এক পদে একই পেনশন

ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে একশো দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীতে ‘এক পদ, এক পেনশন’ চালু হবে। মোদী সরকারের এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তা না হওয়ায় যন্তর মন্তরে প্রায় তিন মাস ধরে অনশন, বিক্ষোভ চালাচ্ছেন প্রাক্তন সেনাকর্মীরা। চাপের মুখে শনিবার ‘এক পদ, এক পেনশন’ চালুর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল সরকার। নয়াদিল্লি থেকে প্রেমাংশু চৌধুরীভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে একশো দিনের মধ্যে সেনাবাহিনীতে ‘এক পদ, এক পেনশন’ চালু হবে। মোদী সরকারের এক বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও তা না হওয়ায় যন্তর মন্তরে প্রায় তিন মাস ধরে অনশন, বিক্ষোভ চালাচ্ছেন প্রাক্তন সেনাকর্মীরা। চাপের মুখে শনিবার ‘এক পদ, এক পেনশন’ চালুর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল সরকার। নয়াদিল্লি থেকে প্রেমাংশু চৌধুরী

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩০
Share:

থামবে অনশন। খুশি প্রাক্তন ফৌজিদের পরিজনেরাও। যন্তর মন্তরে শনিবার। ছবি: পিটিআই।

• ‘এক পদ, এক পেনশন’ বিষয়টি কী?

Advertisement

অবসর যখনই হোক, একই মেয়াদ চাকরি করে একই পদ থেকে অবসর নিলে একই পেনশন।

Advertisement

• মোদী সরকার কী করল?

সিদ্ধান্ত নিল ২০১৪-র ১ জুলাই থেকে এ’টি কার্যকর হবে। বকেয়া পেনশন সমান ৪টি কিস্তিতে দু’বছরে মিটিয়ে দেওয়া হবে। যুদ্ধে নিহত জওয়ানদের স্ত্রী ও বিধবারা বকেয়া পাবেন এক কিস্তিতে।

• সেনাদের ক্ষোভ কী নিয়ে?

মুল ক্ষোভ দু’টি।

Ӫ সাধারণ সরকারি চাকুরেদের থেকে প্রাক্তন ফৌজিদের পেনশন কম।

Ӫ অসাম্য। অবসরের সময় ফৌজিদের যে বেতন থাকে ও সেই সময় যে বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর থাকে, সেই অনুযায়ী পেনশন ঠিক হয়। ফলে একই মেয়াদ চাকরি করে একই পদ থেকে অবসর নিলেও পেনশন এক-এক রকম হয়।

• সেনা-পেনশন কেন কম?

কারণ, দু’টি।

Ӫ সাধারণ সরকারি চাকুরেদের থেকে কম বয়সে অবসর নিতে হয়।

Ӫ শেষ মাসের বেতনের নিরিখে পেনশন ঠিক হয় বলে পেনশনও কম হয়।

• আগে অবসর কেন?

সাধারণ সরকারি চাকরির তুলনায় সেনার চাকরিতে সীমান্ত বা দুর্গম এলাকায় কাজ করতে হয়।

• আগে অবসরে ক্ষতি কী?

ফৌজিরা যে বয়সে অবসর নেন, তখন সংসার চালানোর খরচ যথেষ্ট। অথচ পেনশন অল্প। নতুন চাকরি বা ব্যবসা শুরু করাও সহজ নয়।

• অসাম্য হয় কী ভাবে?

Ӫ যত বার নতুন বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর হয়, তত বারই ফৌজি-পেনশনে অসাম্য বাড়ে।

Ӫ ষষ্ঠ বেতন কমিশনের আগে ২০০৬-এ যে মেজর জেনারেল অবসর নিয়েছেন, তাঁর পেনশন ৩০,৩০০ টাকা। কিন্তু তাঁর থেকে নিচু পদের কর্নেল ২০১৫-য় অবসর নিয়ে পেনশন পাবেন ৩৪,১০০ টাকা।

• প্রশ্নটা কি মর্যাদারও?

Ӫ পদ বা ‘র‌্যাঙ্ক’ নিয়ে ফৌজিরা খুবই আবেগপ্রবণ। কারণ, রাষ্ট্রপতি তাঁদের এই পদে ভূষিত করেন।

Ӫ অবসরের পরেও ফৌজিরা বুক চিতিয়ে নিজেদের ‘রিটায়ার্ড মেজর জেনারেল’ বা ‘রিটায়ার্ড কর্নেল’ বলে পরিচয় দিতে ভালবাসেন। Ӫ তাই পদের ক্ষেত্রে অসাম্য তাঁদের কাছে সম্মানের প্রশ্ন।

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন

• পেনশনের হার এখন কী ভাবে ঠিক হবে?

Ӫ ২০১৩-য় কোনও একটি পদে অবসর নেওয়া সেনাকর্মীদের প্রাপ্য সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন পেনশনের গড় করে নতুন পেনশন ঠিক হবে।

Ӫ যারা বেশি পাচ্ছেন, তাঁদের পেনশন কমবে না।

Ӫ পাঁচ বছর অন্তর নতুন করে পেনশনের হার পর্যালোচনা ও সংশোধন করা হবে।

• এর আর্থিক দায় কতটা?

Ӫ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের দাবি, শুধু বকেয়া পেনশন মেটাতেই দু’বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা লাগবে।

Ӫ প্রতি বছর বাড়তি বোঝার পরিমাণ ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা।

Ӫ প্রতি বার সংশোধনে খরচ ক্রমেই বাড়বে।

• বিদেশে কী এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে?

Ӫ ব্রিটেনে শেষ মাসের বেতনের নিরিখেই পেনশন দেওয়া হয়। অন্য অনেক দেশেও তাই হয়।

Ӫ তবে আমেরিকা ও অন্য দেশে পেনশন ঢের বেশি।

Ӫ পেনশনের বিপুল চাপ কাটাতে আমেরিকা, ইজরায়েল, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে প্রাক্তন ফৌজিদের পুলিশ বা অন্য কাজে নিয়োগ করা হয়।

Ӫ ভারতে পরবর্তী নিয়োগে শুধু প্রাক্তন সমরকর্মীরা কিছুটা ছাড় পান।

• এক পদ এক পেনশন কি আগে ছিল?

Ӫ ১৯৭৩-র আগে এক পদ এক পেনশনই চালু ছিল সেনাবাহিনীতে।

Ӫ ইন্দিরা গাঁধীর জমানায় তৃতীয় বেতন কমিশনের পর সেই ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়।

Ӫ সেই ক্ষোভ জমেছে চার দশক ধরে।

Ӫ আগুনে ঘি পড়ে ২০০৮-এ। ষষ্ঠ বেতন কমিশন এক পদ এক পেনশনের দাবি পত্রপাঠ খারিজ করে দেয়।

• নতুন করে বিতর্ক কবে থেকে?

Ӫ লোকসভা ভোটের আগে থেকে। ফৌজিদের মন জিততে নরেন্দ্র মোদী এক পদ, এক পেনশনের প্রতিশ্রুতি দেন।

Ӫ তড়িঘড়ি ইউপিএ ঘোষণা করে, তাঁরাও নীতিগত ভাবে তৈরি।

Ӫ ভোটের আগে অন্তর্বর্তী বাজেটেই বরাদ্দ হয় ৫০০ কোটি টাকা।

Ӫ ভোটের পরে অরুণ জেটলি বরাদ্দ করেন ১ হাজার কোটি টাকা।

Ӫ দাবি ওঠে, এই নীতি পুরোপুরি চালু হোক।

• মোদী সরকার এত দিন টালবাহানা করছিল কেন?

Ӫ বিপুল আর্থিক বোঝা। টাকা জোগাবে কে!

Ӫ ২৫ লক্ষ সেনাকর্মীর পেনশনের নতুন করে হিসেব কষাটা প্রশাসনিক ভাবেও বেশ চাপের কাজ।

Ӫ পুরনো জওয়ানদের তথ্য কম্পিউটারেও নেই।

Ӫ আইনি জটিলতার আশঙ্কা।

• এখনই এই ঘোষণা কেন?

Ӫ সামনে বিহার ভোটের অগ্নিপরীক্ষা। আগামী সপ্তাহে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গেলে মাস তিনেক ঝুলে থাকবে বিষয়টি। আর আগে ঘোষণা করলে বিজেপি ভোটে হাতিয়ার করতে পারবে বিষয়টিকে।

• সরকার কি নিশ্চিন্ত?

একেবারেই না। বরং উল্টো।

Ӫ অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির চিন্তা, অর্থ জোগাবেন কোথা থেকে।

Ӫ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরের চিন্তা, নতুন ব্যবস্থার প্রশাসনিক দায়ভার কম নয়।

Ӫ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের চিন্তা, সিআরপিএফ, বিএসএফ-এর মতো আধাসেনাতেও এ বার একই দাবি ওঠার সম্ভাবনা প্রবল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement