আম্মার আসনে চিনাম্মাই! তামিলনাড়ুর সিংহাসন ঘিরে নাটক নতুন মোড় না-নিলে, রবিবারই এই সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। আগামিকাল এডিএমকে-র বিধায়করা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বসতে চলেছেন। এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, ও পনীরসেলভমকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর গদি দখল করবেন নতুন সাধারণ সম্পাদক শশিকলা নটরাজন।
আশির দশর থেকেই তিনি প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার ছায়াসঙ্গী। সেই সুবাদে খাতায়-কলমে কোনও দলীয় পদে না-থাকলেও প্রভাব কিছু কম ছিল না। জয়ললিতার মৃত্যুর পরও তাঁর দেহ আগলে রেখেছিলেন শশিকলা। উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে তাই বেগ পেতে হয়নি। বাকি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর গদি। এডিএমকে সূত্র বলছে, সেই লক্ষ্যেই গত কয়েক দিনে দল ও প্রশাসনে নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়িয়েছেন শশিকলা। দলে বিশ্বস্তদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন, যাঁদের অনেককেই জয়ললিতা পছন্দ করতেন না। আবার প্রশাসনে জয়ার আস্থাভাজন বলে পরিচিত তিন আমলাকে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।
তামিলনাড়ুর রাজনীতিকরা মনে করছেন, নিজের কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করতেই শশিকলা এডিএমকে-র সাধারণ সম্পাদকের পর মুখ্যমন্ত্রীর গদিতেও বসতে চাইছেন। কারণ জয়ললিতার ভাইঝি দীপা জয়কুমার নিজেকে জয়ললিতার প্রকৃত উত্তরসূরি হিসেবে তুলে ধরতে চাইছেন। তাঁর সঙ্গে জয়ললিতার রক্তের সম্পর্ক। চেহারায়ও প্রচুর মিল। তিনি এডিএমকে-র বেশ কিছু নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। জয়া আম্মাকে নিয়ে আবেগের ফায়দা দীপা তুলতে পারেন ভেবে দল ও সরকারের রাশ পুরোপুরি নিজের হাতে নিতে চাইছেন শশিকলা।
শশিকলার মুখ্যমন্ত্রীর গদি দখল নিয়ে বিজেপিরও সায় রয়েছে। কিছু দিন আগেই ষাঁড়ের লড়াই জাল্লিকাট্টু নিয়ে বিতর্কেও তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। জাল্লিকাট্টু নিয়ে তামিলনাড়ুতে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে ওঠার জন্য মুখ্যমন্ত্রী পনীরসেলভমের দিকেই আঙুল তোলেন মোদী সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা। বিজেপি সূত্রের খবর, নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও শশিকলার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। জয়ললিতার শেষকৃত্যে গিয়ে শশিকলার মাথায় হাত রেখে সান্ত্বনা জানাতে দেখা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীকে। তা ছাড়া শশির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তা কাজে লাগিয়ে তাঁকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে বলেও মনে করছেন বিজেপি নেতারা। বিজেপি নেতা বেঙ্কাইয়া নায়ডু মুখে অবশ্য বলছেন— কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা এডিএমকের নিজেদের ব্যাপার।
এডিএমকে সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী পদে শশিকলার উত্থানে বাধা আসার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ দলের একটা ছোট্ট অংশই তাঁর বিরোধী। এই অংশটি মনে করে, শশিকলার সঙ্গে তাঁর স্বামী এম নটরাজন ও পরিবারের অন্য সদস্যদেরও এ বার দলে প্রত্যাবর্তন ঘটবে। অতীতে দু’বার শশিকলাকে দল থেকে তাড়িয়েছিলেন জয়ললিতা। ক্ষমতার লোভের জন্য নিন্দুকেরা তাঁদের নাম দিয়েছিল ‘মান্নারগুড়ি মাফিয়া’। পরে শশিকলা নিজের পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে ফের জয়ললিতার ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ফিরে আসেন। স্বামী ও পরিবারের বাকিদের এডিএমকে-র দফতর বা পয়েজ গার্ডেনে জয়ললিতার বাড়ির চৌকাঠ মাড়ানোও মানা ছিল। কিন্তু জয়ললিতার শেষকৃত্যের সময় শশিকলার পাশে তাঁর পরিবারের কয়েক জনকেও দেখা যায়।
পনীরসেলভম ও শশিকলা— দু’জনেই তামিলনাড়ুর প্রভাবশালী থেবর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। কিন্তু পনীরসেলভমের দিক থেকে শশিকলার উত্থানে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর আশঙ্কা বিশেষ নেই। কারণ শশিকলার চাপেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে তিন আমলাকে সরিয়েছেন। এর মধ্যে জয়ললিতার উপদেষ্টা শীলা বালকৃষ্ণন নিজেই সরে গিয়েছেন। জয়ললিতা হাসপাতালে থাকার সময় এই আমলাই গোটা প্রশাসন একা হাতে সামলেছিলেন।