পুত্রবধূকে নিজের একটি কিডনি দান করতে চান প্রৌঢ় হেমদাস বৈষ্ণব।—প্রতীকী চিত্র।
শুধু একটা ছাড়পত্র প্রয়োজন। আর সেটা জোগাড় করতেই হাসপাতালের এ মাথা থেকে ও প্রান্ত অবধি দৌড়ে বেড়াচ্ছেন প্রৌঢ় হেমদাস বৈষ্ণব। ছাড়পত্রটা পেলেই যে তাঁর পুত্রবধূ সুস্থ হয়ে উঠবেন, এমনটা নয়। তবুও, ওটার বড়ই প্রয়োজন এই মুহূর্তে।
রাজস্থানের বাসিন্দা হেমদাসের একমাত্র ছেলে অশোকের স্ত্রী বেদামি কিডনির সমস্যায় ভুগছেন গত এক বছর ধরে। সম্প্রতি চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। পুত্রবধূকে নিজের একটি কিডনি দান করতে চান ওই প্রৌঢ়। কিন্তু, আইন অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র প্রয়োজন। ওই ছাড়পত্র মেলার পর বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা তো রয়েইছে। সে সব পরীক্ষা ঠিকঠাক উতরোতে পারলে তবেই কিডনি দান। আপাতত সেই ছাড়পত্র জোগাড়েই কালঘাম ছুটছে হেমদাসের।
কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা জানার পর বেদামি প্রথমে তাঁর বাবা-মাকে জানান। কারণ চিকিত্সকেরা জানিয়েছিলেন, যে কারও কিডনি নেওয়া সম্ভব নয়। যাঁর কিডনি প্রতিস্থাপিত হবে, প্রতিস্থাপনের আগে রক্তের গ্রুপ-সহ অনেক কিছুই বেদামির সঙ্গে মিলে যাওয়া প্রয়োজন। যাতে, প্রতিস্থাপনের পর তাঁর শরীরের সঙ্গে ‘নয়া’ অঙ্গটি খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের মতো কোনও নিকট আত্মীয়ের কিডনি নেওয়ার কথা প্রথমে ভাবা উচিত। কারণ, সন্তানের সঙ্গে তাঁদের কিডনির বিভিন্ন বিষয়ে ‘ম্যাচিং’ অনেক ক্ষেত্রেই ভাল মতো হয়ে থাকে। সেই মতো বেদামি তাঁর বাবা-মাকে কিডনি দানের কথা বলেন। কিন্তু, তাঁরা মেয়ের সেই আবেদনে সাড়া দেননি। শরীর থেকে দু’টি কিডনির একটি বাদ পড়লে তাঁদের শরীরের হাল খারাপ হয়ে যাবে। এমনকী, বেদামির বোনও রাজি হননি।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির কনভয়ের দিকে হাত তুলে পুরস্কার
এর পর কার্যত ভেঙে পড়েন বছর আঠাশের ওই গৃহবধূ। গত চার মাস ধরে আমদাবাদের ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজ অ্যান্ড রিসার্চ হসপিটাল(আইকেডিআরসি)-এ তাঁর ডায়ালিসিস চলছে। একেই চিকিত্সার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন, তাঁর উপর ‘দাতা’ না-পাওয়ায় কার্যত দিশাহীন হয়ে পড়েন বেদামির ট্যাক্সিচালক স্বামী। ঠিক সেই সময়েই এগিয়ে আসেন অশোকের বাবা হেমদাস। নিজের সিদ্ধান্তের কথা চিকিত্সকদের জানিয়ে বলেন, তিনি তাঁর একটি কিডনি পুত্রবধূকে দান করতে চান। কিন্তু, মুখে বললে তো হবে না। প্রাথমিক ভাবে এই হেমদাসের এই ‘ইচ্ছা’য় চিকিত্সকদের ছাড়পত্র প্রয়োজন। তার পরে প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হবে। আপাতত সেই ছাড়পত্রের অপেক্ষাতেই রয়েছে বৈষ্ণব পরিবার।
কিডনি প্রতিস্থাপন।—প্রতীকী চিত্র।
কিন্তু পুত্রবধূর বাবা-মা যেখানে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, সেখানে শ্বশুরমশাই হিসাবে কেন এগিয়ে এলেন ওই প্রৌঢ়? হেমদাস জানিয়েছেন, পুত্রবধূ তো তাঁর পরিবারের মেয়ে। তাঁর সন্তানের স্ত্রী, দুই নাতির মা। কাজেই বেদামির জীবন বাঁচিয়ে তিনি আসলে তাঁর পরিবারের জীবনই বাঁচাতে চাইছেন। আর শ্বশুরমশাইয়ের এমন ইচ্ছের কথা শুনে চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি মা অসুস্থ বেদামি। তিনি জানিয়েছেন, হেমদাস তাঁর শ্বশুর নন, বাবাও নন, ভগবান।
গুজরাত স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা রাজ্যে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় আট হাজার কিডনি প্রতিস্থাপিত হয়েছে। কিন্তু, কোনও শ্বশুর তাঁর পুত্রবধূকে কিডনি দান করেছেন বা করতে চেয়েছেন— এমন নজির বিরল।