২০২০ সাল ভারতের দারিদ্রে তলিয়ে যাওয়ার বছর। প্রতীকী ছবি।
২০২০ সাল অতিমারির বছর, ২০২০ সাল ভারতের দারিদ্রে তলিয়ে যাওয়ার বছর। অন্তত বিশ্ব ব্যাঙ্কের বুধবারের রিপোর্ট তাই-ই বলছে। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি তথা সিএমআইই নামের একটি সংস্থার সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, ২০২০ সালে দারিদ্রসীমার নীচে পা রেখেছেন কমপক্ষে ৫.৬ কোটি মানুষ। মূলত বাড়ি বাড়ি গিয়ে সমীক্ষার মাধ্যমেই পাওয়া গিয়েছে এই তথ্য।
যদিও সংস্থাটির প্রাপ্ত তথ্যের চূড়ান্তকরণ এখনও বাকি, তা-ও নিজেদের রিপোর্টে সেই তথ্য ব্যবহার করেছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। ‘পভার্টি অ্যান্ড শেয়ার্ড প্রসপারিটি ২০২২’ শীর্ষক ওই রিপোর্টে এই তথ্যের মাধ্যমে হিসাব কষা হয়েছে, কতখানি দারিদ্রের সম্মুখীন হয়েছেন ভারতীয়রা। বিশ্বব্যাঙ্কের দাবি, ২০১১ সালের পরে সরকারি ভাবে দেশের দারিদ্রের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেনি ভারত, কিন্তু সিএমআইই-র তথ্যের মাধ্যমে সেই অভাব পূরণ করা সম্ভব হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ডের একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয় ২০২০ সালে ২.৩ কোটি মানুষ দারিদ্রের সম্মুখীন হয়েছে, কিন্তু বর্তমান রিপোর্ট অনুসারে সেই সংখ্যাটি কমপক্ষে ৫.৬ কোটি। গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছিলেন অর্থনীতিবিদ সুরজিৎ ভল্ল, করণ ভাসিন ও অরবিন্দ ভিরমানি। ভল্লা বর্তমানে আইএমএফের এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর।
২০১৭ সালে একটি গবেষণায় বিশ্ব ব্যাঙ্কের তরফে ধারণা করা হয়েছিল, ভারতের জনসংখ্যার ১০.৪ শতাংশ মানুষের আয় দৈনিক ১৫৫ টাকার কম, অর্থাৎ এঁরা তৎকালীন আন্তর্জাতিক দারিদ্রসীমার নীচে বাস করছেন। পরে সমীক্ষায় জানা যায়, ওই বছর আন্তর্জাতিক দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করেছেন ১৩.৬ শতাংশ মানুষ। ২০১৯-২০ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের রিপোর্ট অনুসারে ভারতীয় জনসংখ্যায় দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ১০ শতাংশ। গ্রামের জনসংখ্যার ১২ শতাংশ ও শহরের জনসংখ্যার ৬ শতাংশ দারিদ্রের কবলে পড়েছে। প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক দারিদ্রসীমার নতুন নিয়ম অনুসারে ১৭৫.৫০ টাকার কম আয় থাকলেই দারিদ্রসীমার নীচে ধরা হয়। অতিমারির ফলে সেই সংখ্যাটি অনেকটাই বেশি। তবে, ২০১১ সালের পরে গ্রামাঞ্চলের মানুষের সম্পত্তি ও আয় বেড়েছে, রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে এমনটাও।
পাশাপাশি, এ-ও জানা গিয়েছে যে ২০১৯ সালে গ্লোবাল এক্সট্রিম পভার্টি রেট বা বিশ্বের দারিদ্রের হার ছিল ৮.৪ শতাংশ। ২০২০ সালে অতিমারির ফলে তা দাঁড়িয়েছে ৯.৩ শতাংশে। সারা বিশ্বে দারিদ্রের কবলে পড়েছেন সাত কোটিরও বেশি মানুষ। রিপোর্টের শেষে বিশ্ব ব্যাঙ্কের গবেষকেরা দাবি করেছেন, অতিমারির ফলে কর্মসংস্থানে কোপ পড়েছে। সাধারণ মানুষের হাতে আয় ও সঞ্চয় কমেছে। সেই সঙ্গে প্রশাসনের নীতি যথাযথ ভাবে প্রয়োগ হয়নি। তাই ভারত-সহ বিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা এরকম টালমাটাল।