ফিনিক্স-জীবনের গল্পই এখন ওঁদের মূলধন

চেনা মানুষের আঘাতে নিজেদের চেহারাই নিজেদের কাছে অচেনা ঠেকে। আয়নায় নিজেদের মুখ দেখে শিউরে ওঠেন। ওড়নায় মুখ ঢেকে রাখা ছাড়া উপায় নেই।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

সামাজিক লড়াই লড়ছেন অনেক দিন। এ বার অ্যাসিড আক্রান্তদের অর্থনৈতিক লড়াই শুরুর পালা।

Advertisement

চেনা মানুষের আঘাতে নিজেদের চেহারাই নিজেদের কাছে অচেনা ঠেকে। আয়নায় নিজেদের মুখ দেখে শিউরে ওঠেন। ওড়নায় মুখ ঢেকে রাখা ছাড়া উপায় নেই। এ বার নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে সেই ওড়না সরিয়ে দিয়েছেন রেশমা, কল্পনা, মাবিয়া, সায়রারা। ফেসবুকে নিজেদের ছবি দিয়েছেন ওঁরা। ছবির সঙ্গে ছোট করে লিখেছেন ‘পোড়া মুখের’ ইতিহাস। স্রেফ কারও ব্যক্তিগত আক্রোশ, হিংসা ও লোভের বলি কী ভাবে হতে পারেন অন্য একটি মানুষ, প্রত্যেকটি গল্পের ছত্রে ছত্রে তারই প্রমাণ। আক্রমণকারীরা কখনও স্বামী, কখনও দিদি। কারও ক্ষেত্রে কোনও অনুরাগী।

ফেসবুকের আর পাঁচ জনের মতোই ওঁদেরও লক্ষ্য ‘লাইক’ পাওয়া। বেড়াতে যাওয়ার ছবি, পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার ছবি বা নতুন গাড়ির ঝকঝকে ছবি ‘শেয়ার’ করে ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেন নেট-দুনিয়ার বিচরণকারীরা। রেশমা, কল্পনারা নিজেদের ছবি ও গল্প শেয়ার করছেন। দুঃস্বপ্নের দিনগুলো পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে ওঁদের এই ‘লাইক’ পাওয়া জরুরি। এই সংখ্যার উপর নির্ভর করবে ব্যক্তিগত ঋণ হিসেবে ২৫ হাজার টাকা পাওয়ার সুযোগ। ব্যবসা শুরু করার পুঁজি। আর্থিক স্বনির্ভরতার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় মূলধন।

Advertisement

চলতি বছরের মে মাস থেকে শুরু হয়েছে টাটা গোষ্ঠীর একটি আর্থিক সংস্থার ঋণ প্রকল্প। যাঁদের ঋণ পাওয়ার ‘আর্থিক যোগ্যতা’ নেই, তাঁদের জন্যই এই প্রকল্প। অর্থাৎ আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার অবস্থা নেই যাঁদের, বা কোনও সম্পত্তি নেই বন্ধক দেওয়ার জন্য, এমনকী ‘গ্যারান্টর’ও নেই। ঋণের টাকা ফেরত না দিতে পারলে গ্যারান্টরের থেকে টাকা উসুল করে নেয় ঋণদাতা সংস্থারা। এ ধরনের প্রান্তিক মানুষের স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্নকে বাস্তব করে দিতে ফেসবুকের হাত ধরেছে এই সংস্থাটি। এই প্রকল্পই ফের জিইয়ে তুলেছে সায়রা, রেশমা, কল্পনা, মাবিয়াদের স্বপ্ন।

সাতটি অস্ত্রোপচারের পরে জীবনের মূলস্রোতে ফিরতে চান সায়রা বানু। নিজের বেকারি তৈরির জন্য মূলধনের প্রয়োজন তাঁর। ৪০টি অস্ত্রোপচার হয়ে যাওয়ার পরেও আগের রূপ ফিরে পাননি কল্পনা। কিন্তু নিজের বিউটি পার্লার খোলার জেদ টিঁকিয়ে রেখেছেন।

এক সময়ে মঞ্চে নাচতেন উত্তর ভারতের মেয়ে রেশমা খাতুন। এক অনুরাগীর বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। চোখের দৃষ্টি হারিয়ে তার দাম দিয়েছেন। তবুও নিজের ফাস্ট ফুড সেন্টার খোলার সিদ্ধান্তে অনড় রেশমা। অ্যাসিড আক্রমণে অন্ধ হয়ে গিয়েছেন মাবিয়াও। নিজের ও নিজের সন্তানের টালমাটাল জীবনে স্থিতি আনতে তিনি একটি ছোট জামাকাপড়ের দোকান খুলতে চান।

ফেসবুকে নিজেদের মুখচ্ছবি প্রকাশ করেই সেই লড়াই শুরু করছেন ওঁরা।

(শেষ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement