বন্যা কবলিত।
প্রসবের বেশি দিন বাকি ছিল না সজিতা জাবিলের। অ্যামনিয়োটিক থলি ফেটে গিয়ে কোচির আলুভার ২৫ বছরের এই তরুণীর বিপদ আরও বাড়ে। জলবন্দি সজিতাকে ওই অবস্থায় উদ্ধার করেছে নৌসেনা। আজ দুপুর দেড়টা নাগাদ তাঁকে নৌসেনার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার আধ ঘণ্টা পরেই পুত্রসন্তানের জন্ম দেন সজিতা। মা-ছেলে দু’জনেই এখন ভাল আছেন বলে জানিয়েছেন নৌসেনা মুখপাত্র। কেরলের বন্যা পরিস্থিতিতে সজিতার কাহিনিই আশার আলো দেখাচ্ছে। কারণ, মাত্র ন’দিনেই বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৩০০ পেরিয়েছে। আজ মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের টুইট, গত ১০০ বছরে এত ভয়ঙ্কর বন্যা দেখেনি কেরল। শনিবার পর্যন্ত ফের নতুন করে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। শুক্রবারের হিসেবমতো, মৃত ৩২৪। এখনও পর্যন্ত অন্তত দু’লক্ষ মানুষ গৃহহীন। ১৫০০টি অস্থায়ী শিবিরে ঠাঁই হয়েছে তাঁদের। ৮০টি বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের অভাব। পেট্রোল পাম্পে মিলছে না তেল।
এই পরিস্থিতিতে রাতে কেরলে পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি সূত্রে ফলাও করে বলা হচ্ছে, অটলবিহারী বাজপেয়ীর অন্ত্যেষ্টিতে সারা দিন ব্যস্ত থাকার পরে প্রধানমন্ত্রী কেরলের জন্য সময় বার করেছেন। এতেই বোঝা যায় উনি কতটা সক্রিয়। কংগ্রেস সূত্রের খবর, ঘনিষ্ঠ মহলে রাহুল গাঁধী জানিয়েছেন, তিনি গত চার-পাঁচ দিন কেরলে গিয়ে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে চাইলেও অনুমতি দেওয়া হয়নি, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সেখানে যাচ্ছেন। আজ টুইটে রাহুল লিখেছেন, ‘‘কেরল, কর্নাটকের কোদাগু বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত। আমাদের কর্মী এবং নেতাদের এখন কংগ্রেসের সেবামূলক মূল্যবোধ এবং ভালবাসা দেখানোর সময়। নিজের সবটুকু দিয়ে পাশে দাঁড়ান।’’
মুল্লাপেরিয়ার বাঁধের জলস্তর ১৪২ ফুট থেকে ১৩৯ ফুট করার জন্য জাতীয় সঙ্কট মোকাবিলা কমিটি (এনসিএমসি) এবং কেরলের তৈরি সাব কমিটিকে আজও বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় কেরল এবং তামিলনাড়ু সরকারকে বলেছেন, পুনর্বাসন এবং মুল্লাপেরিয়ারের জলস্তর কমানোর ক্ষেত্রে এনসিএমসি-র নির্দেশ মেনে চলতে। দুর্যোগ মোকাবিলা এবং পুনর্বাসনে কী কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, কেরল সরকারের কাছে তার রিপোর্ট চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘‘এটা সঙ্কট। প্রত্যেকে এই অবস্থায় সক্রিয় হন।’’
সন্তান কোলে সজিতা জাবিল। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া
মুখ্যমন্ত্রী আজ প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আরও হেলিকপ্টারের বন্দোবস্ত করতে বলেছেন। আলাপুঝা, এর্নাকুলাম, ত্রিশূর, পথমনথিট্টায় এখন পরিস্থিতি সব চেয়ে ভয়াবহ। এই সব জায়গায় রাস্তাঘাট পুরোপুরি জলের তলায়। ত্রিশূরের প্রায় গোটাটা ডুবে গিয়েছে। কোথাও কোথাও ত্রাণ শিবিরেও ঢুকে পড়ছে জল। চপার আর নৌকা পাঠানো হচ্ছে সে সব এলাকায়। কোচি থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার ছ’টি বিমান আজ, কাল, পরশু উড়বে তিরুঅনন্তপুরম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে।