প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা। ছবি: পিটিআই।
‘‘মেরে বড়ে ভাই, ইধার দেখো। সব চেয়ে বেশি গর্ব হচ্ছে তোমার জন্যই।’’
ভারত জোড়ো যাত্রার ১০৯তম দিনে গাজ়িয়াবাদের মঞ্চে কংগ্রেসের উত্তরপ্রদেশের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলছিলেন কথাগুলো। রাহুল গান্ধী কন্যাকুমারী থেকে শুরু করা ভারত জোড়ো যাত্রা নিয়ে আজই ঢুকলেন উত্তরপ্রদেশে। আর সেই পদযাত্রার মঞ্চ থেকে প্রথম বক্তৃতাতেই প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা আজ এ ভাবে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন তাঁর দাদাকে। বললেন, ‘‘সরকার ওর (রাহুলের) ভাবমূর্তি খারাপ করতে ক্ষমতার পূর্ণ শক্তি কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু ও সত্য থেকে সরে আসেনি। এজেন্সিকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাতেও ভয় পায়নি। ও যোদ্ধা।’’ নির্দিষ্ট কিছু শিল্পগোষ্ঠীর প্রতি নরেন্দ্র মোদী সরকারের পক্ষপাতিত্বের যে অভিযোগ বিরোধীরা তোলেন, এ দিন তা ফের উস্কে দিয়ে প্রিয়ঙ্কা বলেছেন, ‘‘আদানিজি, অম্বানীজি তাবড় নেতাদের কিনে নিয়েছেন। দেশের সব সরকারি সংস্থা কিনে নিয়েছেন। দেশের সংবাদমাধ্যম কিনে নিয়েছেন। কিন্তু আমার ভাইকে কিনতে পারেননি, পারবেনও না। ওর জন্য গর্ব হয়।’’
তবে শুধু রাহুল নন, তাঁর সঙ্গে হাঁটা দলীয় সতীর্থদের জন্যও তিনি গর্বিত বলে জানিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা। রাহুলের কথাই উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘‘ও ঘৃণার বাজারে ভালবাসার দোকান খোলার কথা বলেছিল। দেশবাসীকে আর্জি, প্রত্যেক জেলা, গ্রাম, অলিগলিতে ‘মহব্বত’-এর এই দোকানের ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি খুলুন। কারণ তা না হলে, জনতাকে বিচ্ছিন্ন করার রাজনীতি বাড়তে থাকলে, আপনাদের সমস্যার সমাধান কোনও দিন হবে না। চাকরি হবে না। অর্থ ব্যবস্থা মজবুত হবে না। মূল্যবৃদ্ধি কমবে না। ভারত জোড়ো যাত্রা জোড়ার কথা বলছে, কারণ, দেশ একজোট হলে তবেই আপনারা সরকারের কাছে নিজেদের অধিকার চাইতে পারবেন। যত দিন আপনারা বিচ্ছিন্ন থাকবেন, আপনাদের নজরও থাকবে আলাদা আলাদা বিষয়ে।’’
আজই ভারত জোড়ো যাত্রায় হেঁটেছেন ইন্টেলিজেন্স বুরো (আইবি)-র প্রাক্তন স্পেশাল ডিরেক্টর এবং রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র)-এর প্রাক্তন সচিব অমরজিৎ সিংহ দুলাত। অবসরের পরে ২০০০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৪ সালের মে পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দফতরের জম্মু-কাশ্মীর বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন দুলাত। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা আজ হাজির ছিলেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কার পাশে। ভারত জোড়ো যাত্রার গন্তব্যও তো কাশ্মীর। প্রিয়ঙ্কা এ দিন বলেন, ‘‘এক জন আমাকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, ‘আপনার ভাইয়ের শীত করে না? ছোট একটা টি-শার্ট পরে এই ঠান্ডায় চলেছে!’ কেউ বলছেন, ‘ওকে ঠান্ডা থেকে বাঁচাও।’ জানতে চেয়েছেন, ও কাশ্মীরে যাবে, ওর নিরাপত্তা নিয়ে (আমাদের) ভয় করছে না? আমি বলেছি, ‘‘ও সত্যের কবচ পরে চলছে। ভগবান ওকে সুরক্ষিত রাখবেন।’’
বিজেপির যদিও বক্তব্য, গান্ধী পরিবার তথা কংগ্রেসই আদৌ ভারতকে চেনে না। দলের মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ সুধাংশু ত্রিবেদী বলেন, ‘‘দেশ ঘুরে ভারতকে বোঝা যায় না। সবার আগে ভারতীয়ত্ব কী, তা বুঝতে হয়। এই পরিবারটি গত চার প্রজন্ম ধরে ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’ (জওহরলাল নেহরুর বইয়ের নাম) করে চলেছে। কিন্তু এখনও তারা বিভ্রান্ত।’’ যাত্রার ফাঁকেই অভিনেতা কমল হাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রাহুল বলেছিলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে যে আচরণ করছে, চিন তা-ই করছে ভারতের সঙ্গে। সেই প্রসঙ্গে ত্রিবেদী বলেন, ‘‘রাহুলের কথা শুনে মনে হচ্ছে, তিনি পারলে ভারতকে চিনের হাতে তুলে দেন।’’