধরে তুমুল বিক্ষোভের পর বুধবার বিকেলে দরজা খুলল কেরলের শবরীমালা মন্দিরের। কিন্তু সেই মন্দিরের আয়াপ্পা গর্ভগৃহ তো দুরের কথা, মন্দিরের ভেতরেও ঢুকতে দেওয়া হল না মহিলাদের। আটকানো হল মহিলা সাংবাদিকদেরও। দরজা খোলার পর মা, বাবা, ছেলেমেয়েকে নিয়ে ৪০ বছর বয়সী এক মহিলা পাহাড় বেয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন শবরীমালা মন্দিরে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা তাঁর পথ আটকান। তাঁকে ফিরে আসতে বাধ্য করা হয়।

Advertisement

যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা আর না ঘটে, সে জন্য এ দিন কড়া পুলিশ পাহারা ছিল গোটা এলাকায়। কিন্তু ‘শবরীমালা মন্দির বাঁচাও’ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে শুরু করেন। তখন পুলিশও লাঠি নিয়ে তেড়ে যায় বিক্ষোভকারীদের দিকে। পিছু ধাওয়া করে মন্দিরে প্রবেশপথের সামনের রাস্তা থেকে হঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীদের। বিক্ষোভকারীরা কিন্তু তার পরেও ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের মন্দিরে না ঢুকতে দেওয়ার দাবিতে অটল, অনড় থাকেন। বিকেল ৫টায় মন্দিরের দরজা খোলার আগে থেকেই ২০ কিলোমিটার দূরে নীলাক্কালের জঙ্গলে রাখা বেশ কয়েকটি বাসে বসে অপেক্ষা করছিলেন বিক্ষোভকারীরা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এ দিন বিকেলে মন্দিরের দরজা খোলার সময় হতেই তাঁরা এসে জড়ো হতে থাকেন প্রবেশদ্বারের সামনে। পুলিশ কয়েক জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে। মন্দিরের সামনে কয়েকটি এলাকায় জমায়েতও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ দিন সকালেও মন্দিরের প্রবেশপথে যাওয়ার সময় বাধা দেওয়া হয় দুই মহিলাকে। এঁরাই প্রথম যাঁরা এ দিন কেরলের শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। তাঁরা হলেন কেরলের এক সাংবাদিক লিবি সিএস। আর দ্বিতীয় জন অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা মাধবী। মাধবী পরিবারের সঙ্গে এসেছিলেন। সাংবাদিক লিবি এসেছিলেন কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে।

Advertisement

ওই সাংবাদিককে মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বারের ৪.৬ কিলোমিটার দূরে পাম্বায় ঘিরে ফেলেন বিক্ষোভকারীরা। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। আর মাধবী এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটে। মন্দির থেকে কয়েকশো মিটার দূরে মাধবীর পথ আটকানো হয়। পুলিশ গিয়ে তাঁকেও উদ্ধার করে। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যাওয়ায় তিনি আর মন্দিরমুখো হননি। সেখান থেকেই ফিরে যান। এরপর দর্শনার্থীদের একটি বাসে মহিলা টিভি সাংবাদিকও মন্দিরে যাচ্ছিলেন। গাড়ি আটকে তাঁকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। ভাঙচুর চালানো হয় গাড়িতেও।

আরও পড়ুন- শবরীমালায় ভক্তদের প্রবল বিক্ষোভে মন্দিরে ঢুকতে পারলেন না দুই মহিলা, ভাঙচুর চলল গাড়িতে​

আরও পড়ুন- #মিটু বাণের মুখে ইস্তফা দিলেন এম জে আকবর​

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ১০০ বছরের রীতি ভেঙে এই প্রথমবার কেরলের শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশাধিকার পেয়েছেন মহিলারা। আর শতাব্দী প্রাচীন ধর্মীয় রীতিকে বাঁচাতে মরিয়া হাজার হাজার ভক্ত।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আজ অর্থাৎ বুধবার থেকেই কেরলের শবরীমালা মন্দিরের দরজা খুলে যাচ্ছে। তার প্রতিবাদে হাজার হাজার ভক্তের বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়িয়েছে রাজ্যে। মঙ্গলবার থেকেই ভক্তরা পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বুধবার সকাল থেকে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। মন্দিরের কাছাকাছি পথে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় মহিলাদের। ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় মহিলা সাংবাদিকদেরও। প্রয়োজনে গায়ে আগুন লাগানোরও হুমকি দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

পুলিশ জানিয়েছে, শবরীমালা মন্দিরের ২০ কিলোমিটার আগে শবরীমালা আচার সংরক্ষণ সমিতি বলে এক সংগঠন একটি ক্যাম্প করে বসেছিল। সেখানেই তাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। এ দিন পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।

ওই ক্যাম্পে বসে অনেক বিক্ষোভকারী সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন। বুধবার সকালে দর্শনার্থীদের যে সমস্ত বাস আসছিল, সব বাসই তাঁরা দাঁড় করাচ্ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়।

শুধুমাত্র মহিলা ভক্তেরাই নন, বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে ছাড় পাননি মহিলা পুলিশেরাও। মন্দিরে নিরাপত্তার জন্য অনেক মহিলা পুলিশ দেওয়ার কথা ছিল। মন্দিরের ভিতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় তাঁদের।বিক্ষোভকারীদের হটাতে গেলে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। গায়ে আগুন লাগিয়ে গণ আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন।

এ দিন মন্দির খোলার কথা বিকেল ৫টায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ ফুট উঁচুতে পাহাড়ের মাথায় অবস্থিত শবরীমালা মন্দিরে ১০০ বছর পর প্রবেশ করতে চলেছেন মহিলারা। ইতিমধ্যেই মন্দিরে পৌঁছনোর রাস্তা ধরে ট্রেক করতে শুরু করে দিয়েছেন অনেক মহিলা ভক্তেরা। এই ১০০ বছর ধরেই মন্দিরের প্রবেশ দ্বারে একটি বোর্ড লাগানো ছিল। তাতে লেখা ছিল, ‘১০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে মহিলাদের মন্দিরে প্রবেশাধিকার নেই।’ মঙ্গলবার রাতে বোর্ডটিও খুলে ফেলেছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। যাতে মহিলা ভক্তদের মন্দিরে প্রবেশ করতে কোনও বাধার মুখে পড়তে না হয়, তার জন্য আগাম সতর্কতা নিয়ে রেখেছে পুলিশ। এ দিন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে মন্দির চত্বরে এবং বেস ক্যাম্পে।

রীতি অনুযায়ী, মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে বুধবার থেকে তিন মাসব্যাপী ‘মকরাভিলাক্কু উৎসব শুরু হবে শবরীমালায়। তার জন্য প্রচুর ভক্ত ভিড় জমান এ সময়। এ বার সেই ভিড়ে মহিলা ভক্তদেরও দেখা মেলার কথা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement