সফি ত্রুডোর সঙ্গে জসপাল অটওয়াল। মুম্বইয়ের একটি অনুষ্ঠানে। ছবি এএনআই-এর টুইটার অ্যাকাউন্টের সৌজন্যে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ত্রুডোর ভারত সফর উপলক্ষে দিল্লিতে নৈশভোজের আয়োজন করেছে সে দেশের দূতাবাস। কিন্তু, বৃহস্পতিবারের ওই ভোজসভায় আমন্ত্রিত এক ব্যক্তিকে নিয়েই এই মুহূর্তে উত্তপ্ত কূটনৈতিক মহল।
কারণ, জসপাল অটওয়াল নামের ওই ব্যক্তি আসলে নিষিদ্ধ খলিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, তিনি ওই আন্দোলনের সময় একটি খুনের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত আসামীও বটে। গোটা ঘটনায় প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক।
সপ্তাহখানেক ধরে ত্রু়ডো সপরিবার ভারত সফর করছেন। কানাডার সংবাদমাধ্যম-সহ একটি প্রতিনিধি দল তাঁর সঙ্গে এসেছে। সেই দলেই রয়েছেন জসপাল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে জসপালের প্রকৃত পরিচয় নিয়ে লেখালিখি হতেই এ দিনের ভোজসভা থেকে তাঁর নাম বাদ দিয়েছেন দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। এমন এক জন ব্যক্তি কী ভাবে এ দেশে আসার ভিসা পেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
আরও পড়ুন
গরিব মরে, কেন ছাড় পায় ধনীরা, সুপ্রিম কোর্টে চড়া সওয়াল
এ দিন সকালে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী ত্রুডোকে প্রশ্ন করা হয় কেন তাঁর প্রতিনিধি দলে জসপালের মতো এক জন খলিস্তানি জঙ্গি রয়েছে? যদিও এর কোনও জবাব তিনি দেননি। গত মঙ্গলবারই মুম্বইতে একটি অনুষ্ঠানে জসপালকে দেখা গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী সফি ত্রুডোর সঙ্গে তাঁকে এক ফ্রেমে ছবি তুলতে দেখা গিয়েছে। এমনকী কানাডার এক মন্ত্রী অমরজিৎ সোহির সঙ্গেও ওই দিন তোলা তাঁর ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। | (_)
এ দিন সকালে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী ত্রুডোকে প্রশ্ন করা হয় কেন তাঁর প্রতিনিধি দলে জসপালের মতো এক জন খলিস্তানি জঙ্গি রয়েছে? যদিও এর কোনও জবাব তিনি দেননি। গত মঙ্গলবারই মুম্বইতে একটি অনুষ্ঠানে জসপালকে দেখা গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী সফি ত্রুডোর সঙ্গে তাঁকে এক ফ্রেমে ছবি তুলতে দেখা গিয়েছে। এমনকী কানাডার এক মন্ত্রী অমরজিৎ সোহির সঙ্গেও ওই দিন তোলা তাঁর ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। (_)
কিন্তু, এমন এক জন জঙ্গি কী ভাবে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে থাকতে পারে? ভারতীয় মিডিয়ার জবাবে ত্রুডোর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, এমন এক জন ব্যক্তিকে কোনও অনুষ্ঠানেই আমন্ত্রণ জানানো উচিত হয়নি। ওঁর আমন্ত্রণ বাতিল করা হয়েছে। কী করে এমনটা হল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের আরও সংযোজন, ওই ব্যক্তি ভারত সফররত প্রধানমন্ত্রীর সরকারি প্রতিনিধি দলের সদস্য নন। এমনকী, তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তাদের দাবি, এ ধরনের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে অনেক সময় কেউ কেউ ব্যক্তিগত খরচ এবং উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধানদের সফররত দেশে পৌঁছে যান। এটাও তেমন কোনও ঘটনা হবে।
আর এতেই প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে এমন এক জন জঙ্গি এ দেশে প্রবেশের অনুমতি পেল? কেন তাকে ভিসা দেওয়ার সময় সবটা খতিয়ে দেখা হল না? বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
কে এই জসপাল অটওয়াল?
নিষিদ্ধ সংগঠন ‘আন্তর্জাতিক শিখ যুব ফেডারেশন’-এর সদস্য ছিলেন অটওয়াল। সেটা ১৯৮৬ সাল। ভ্যাঙ্কুভারে ব্যক্তিগত সফরে গিয়েছিলেন প়ঞ্জাবের তৎকালীন মন্ত্রী মালকিয়াত সিংহ সিধু। সেখানে তাঁকে প্রকাশ্য রাস্তায় দু’বার গুলি করা হয়। কিন্তু, সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান সিধু। পরে যদিও দেশে ফিরে তিনি খুন হয়ে গিয়েছিলেন। সেই গুলি মামলায় অভিযুক্ত হন জসপাল। পরে দোষী সাব্যস্ত হন। তাঁকে ২০ বছর জেল খাটতে হয়। সাজা ঘোষণার সময় বিচারক ওই ঘটনাকে ‘জঙ্গি কার্যকলাপ’ বলে চিহ্নিত করেছিলেন। এই মুহূর্তে কানাডার রাজনীতিতে প্রভাবশালী হিসেবে জসপালের বেশ নামডাক।
গত শনিবার এ দেশে ত্রুডো এসে পৌঁছলেও আগামী কাল, শুক্রবার তিনি প্রথম দেখা করবেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। ত্রুডোকে এ দেশে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে যাননি প্রধানমন্ত্রী। এমনকী, গত কয়েক দিনে তাঁর কোনও কর্মসূচিতেই নেই মোদীর নাম। এর পিছনে কি কোনও কারণ রয়েছে? জানা যায়নি এ প্রশ্নেরও জবাব।
তবে, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ-সহ একটি অংশের দাবি, ত্রুডো আসলে খলিস্তান আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল। আর সে কারণেই তিনি জসপালের মতো ব্যক্তিদের প্রশ্রয় দেন। কিন্তু, তার থেকেই এখন অন্য প্রশ্নে উত্তাল কূটনৈতিক মহল। কী ভাবে এ দেশে আসার ছাড়পত্র মিলল জসপালের?