দিল্লিতে তরুণী ধর্ষণে ধৃত ট্যাক্সিচালক

তারিখটা ছুঁতে ঠিক এক সপ্তাহ বাকি। ১৬ ডিসেম্বর। যে দিনটি গোটা দেশ মনে রেখেছে নির্ভয়ার জন্য। শুক্রবার মাঝরাতে বছর সাতাশের তরুণীকে হুমকি দেওয়ার সময় সেই ভয়ঙ্কর দিনটার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল খোদ ধর্ষকই। বলেছিল, “চিৎকার করলেই পেটে রড ঢুকিয়ে দেব। ১৬ ডিসেম্বরটা মনে আছে তো?”

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share:

ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ দিল্লিতে। রবিবার। ছবি:পিটিআই।

তারিখটা ছুঁতে ঠিক এক সপ্তাহ বাকি। ১৬ ডিসেম্বর। যে দিনটি গোটা দেশ মনে রেখেছে নির্ভয়ার জন্য। শুক্রবার মাঝরাতে বছর সাতাশের তরুণীকে হুমকি দেওয়ার সময় সেই ভয়ঙ্কর দিনটার কথা মনে করিয়ে দিয়েছিল খোদ ধর্ষকই। বলেছিল, “চিৎকার করলেই পেটে রড ঢুকিয়ে দেব। ১৬ ডিসেম্বরটা মনে আছে তো?”

Advertisement

দিল্লি পুলিশ নিজেই জানিয়েছে এ কথা। রবিবার দিনভর বিস্তর খানাতল্লাশির পরে ট্যাক্সিচালক শিবকুমার যাদব মথুরা থেকে গ্রেফতার হয়েছে। শুক্রবার মাঝরাতে দিল্লির সরাই রোহিলায় ‘উবের ট্যাক্সি’তে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগের আঙুল এর দিকেই।

নিগৃহীতার কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, ধর্ষণের পরে সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে যাচ্ছিলেন তিনি। তখনই ট্যাক্সিচালক তাঁর শরীরে রড ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। অভিযুক্ত এ দিন গ্রেফতার হলেও তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে ‘উবের’। মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে ট্যাক্সি ‘বুক’ করার সুযোগ এনে দেওয়া এই মার্কিন প্রযুক্তি যে নিরাপদ পরিষেবার আশ্বাস দেয়, বাস্তবে তা আদৌ পালিত হয় কিনা, উঠছে সেই প্রশ্নই। ভারতে এই মার্কিন সংস্থাটি গত কয়েক মাস ধরেই ট্যাক্সি পরিষেবা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বেসরকারি ট্যাক্সিগুলির মধ্যে তুলনামূলক ভাবে খরচও কম। উবেরের ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে, সারা বিশ্বে সবচেয়ে সুরক্ষিত যাত্রার ব্যবস্থা নাকি তারাই করে। শুক্রবার রাতে দিল্লির ঘটনা কিন্তু বেশ কিছু ফাঁকফোকর সামনে আনছে। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, সুইফট ডিজায়ার গাড়িটির চালক সম্পর্কে প্রাথমিক খোঁজখবরও করেনি সংস্থাটি। তার কাছে দিল্লি ট্রান্সপোর্ট অথরিটির জারি করা লাইসেন্সও নেই। পরিচয় না জেনেই উবের ছ’মাস ধরে লোকটিকে কাজ করাচ্ছিল। যে মোবাইল অ্যাপলিকেশন এবং জিপিএসের উপরে ভরসা করে উবেরের ট্যাক্সি চলে, সেই মোবাইলটাই বন্ধ করে দিয়েছিল শিবকুমার। ফলে ধর্ষণ দূরে থাক, সংশ্লিষ্ট যাত্রী কোথায় রয়েছেন, সেই তথ্যটুকুও ছিল না সংস্থার কাছে। এমনকী চালক যে উধাও, সে ব্যাপারেও সংস্থাটি সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিল বলে অভিযোগ।

Advertisement

কী করে ধরা গেল শিবকুমারকে?

রবিবার সকালেই পুলিশ দাবি করেছিল, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তারা আটক করতে পেরেছে। কিন্তু বেলা গড়াতেই জানা যায়, ওই লোকটি আসল অভিযুক্ত নয়। তার পরেই পুলিশের তরফে ঘোষণা করা হয়, অভিযুক্তকে ধরিয়ে দিতে পারলে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। শেষমেশ সন্ধ্যার পরে মথুরায় দিল্লি-আগরা জাতীয় সড়কের কাছে একটি বিয়েবাড়ির কাছে ধরা পড়ে ৩২ বছর বয়সি শিবকুমার। মথুরার কাছেই গত কাল উদ্ধার করা হয়েছিল ট্যাক্সিটি। সেখান থেকেই সূত্র পেয়ে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় জোরদার তল্লাশি অভিযানে নামে পুলিশ। আগরা রেঞ্জের ডিআইজি লক্ষ্মী সিংহ জানিয়েছেন, শিবকুমার মথুরার চন্দরপুরী এলাকায় একটি ভাড়াবাড়িতে থাকত। যদিও সেখানে গিয়ে আজ তাকে পায়নি পুলিশ। আদতে উত্তরপ্রদেশের মণিপুরীর বাসিন্দা সে। গাড়িটির মালিক সে-ই। মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরেই তাকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। গাড়িটিও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে দিল্লিতে।

দিল্লি পুলিশ জানাচ্ছে, শিবকুমার নাম ভাঁড়িয়ে উবারে যোগ দিয়েছিল। যদিও সংস্থা তা জানত না। আজ উবের বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, তারা ঘটনাটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। তদন্তে পুলিশের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করতে তারা প্রস্তুত। উবেরের এখনও দাবি, চালক এবং তার গাড়ি সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য জেনে তবেই নিয়োগ করে তারা। যদিও শিবকুমারের ঘটনা তার উল্টো সাক্ষ্যই সামনে আনল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement