আদালতে বাবা-ঠাকুরমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিল নাবালক। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ছোট থেকে বাবা-মায়ের অশান্তি দেখে বড় হয়েছে ছেলেটি। দেখেছে, সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে কী ভাবে ট্রাউজার্স থেকে বেল্ট খুলে মাকে পেটাতেন বাবা। ৫ বছর আগে মায়ের ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’র ঘটনা খুন হিসাবে চিহ্নিত হল সেই নাবালকের বয়ানেই। বস্তুত, তার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মাকে খুনের ঘটনার ৫ বছর পর শাস্তি পেলেন বাবা এবং ঠাকুরমা। আদালত তাঁদের দু’জনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে।
মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়রের বাসিন্দা সিকরওয়ার পরিবার। রাকেশ সিকরওয়ার সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ২০২০ সালের ১১ জুলাই তাঁর স্ত্রী অনুরাধা সিকরওয়ারের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়। রাকেশ দাবি করেছিলেন ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন স্ত্রী। কিন্তু তাঁদের নাবালক পুত্র আদালতকে জানাল সত্যি ঘটনা। বস্তুত, ৭ বছরের ছেলেটি ছিল মায়ের রহস্যমৃত্যুর একমাত্র সাক্ষী। আদালতকে সে জানায়, দুর্ঘটনা নয়, মাকে খুন করেছেন বাবা-ঠাকুরমা। ছেলেটি বলে, ‘‘সে দিন মাকে ছাদে নিয়ে গিয়ে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল বাবা আর ঠাকুরমা।’’
নাবালক যখন সাক্ষ্য দিচ্ছে, তাকে পরীক্ষা করতে বেশ কিছু কথা বলেন বিচারক। ছেলেটির কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাবা-মা তাকে কতটা ভালবাসত, ঠাকুরমা স্নেহ করেন কি না। তার পর বিচারক বিশাল অখণ্ড ছেলেটির কাছে জানতে চায় সত্য ও মিথ্যা নিয়ে তার ধারণা কী? মাঝেমাঝে মিথ্যা তো বলাই যায়? ছেলেটি জবাব দেয়, ‘‘কখনও না। সর্বদা সত্যি বলতে হয়।’’ বিচারক আবার বলেন, ‘‘এক-দু’টো মিথ্যা বললে কী ক্ষতি? বলাই তো যায়?’’ ছেলেটি বলে, ‘‘না! কখনও কোনও অবস্থায় মিথ্যা বলতে নেই।’’ শেষমেশ একমাত্র সাক্ষীর বয়ান এবং তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আদালত দোষী সাব্যস্ত করে প্রাক্তন সেনাকর্মী এবং তাঁর মাকে।
সরকারি পক্ষের আইনজীবী আদালত জানান, অনুরাধা গার্হস্থ্য হিংসার শিকার। নিত্যদিন তাঁর উপর স্বামী এবং শাশুড়ি শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করতেন। অনুরাধা এবং রাকেশের একমাত্র সন্তানের বয়ান তুলে ধরা হয় আদালতে। সেখানে ছেলেটি জানিয়েছিল, মাকে বেল্ট দিয়ে পেটাতেন বাবা। চড়-থাপ্পড় তো ছিলই। সে জানায়, তাকে ঘর থেকে বার করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে মাকে মারধর করতেন বাবা।
অনুরাধার দেহ উদ্ধারের পর শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন ছিল। সরকারি আইনজীবী সওয়াল করেন, ছাদ থেকে ঠেলে ফেলার আগে অনুরাধাকে মারধর করা হয়েছিল, তারই প্রমাণ ওই সমস্ত দাগ। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, মূলত পণের দাবিতেই অত্যাচার হত ওই বধূর উপরে।