এক চিকিত্সক-সহ পুরো হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার নির্দেশ দিল করিমগঞ্জের এডিজেএম আদালত। চিকিৎসকের অপরাধ, তিনি গ্রেফতারি পরোয়ানা এড়িয়ে চলা এক বিধায়কের চিকিৎসা করেছেন। আর হাসপাতালের অপরাধ, সেই বিধায়ককে ভর্তি করে চিকিত্সা করানো হয়েছে। গ্রেফতারি পরোয়ানা এড়িয়ে চলা সেই ব্যক্তি হলেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা দক্ষিণ করিমগঞ্জের বিধায়ক সিদ্দেক আহমদ।
জনৈক রেজাউল করিমের দায়ের করা একটি মারধরের মামলায় নিলামবাজার পুলিশ তত্কালীন মন্ত্রী তথা বিধায়ক সিদ্দেক আহমদকে ‘সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে’ অব্যাহতি দেয়। কিন্তু রেজাউল করিম পুলিশের চার্জশিটকে চ্যালেঞ্জ করে ফের আদালতের দ্বারস্থ হন। করিমগঞ্জের এডিজেএম আদালত সিদ্দেক আহমদকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু দক্ষিণ করিমগঞ্জের বিধায়ক সিদ্দেক আহমদ দু’-দু’বার আদালতের সমন উপেক্ষা করেন। ফলে আদালত বিধায়কের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। অভিযোগ, এই সময় আদালতের জারি করা ‘রোভিং ওয়ারেন্ট’ এড়াতে সিদ্দেক ‘শারীরিক অসুস্থতা’-র জন্য গুয়াহাটির হায়াত হাসপাতালে ভর্তি হন। কেন সিদ্দেক আহমদকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পুলিশ আদালতকে সেই তথ্য জানায়। একই সঙ্গে হাসপাতালের তরফে, চিকিত্সকের সই করা একটি রিপোর্টও পুলিশ আদালতে জমা দেয়। কিছু হলেই রাজনীতিকদের এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারক। তিনি সংশ্লিষ্ট চিকিত্সক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আদালতে ডেকে পাঠান। একই সঙ্গে যেভাবে হোক, যেখান থেকে হোক অভিুক্ত বিধায়ককে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করানোর জন্য পুলিশকেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
আজ আদালতে হাজির হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিত্সক বিশ্বজিত্ পাল। বিচারকের প্রশ্নের জবাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ৫ এপ্রিল থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত সিদ্দেক আহমদ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। উল্লেখ্য, ৭ এপ্রিল ছিল সিদ্দেকের আদালতে হাজিরার তারিখ। এডিজেএম এসএসএ রহমানের আদালতে হাজির হয়ে কেন সিদ্দেককে হাসপাতালে ভর্তি
করতে হয়েছিল, আজ তার ব্যাখ্যা দেন চিকিত্সক। চিকিত্সকের বক্তব্য মেনে নিতে পারেননি বিচারক। আদালতের জারি করা ‘রোভিং ওয়ারেন্ট’ রয়েছে জেনেও হাসপাতালে ভর্তি করানোর সুযোগ করে দেওয়ার অপরাধে চিকিত্সক বিশ্বজিত্ পালের ডাক্তারি রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার নির্দেশ দেন বিচারক। একই সঙ্গে হায়াত হাসপাতালের লাইসেন্সও বিচারক বাতিল করার সুপারিশ করেন বলে আইনজীবী রশিদ আহমদ চৌধুরী, কবীর আহমদ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান।
উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে সিদ্দেক আহমদ গৌহাটি হাইকোর্টে ওই গ্রেফতারি পরোয়ানার বিরুদ্ধে আবেদন জানান। হাইকোর্ট গ্রেফতারির উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে জানিয়ে দেয়, ২৩ এপ্রিল করিমগঞ্জ আদালতে তাঁকে উপস্থিত হতে হবে।