অলঙ্কারণ: তিয়াসা দাস
‘৪৫ বছরে দেশে কর্মসংস্থানের হাল সবচেয়ে খারাপ’। সরকারি সমীক্ষার রিপোর্ট ফাঁস হয়ে এমন তথ্য সামনে চলে আসায় বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছিল মোদী সরকার। বিরোধীদের বেকারত্বের তির সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল শাসক দলকে। এ বার ভোটের মধ্যেই চাকরি খোয়ানো নিয়ে এমন এক সমীক্ষার ফল সামনে এল, যা মোদী সরকারের অস্বস্তি আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। নতুন সমীক্ষায় উঠে এসেছে, নোটবন্দির পর থেকে গত দু’বছরে প্রায় ৫০ লক্ষ পুরুষ চাকরি হারিয়েছেন।মহিলাদের ধরলে স্বাভাবিক ভাবেই এই সংখ্যা আরও অনেকটাই বেড়ে যাবে, দাবি সমীক্ষায়।
মঙ্গলবারবেঙ্গালুরুর আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দ্য সেন্টার ফর সাস্টেইনেবল এমপ্লয়মেন্ট’ একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ‘স্টেট অব ওয়ার্কিং ইন্ডিয়া-২০১৯’ নামে ওই রিপোর্টে যদিও বলা হয়েছে, নোটবন্দি এবং চাকরি খোয়ানোর মধ্যে কোনও সংযোগ স্থাপন করা না গেলেও, এটা স্পষ্ট যে, চাকরি খোয়ানোর প্রবণতা বেড়েছে ২০১৬ সালের নভেম্বরের পর থেকে। সমীক্ষাটি করেছেনআজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপক আনন্দ শ্রীবাস্তব, রোসা আব্রাহাম এবং অমিত ভোঁসলে।
চাকরি খোয়ানোর হারের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের হারের তুল্যমূল্য আলোচনাও করা হয়েছে নতুন সমীক্ষায়। তাতে উঠে এসেছে, ২০১১ সাল থেকেই কর্মসংস্থানের হার কমতে থাকে। নতুন এই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ নতুন শতাব্দীর প্রথম দশকে বেকারত্বের হার ছিল ২ শতাংশের উপরে। ২০১১ সালে সেটা সেটা বেড়ে হয় ৩ শতাংশের বেশি। ৫ শতাংশের উপরে ছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত। কিন্তু নোটবন্দির পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বরের পর এই হার ৬ শতাংশেরও উপরে গিয়ে পৌঁছয়।
আরও পডু়ন: ভেলোরের পরও শিক্ষা হয়নি, ভোটের মুখে তামিলনাড়ুতে ফের বিলির জন্য রাখা টাকা উদ্ধার
আরও পডু়ন: ইমরানের মন্তব্য কংগ্রেসের ‘খেল’, অভিযোগ নির্মলা সীতারমণের
সমীক্ষক তিন অধ্যাপকের দাবি, নোটবন্দির পর পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের উপরই চাকরিতে কোপ পড়েছে বেশি। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘সাধারণ ভাবে পুরুষদের চেয়ে মহিলারা বেশি ভুক্তভোগী। মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের সংখ্যা যেমন বেশি, তেমনই চাকরিতে অংশগ্রহণের হারও কম।’’রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, অসংগঠিত ক্ষেত্রে নোটবন্দির প্রভাব বেশি পড়েছে। সাধারণত, অসংগঠিত ক্ষেত্রে কম শিক্ষিতরা বেশি চাকরি করেন, এবং সংগঠিত ক্ষেত্রে ছবিটা উল্টো। এই সূত্রেই সমীক্ষায় দাবি, নোটবন্দির ফলে অল্প শিক্ষিতদের চাকরিতে বেশি কোপ পড়েছে।
কিন্তু নতুন সমীক্ষার ভিত্তি কি? পরিসংখ্যান মন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশন (এনএসএসও) নিয়মিত ব্যবধানে কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব নিয়ে সমীক্ষা (পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে) করে। কিন্তু এনএসএসও-র সেই সমীক্ষার তথ্য পাওয়া যায় না। এই সংক্রান্ত তথ্যের একমাত্র বিকল্প সেন্টার ফর মনিটরিং দি ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই)। এই সরকারি সংস্থাটি প্রতি চার মাস অন্তর সমীক্ষা করে। সেই সমীক্ষার তথ্য (ডেটা) থেকে ১ লক্ষ ৬০ হাজার বাড়ির কর্মসংস্থানের তথ্যকে মূল ভিত্তি হিসেবে নিয়েছেন তাঁরা। তার পর সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।