Jammu-Kashmir Terror Attack

পাশের ঘরের নববিবাহিত দম্পতিই হামলার শিকার

আমরা হাওড়ার বাসিন্দা। ১৭ এপ্রিল স্বামী সুশান্তকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছয় দিনের জন্যে কাশ্মীর বেড়াতে এসেছি। বুধবার আমাদের কলকাতায় ফেরার কথা। সোমবার সোনমার্গ থেকে পহেলগামের হোটেলে এসে উঠি।

উমা বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্যটক)

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:০২
Share:
পর্যটকদের উপরে হামলার ঘটনার প্রতিবাদ স্থানীয় বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার রাতে পহেলগামে।

পর্যটকদের উপরে হামলার ঘটনার প্রতিবাদ স্থানীয় বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার রাতে পহেলগামে। ছবি: পিটিআই।

পহেলগামের হোটেলের ঘরে আটকে আছি আমরা। ভেবে চলেছি, মঙ্গলবার আমাদের সঙ্গেও কী ঘটে যেতে পারত! সকালের একটা সিদ্ধান্ত দু’জনের জীবন বাঁচিয়ে দিল হয়তো। ঘরে চা দিতে এসে হোটেলের এক কর্মী জানালেন, আমাদের পাশের ঘরে ওঠা এক নবদম্পতি এ দিনের হামলার শিকার হয়েছেন। বিয়ে হয়েছিল মাত্র দিন পনেরো আগে। এ দিন গিয়েছিলেন বৈসরনে। স্ত্রীকে হামলার হাত থেকে বাঁচাতে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন তাঁর স্বামী। কাদায় পড়ে আহত হন স্ত্রী। সংজ্ঞা ফিরলে তাঁকে জানানো হয়, স্বামী হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতালের উদ্দেশে যখন তিনি রওনা হচ্ছেন, তখনও জানেন না যে স্বামী আর নেই।

ঘরে বসেই অনবরত কানে আসছে হুটার, অ্যাম্বুল্যান্স আর সেনাবাহিনীর গাড়ির শব্দ। যদিও হোটেল বা গাড়িচালকের তরফেও কিছু বলা হয়নি আমাদের। কিছু যে ঘটেছে, সেটা আন্দাজ করেছিলাম রাস্তাতেই।

আমরা হাওড়ার বাসিন্দা। ১৭ এপ্রিল স্বামী সুশান্তকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছয় দিনের জন্যে কাশ্মীর বেড়াতে এসেছি। বুধবার আমাদের কলকাতায় ফেরার কথা। সোমবার সোনমার্গ থেকে পহেলগামের হোটেলে এসে উঠি। এ দিনই আমাদের বৈসরনে যাওয়ার কথা ছিল। ২০২২ সালেও আমরা কাশ্মীর ঘুরে গিয়েছি। ব্যাঙ্কের চাকরি থেকে অবসর নিয়ে এ বার বেড়াতে এসে কর্তা-গিন্নি তাই বেশি দৌড়ঝাঁপ করতে চাইনি। সকালেই আমরা ঠিক করেছিলাম, পহেলগামের স্থানীয় বাজার ঘুরে কেনাকাটা করব। বৈসরনে যাব না। সাড়ে বারোটা নাগাদ বাজারে যখন ঘুরছি, তখনই ফাঁকা লাগছিল দোকানগুলো। দোকানদাররা জানালেন, জম্মু ও কাশ্মীরের মূল হাইওয়ের একটা অংশে বড় ধস নেমেছে রবিবার ভোরে। ফলে গাড়ি নিয়ে আসা পর্যটকেরা আটকে পড়েছেন। ওই রাস্তা খুলতে লেগে যাবে সাত দিনের মতো।

এ দিন বৈসরনে জঙ্গি হামলার বিষয়ে রাস্তায় কারও কথায় কিছু টের পাইনি। তবে পিরপঞ্জালের কোলের শহর পহেলগামের হঠাৎ জেগে ওঠা রাস্তা দেখে মন বলছিল, কিছু হয়েছে। আমাদের চালক মুদাসিরকে সে কথা জিজ্ঞাসাও করেছিলাম, কোথাও কি জঙ্গি হামলা হয়েছে? সপ্রতিভ মুদাসির বলেছিলেন, ‘‘এমন কিছু হতে পারে। তাই রাস্তা বন্ধ হওয়ার আগে আপনাদের হোটেলে পৌঁছে দিতে চাইছি।’’ তার আগে কেনাকাটা শেষ করে দুপুরের খাবার সেরে একটা কাঠের বেঞ্চে বসে দু’জনে মিলে উপভোগ করছিলাম পুরো পিরপঞ্জাল রেঞ্জ। তারই মধ্যে মুদাসিরের ফোন ঢুকল। ভয়ার্ত আর চিন্তিত স্বরে বলে উঠলেন, ‘‘আপনারা কোথায়? এখনই গাড়ির কাছে চলে আসুন।’’ আমরা তড়িঘড়ি গাড়িতে গিয়ে উঠলাম। তত ক্ষণে দীর্ঘ যানজট শুরু হয়ে গেছে। ফলে গাড়ি ঘোরাতেও পারছিলেন না মুদাসির। একটা অপরিসর গলি ধরে নিলেন। দেখছিলাম, সওয়ারির অপেক্ষা না করেই ঘোড়াগুলোকে নিয়ে দ্রুত ফিরে যাচ্ছেন তাদের সহিসেরা। উল্টো দিকে যাওয়া সব গাড়ির চালককে তখন মুদাসির ‘ওয়াপস ওয়াপস’ বলতে বলতে এগোচ্ছেন। নিজেদের মধ্যে স্থানীয় ভাষায় কিছু কথাও বলে নিচ্ছেন। যার কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। শুধু কানে আসছে ‘বৈসরন’। বুঝলাম ওখানেই কিছু হয়েছে।

এ দিকে ওই অপরিসর গলিতে তখন কমান্ডো বোঝাই সেনাবাহিনীর গাড়ি ঢুকে পড়েছে। বড় রাস্তাতে উঠেও দেখলাম, চারদিকে সেনাবাহিনীর গাড়ি আর কমান্ডো। এর পরে হোটেলে এসে দেখি, মূল ফটক বন্ধ বিকেলেই। কেউ মুখ না খুললেও কিছু বুঝতে বাকি থাকল না। মুদাসির আমাদের নামিয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। বললেন, ‘‘আপনাদের নিরাপদে হোটেলে পৌঁছে দেওয়াটা আমার দায়িত্ব। আর বেরোবেন না। কারও সঙ্গে কথা বলবেন না। কাল আমি ফোন করে সময় বলে দিলে তবেই শ্রীনগরের জন্যে বেরোবেন।’’

মুদাসিরের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ভেবে চলেছি ওঁদের দায়িত্ববোধের কথা। পর্যটকদের সঙ্গে এ সব নিয়ে ওঁরা আলোচনায় অনাগ্রহী। তবে অতিথিদের রক্ষা করতে বুক পেতে দিচ্ছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন