হলুদ ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে সংসদ ভবন। —ফাইল চিত্র।
রাম পাল, বিজেন্দ্র সিংহ, নানক চাঁদ, মতবর সিংহ নেগি, জে পি যাদব, কমলেশ কুমারী, ওম প্রকাশ, ঘনশ্যাম, দেশ রাজ। পরপর ছবি ঝুলছিল পুরনো সংসদ ভবনের বাইরে। ফুল, মালা দিয়ে সাজানো। সকালেই প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার স্পিকার, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান থেকে তামাম মন্ত্রী, সাংসদেরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে গিয়েছেন।
প্রতি বছরেরই ১৩ ডিসেম্বর সংসদে জঙ্গি হামলার দিনটিকে স্মরণ করে সংসদ চত্বরে এই দৃশ্য দেখা যায়। ২২ বছর পরে এ বছরের ১৩ ডিসেম্বর নতুন করে সেই হামলার আতঙ্ক ফিরিয়ে আনল।
বুধবার দুপুরে লোকসভার ভিতরে দুই যুবক ঝাঁপিয়ে পড়ার পরে সারা দিন পুরনো সাংসদ থেকে নিরাপত্তাকর্মীদের মুখে মুখে ঘুরল ২০০১ সালে সংসদে জঙ্গি হামলার ঘটনা। সে দিন বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে পাঁচ জঙ্গি সংসদ চত্বরে ঢুকে পড়েছিল। গাড়ির কাচে ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভুয়ো স্টিকার। সন্দেহ হওয়ার গাড়ি আটকাতেই জঙ্গিরা গুলি চালাতে শুরু করে। সংসদ ভবনের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুরু হয় নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে গুলির লড়াই। সমস্ত মন্ত্রী-সাংসদের প্রাণ বাঁচিয়ে জঙ্গিদের গুলিতে মারা যান ন’জন নিরাপত্তাকর্মী।
সংসদ ভবনের এক পোড়খাওয়া নিরাপত্তা আধিকারিক বলছিলেন, ‘‘আমি প্রথমে ভেবেছিলাম, সিআরপি জওয়ানদের মধ্যেই কেউ গুলি চালিয়ে ফেলেছে। তার পরে বুঝতে পারি, এটা সন্ত্রাসবাদী হামলা।’’ সেই সময়েও কেন্দ্রে বিজেপির সরকার। ঘটনার পরেই লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী সনিয়া গান্ধী তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে ফোন করে তাঁর কুশল জানতে চান। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী জানান, লস্কর-ই-তইবা ও জইশ-ই-মহম্মদের পাঁচ পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী
হামলা চালিয়েছে।
প্রবীণ সাংসদদের অনেকে আবার আজকের ঘটনার সঙ্গে সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলিতে ভগৎ সিংহ-বটুকেশ্বর দত্তের বোমা ফেলার মিল খুঁজে পাচ্ছেন। পুরনো সংসদ ভবনেই ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল ঘটেছিল সেই কাণ্ড। দুই স্বাধীনতা সংগ্রামী বোমা ফাটিয়ে, ধোঁয়া উড়িয়ে ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলেন। পার্লামেন্টের কানে তালা ধরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। সেই বোমা তৈরিতে কোনও ক্ষতিকর পদার্থ ব্যবহার হয়নি। বুধবার লোকসভার ভিতরে ও সংসদের বাইরে থেকে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরাও নিজেদের মধ্যে ‘ভগৎ সিংহ ফ্যান ক্লাব’ তৈরি করেছিলেন বলে আপাত ভাবে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ। এক প্রবীণ সাংসদ বলেন, ‘‘আজ যারা লোকসভায় ঢুকে পড়েছিল, তারা অবশ্য সরকারকে বার্তা দিতে চেয়েছিল। কারও প্রাণহানি করতে চায়নি।’’
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে তেলঙ্গানা বিল পাশের সময়ে লোকসভা তোলপাড় করা ‘গোলমরিচ স্প্রে’ কাণ্ডের সঙ্গেও বুধবারের ঘটনার মিল পাচ্ছেন অনেক সাংসদ। অন্ধ্রপ্রদেশ ভেঙে তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের বিল পাশের সময়ে তেলঙ্গানা-বিরোধী কংগ্রেস সাংসদ এল রাজাগোপাল ‘গোলমরিচ স্প্রে’-র ক্যান থেকে তীব্র ঝাঁঝালো রাসায়নিক স্প্রে ছড়িয়েছিলেন লোকসভায়। তেলুগু দেশমের সাংসদ বেণুগোপাল রেড্ডি স্পিকারের টেবিলে উঠে পড়তে গিয়েছিলেন। সেই সময় সেক্রেটারি জেনারেলের টেবিলের কাচ ভেঙে ছড়িয়ে গিয়েছিল।
এক প্রবীণ সাংসদ বলেন, লোকসভার মধ্যে ভিজ়িটর্স গ্যালারি থেকে কক্ষে ঝাঁপানোর ঘটনা
আগেও এক বার ঘটেছে। উত্তরপ্রদেশ ভেঙে উত্তরাঞ্চল তৈরির দাবিতে আন্দোলন চলাকালীন এক ব্যক্তি ভিজ়িটর্স গ্যালারি থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তবে তার পরে আর বিশেষ কিছু করতে পারেননি তিনি।