ছবি: শাটারস্টক।
প্রায় দশ বছর ধরে ঘরে বন্দি থাকার পর তিন ভাই-বোনকে উদ্ধার করল একটি সমাজসেবী সংস্থা। ঘটনাটি গুজরাতের রাজকোটের।
রাজকোটের কিসানপাড়ায় থাকেন মেহতা পরিবার। সদস্য বলতে দুই ভাই, এক বোন এবং তাঁদের বয়স্ক বাবা। নবীন মেহতা সরকারি কর্মী। অবসর নিয়েছেন। মাসিক ৩৫ হাজার টাকা পেনশন পান। নবীনের স্ত্রী ১০ বছর আগে মারা গিয়েছেন। পরিবারে বর্তমানে চার সদস্য থাকলেও বাড়িতে শুধুমাত্র নবীনকেই দেখতে পেতেন পড়শিরা।
নবীন দোকান বাজার সবই করতেন। কিন্তু তাঁর ছেলেমেয়েদের বাইরে কেউ বেরোতে দেখতেন না। নবীনের বড় ছেলে ওকালতি করছিলেন। ছোট ছেলে বছর ঊনচল্লিশের। তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক এবং মেয়ে সাইকোলজিতে স্নাতকোত্তর। প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত।
এক প্রতিবেশীর কথায়, “নবীনকে প্রায়ই দেখা গেলেও ওঁর ছেলেমেয়েদের চোখে পড়ত না। ভাবতাম হয়ত বাইরে পড়াশোনা বা চাকরি করছে। কিন্তু তাঁরা যে নিজেদের ঘরবন্দি করে রেখেছেন, পাড়ার কেউই টের পাননি।” কৌতূহলবশত পাড়ারই এক ব্যক্তি রবিবার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে জানায় যে, মেহতা পরিবারের বাকি সদস্যদের বহু দিন বাইরে বেরতে দেখা যাচ্ছে না। খবর পেয়েই কিসানপাড়ায় ওই সংস্থার কর্মীরা হাজির হন মেহতা বাড়িতে। তখন বাড়িতে নবীন ছিলেন না। দরজা ধাক্কাধাক্কি করে না খোলায় শেষ পর্যন্ত ভেঙে ঢোকেন ওই সংস্থার কর্মীরা।
ঘরে ঢুকতেই কটূ গন্ধ পান তাঁরা। দেখেন চার দিকে ছড়িয়ে রয়েছে মল-মূত্র, পচা খাবার, আধখাওয়া খাবার। আর মেঝেতে পড়ে রয়েছেন কঙ্কালসার তিনটি মানুষ। গায়ে কোনও পোশাক ছিল না তাঁদের। তাঁদের মধ্যে দু’জন পুরুষ এবং এক জন মহিলা। সমাজসেবী সংস্থার কর্ণধার জানান, দু’জন পুরুষের চুল বেড়ে হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। দাড়ি বেড়ে যাওয়ায় মুখটাই ঠিক করে বোঝা যাচ্ছিল না।
নবীন জানান, ১০ বছর ধরে নিজেদের ঘরে বন্দি করে রেখেছিল ছেলেমেয়েরা। বার বার ওদের বোঝানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। কিন্তু কেন এ ভাবে নিজেদের ঘরবন্দি করলেন তাঁরা? এ প্রসঙ্গে নবীনের দাবি, ১০ বছর আগে তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছিল। প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিল ছেলেমেয়েরা। তার পর হঠাৎই নিজেদের ঘরবন্দি করল। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া এই পুরুষ এবং মহিলা কেউই মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন নন। তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।