বিদেশি প্রধানমন্ত্রীর মুখেও এ বার ‘নতুন ভারত’, সৌজন্যে শিনজো আবে

উত্তরপ্রদেশের জয়ের পরেই মোদীর মুখ থেকে বেরিয়েছিল শব্দগুচ্ছটি। ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বছরে ‘নতুন ভারত’ গঠন। যেন ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন জয়টি তাঁর হাতের মুঠোয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:১৩
Share:

একসঙ্গে: বুলেট ট্রেন প্রকল্পের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। বৃহস্পতিবার অমদাবাদে। ছবি: পিটিআই।

ছ’মাস ধরে নিজে বলছেন। বারবার বলতে বলতে এখন বিজেপির ছোট-বড়-মাঝারি নেতার মুখেও এক বুলি।

Advertisement

আর আজ ভারতের গণ্ডি পেরিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েও বলিয়ে নিলেন নরেন্দ্র মোদী।

উত্তরপ্রদেশের জয়ের পরেই মোদীর মুখ থেকে বেরিয়েছিল শব্দগুচ্ছটি। ২০২২ সালে স্বাধীনতার ৭৫ বছরে ‘নতুন ভারত’ গঠন। যেন ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন জয়টি তাঁর হাতের মুঠোয়। এক অনায়াস জয়। তাই সরকারের সব কর্মকাণ্ড এখন ২০১৯ সালের আরও তিন বছর পর ২০২২-কে ঘিরেই। ছ’মাস ধরে সব মঞ্চে সে কথাই বলছেন তিনি। বিজেপির নেতা-মুখ্যমন্ত্রী, এমন কী আমলাদের কানেও পুরে দিয়েছেন পাঁচ বছর পর ‘নতুন ভারত’ গঠনের মন্ত্র। আজ সফল হলেন এক বিদেশি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েও এই কথা বলাতে।

Advertisement

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে নিয়ে কাল থেকেই মেতেছেন মোদী। গুজরাতের ভোটের আগে দিল্লি এড়িয়ে দু’দিনের ঠাসা কর্মসূচি হলো আমদাবাদেই। জাপানি সহযোগিতায় আজ সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো আমদাবাদ-মুম্বই বুলেট ট্রেনের কাজ। সে মঞ্চেই মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস প্রথম কথাটি পাড়লেন। এই কাজ পুরো হলে ট্রেনে চেপে যেন প্রধানমন্ত্রী মুম্বই আসেন। আরও এক ধাপ এগোলেন মোদী নিজেই। বললেন, ‘‘মনে ইচ্ছে ও স্বপ্ন আছে, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির সময়ে ২০২২-২৩ সালে যখন এর কাজ শেষ হবে, তখন আমি আর শিনজো আবে বুলেট ট্রেনে যাত্রা করে এর উদ্বোধন করব।’’

ঝড়ের গতি

শুরু ১৯৬৪ সালে। প্রথম ট্রেন টোকিও এবং ওসাকার মধ্যে।

জাপানের হাত ধরেই ভারতের প্রথম বুলেট ট্রেন

প্রকল্পটি মুম্বই-অমদাবাদের মধ্যে। ইউপিএ আমলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

বিনিয়োগকারীর অর্থ উঠে আসার সম্ভাবনা, তাই বাছা হয়েছে এই রুট।

মোট দূরত্ব ৫০৮ কিমি। সময় লাগবে ২ ঘণ্টা ৫৮ মিনিট। ১০-১২টি স্টেশনের ভাবনা।

২১ কিমি সুড়ঙ্গ, যার ৭ কিমি আরব সাগরের তলা দিয়ে।

দশ কামরার ট্রেন। যাত্রী সংখ্যা ৭৫০ জন।

এলিভেটেড করিডর। সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩৫০ কিমি।

খরচ ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা। জাপান দিচ্ছে ৮৮ হাজার কোটি।

কাজ শেষ করতে হবে ১৫ অগস্ট, ২০২২ সালের মধ্যে।

টিকিটের দাম ২৫০০-৩০০০ টাকা রাখার সম্ভাবনা।

পরের প্রকল্প হতে পারে দিল্লি-কলকাতার মধ্যে। যা ছুঁয়ে যাবে মোদীর কেন্দ্র বারাণসীকে।

শিনজো আবে যখন বক্তৃতা করতে উঠলেন, শুধু ২০২২ সালটি উচ্চারণ করেননি। কিন্তু মোদীর ‘নতুন ভারত’ এর কথা বললেন। বললেন, ‘‘আশা করি, কয়েক বছর পরে মুম্বই-আমদাবাদ পথে ট্রেনে চেপে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে বাইরে প্রকৃতির দৃশ্য দেখব।’’ এখানেই থামলেন না। আবের কথায়, ‘‘আমার প্রিয় বন্ধু নরেন্দ্র মোদী এক দূরদর্শী নেতা। দু’বছর আগে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দ্রুতগামী ট্রেন আনার। আর ‘নতুন ভারত’ নির্মাণ করার। আমি, জাপান সরকার ও জাপানের সংস্থারা মোদীর সিদ্ধান্তে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি।’’

আরও পড়ুন: ৩৩ ঘণ্টার ‘দুঃস্বপ্ন’ কাটিয়ে গন্তব্যে বৃদ্ধ

শিনজো আবে যখন এত সব কথা বলছেন, মঞ্চে বসে মুখে হাসি নিয়ে তালি দিলেন মোদী। আর বিজেপি বলছে, এই হলো নরেন্দ্র মোদীর সাফল্য। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও স্বীকৃতি পাচ্ছে তাঁর স্বপ্ন। কিন্তু কংগ্রেস বলছে, বুলেট ট্রেন আনার কাজ শুরু হয়েছিল মনমোহন সিংহের আমলে। ২০১৩ সালে মনমোহন সিংহ ও শিনজো আবের যৌথ বিবৃতিতেই তা রয়েছে। আর সেই ট্রেন নিয়েই ভোটের আগে গুজরাতের রাজনীতি করছেন মোদী। খোদ রাজধানী দিল্লিতে রাজধানী এক্সপ্রেস আজ সকালেই বেলাইন হয়েছে, তাতে বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement