Manipur

‘দফায় দফায় গুলির শব্দ, চোখে আসছে আগুনের ঝলকানি, ইম্ফল নয়, মনে হচ্ছে ইউক্রেনে আছি’

কর্মসূত্রে মণিপুরে আমার যাতায়াত অনেক বছর ধরেই। সেখানে গন্ডগোল, বন্‌ধ, অবরোধ কম দেখিনি। কিন্তু এ বারের ব্যাপ্তি আর ভয়াবহতা যেন অন্য রকম!

Advertisement

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২৩ ০৭:৪৬
Share:

ইম্ফল থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে ফিরে ছেলের সঙ্গে সুজয় চক্রবর্তী। ছবি: পিটিআই

জানলার বাইরে, রাস্তায় দফায়-দফায় গুলি চলা ও বোমার শব্দ আসছে। চোখে আসছে আলোর ঝলকানি। ভারী সাঁজোয়া গাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে জনহীন সড়ক। সামনের গোটা পাহাড়টা জ্বলছে। কানে শুধুই বাজছে সাইরেনের শব্দ।

Advertisement

না, ইউক্রেন নয়, আমি বসে ছিলাম ইম্ফলে।

অবশ্য এত দিন টিভিতে ইউক্রেনের অনেকটা যেন এমন ছবিই দেখেছি।

Advertisement

কর্মসূত্রে মণিপুরে আমার যাতায়াত অনেক বছর ধরেই। সেখানে গন্ডগোল, বন্‌ধ, অবরোধ কম দেখিনি। কিন্তু এ বারের ব্যাপ্তি আর ভয়াবহতা যেন অন্য রকম!

ভাষাগত সমস্যা, সংস্কৃতির সমস্যা মণিপুরে থাকেই। ইম্ফল থেকে দূরে, কুকি এলাকার পাহাড়ে এক রকমের মানুষজন, নাগা এলাকায় অন্য রকম। কাজের স্বার্থে সকলের সঙ্গে আমায় ও আমার কোম্পানির লোকেদের সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়। অতীতে আমার এমন অভিজ্ঞতাও হয়েছে যে, টাকা চাইতে গেলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ভয় দেখানো হয়েছে।

অবশ্য, ধীরে ধীরে আগের মণিপুর অনেকটাই শান্ত হয়ে এসেছিল। রাত ৯টায় বৌ-বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় নিশ্চিন্তে ঘুরেছি। কর্মসংস্কৃতি উন্নত হয়েছিল। কিন্তু আপাত শান্ত একটা রাজ্য হঠাৎ কী ভাবে এমন রণক্ষেত্রে পরিণত হল বুঝতে পারছি না।

‘হঠাৎ’ বলাও ঠিক হবে না। এপ্রিলের শেষ থেকেই কুকি এলাকায় অশান্তি বাড়ছিল। অস্ত্র লুট হয়েছিল। কিন্তু কেন জানি না, পুলিশ-প্রশাসন সেই ভাবে সতর্কতা দেখায়নি। হাঙ্গামা যতক্ষণ না রাজধানী শহরে জাঁকিয়ে বসেছে, ততক্ষণ গা-ঝাড়া দিয়ে মাঠে নামেনি পুলিশ। কিন্তু তখন পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল। ইম্ফলে কুকি অধ্যুষিত একটা গোটা পাহাড়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল বৃহস্পতিবার রাতে।

গত দু’দিন ধরে মোবাইলে ইন্টারনেট বন্ধ। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সব ধরনের ইন্টারনেট সংযোগই কেটে দেওয়া হয়েছে। তাই অনেক খবর পাচ্ছি না। অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগেও সমস্যা হচ্ছে। এ দিকে শুক্রবার বিকেলে ছিল কলকাতা ফেরার বিমান। রাজ্য ছেড়ে পালাচ্ছেন অনেকেই। তাই আগামী কয়েক দিনের বিমানে কোনও টিকিটও নেই।

বিমানবন্দর যাওয়ার কোনও একটা ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য অনেককে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু সেনা বা পুলিশের কর্তারা ফোন ধরেননি, নেট বন্ধ থাকায় যোগাযোগও করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত আমার স্থানীয় অফিসের এক কর্মীর সৌজন্যে ডিএসপির সঙ্গে যোগাযোগ করা গেল। তাঁর চেষ্টাতেই একটা অটোয় কোনও মতে বিমানবন্দর পৌঁছতে পারলাম। বিমানবন্দরে একের পর এক বিমান আসছে সেনাদের নিয়ে। দীর্ঘ প্রতীক্ষা ও অনিশ্চয়তার পরে উড়ান ঘোষণা হল।

মেরি কম, শর্মিলা চানু, মীরাবাই চানুদের জ্বলন্ত রাজ্যকে পিছনে ফেলে কলকাতার উদ্দেশে উড়ল আমার বিমান। আশা করি, পরের বার শান্ত-সবুজ ইম্ফলে এসে নামব।

(লেখক একটি ওষুধ সংস্থার আধিকারিক)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement