কংগ্রেসকে আক্রমণ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পাল্টা দিলেন অধীর চৌধুরী। ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধী শিবিরে যোগ্যতম মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই— আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এই দাবিই সামনে আনল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশে মমতার মতো আর কেউ নেই। পাশাপাশি, বিজেপি শিবিরের অন্যতম শক্তি কংগ্রেসের আদর্শগত অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “কংগ্রেস বলে। তৃণমূল কাজে করে।”
সংসদে ও সংসদের বাইরে কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়েও বিরোধ বেধেছে তৃণমূলের সঙ্গে। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার এবিপি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দলের অবস্থান আরও তীক্ষ্ণ করেছেন অভিষেক। বিরোধী শিবিরে মমতা ও তৃণমূলের অবস্থান এবং কংগ্রেসের ভূমিকা সম্পর্কে খোলা মনেই নিজের মত জানিয়েছেন তিনি। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের অবস্থান সম্পর্কে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ তারাই যারা দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে। দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে।’’ এই অবস্থায় বিরোধী শিবিরের চেহারা কেমন? অভিষেক বলেন, ‘‘এই বিষয়টি মানুষের উপরে ছেড়ে দেওয়াই ভাল। গণতন্ত্রে মানুষই ঠিক করে নেন, বিরোধী শক্তিকে।’’ সেই সূত্রেই প্রশ্ন আসে, বিরোধী শিবিরের প্রধান মুখ কি মমতা? অভিষেক স্পষ্ট বলেন, ‘‘আমি তো তাই মনে করি। মমতা এখন দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। দেশে অন্য কোনও দলে আর এক জনকে দেখান, যিনি মমতার মতো লড়াই করে চলেছেন।’’
এ দিন অবশ্য কংগ্রেসের মতাদর্শগত অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেসের আদর্শটা ঠিক কী, সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন।’’ এই প্রশ্নের প্রেক্ষিত বোঝাতে তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস বাংলায় বামেদের সঙ্গে জোট করেছে, আবার কেরলে তাদের বিরুদ্ধেই লড়াই করছে। অসমে এআইডিইউএফ-এর সঙ্গে বোঝাপড়া করেছে, অন্য দিকে শিবসেনার মতো দলের সঙ্গেও বোঝাপড়া করেছে। আমরা কখনও আদর্শগত অবস্থান নিয়ে আপস করিনি।’’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় সিপিএমকে হারিয়ে দিয়েছি, বলতেই পারতাম, ত্রিপুরায় তাদের (সিপিএম, কংগ্রেস) সঙ্গে সমঝোতা করে ভোটে যাব। তা যাইনি।’’
বিরোধী-ভূমিকা পালনে কংগ্রেসের সমালোচনা করে অভিষেক বলেন, ‘‘কংগ্রেসের উপর মানুষ দীর্ঘ দিন ভরসা রেখেছিল। কিন্তু কোনও বিষয়ে টুইট করা এক কথা আর তা নিয়ে লড়াইয়ে থাকা আর এক কথা। কংগ্রেস বলে আর তৃণমূল করে। তৃণমূলই আসল কংগ্রেস।’’
অভিষেকের এই সব মন্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর পাল্টা, ‘‘যে দল বিজেপির মন্ত্রিসভায় ছিল, এ রাজ্যে বিজেপিকে ডেকে এনেছে, তাদের মুখে এ কথা মানায়! সারা দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একের পর এক বিশ্বাসঘাতকতায় বিরোধী শিবিরকে বিভ্রান্ত করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধরা পড়ে গিয়েছেন। প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, বিপদে পরস্পরের ভরসা বিজেপি ও তৃণমূল।’’ আর রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দশ বছর ধরে এই একই কথা শুনছি। গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হয়, দাবি করে আদায় করা যায় না। এই ধরনের দাবি জাতীয় রাজনীতিতে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার পক্ষে যথেষ্ট। স্বপ্ন দেখলে শরীর ও মন ভাল থাকে।’’