হর্ষবর্ধন জালা।
গায়ে নীল স্যুট চাপিয়ে ছিপছিপে ছেলেটা ভাইব্রান্ট গুজরাতের মঞ্চে উঠতেই খানিক ঘোর লেগে গিয়েছিল দর্শকাসনে উপস্থিত তাবড় তাবড় ব্যবসায়ীদের। বুদ্ধিদীপ্ত আর আত্মবিশ্বাসী। তার বয়সী ছেলেমেয়েদের থেকে বেশ আলাদা। যে বয়সে ছেলে-মেয়েরা খেলাধূলা আর পড়াশোনা ছাড়া তেমন কিছু বোঝেই না, সে বয়সেই কি না টক্কর দিচ্ছে প্রযুক্তির বিশারদদের!
তাবড় ব্যবসায়ীকে পিছনে ফেলে দশম শ্রেণির এই পড়ুয়াই ৫ কোটি টাকার ল্যান্ডমাইন নিষ্ক্রিয়কারী ড্রোন তৈরির সুযোগ ছিনিয়ে নিল গুজরাত সরকারের থেকে। তার নাম হর্ষবর্ধন জালা। বয়স মাত্র ১৪ বছর। বাপুনগরের সর্বোদয় বিদ্যামন্দিরের দশম শ্রেণির ছাত্র। বৃহস্পতিবার ভাইব্রান্ট গুজরাতের মঞ্চে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ৫ কোটি টাকার ওই মউ স্বাক্ষর করেছে সে। গুজরাত সরকারের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি দফতরের সঙ্গে কাজ করে এই ড্রোন বানানোর কথা।
শুরুটা অবশ্য আজকের নয়, অনেক ছোট থেকেই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করেছে হর্ষবর্ধন। বাবা প্রদ্যুমানসিন নারোদার একটি প্লাস্টিক কোম্পানির অ্যাকাউন্ট দেখভাল করেন। মায়ের নাম নিশাবা। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হলেও হর্ষবর্ধনের ভাবনাচিন্তা যে খুবই উঁচুতে, তা বুঝতে খুব বেশি দিন লাগেনি বাবা-মায়ের। ছেলেকে পুরোদমে সমর্থনও জুগিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। ল্যান্ডমাইন নিষ্ক্রিয়কারী ড্রোন তৈরির পরিকল্পনাটা অবশ্য খুব বেশি দিনের নয়। ২০১৬ সালে সংবাদমাধ্যমে একটি খবর থেকে হর্ষবর্ধন জানতে পারে, কোনও এক এলাকায় প্রচুর সেনা নিজে হাতে ল্যান্ডমাইন নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন। এর পরই সে স্থির করে ফেলে এমন একটা ড্রোন তৈরি করবে, যা আকাশে উড়তে উড়তেই মাটিতে পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন চিহ্নিত করতে পারবে। কাজও শুরু করে দেয়। ইতিমধ্যে সে এমন তিনটি ড্রোন বানিয়েও ফেলেছে। যার জন্য খরচ হয়েছে ৫ লক্ষ টাকা। প্রথম দু’টো ড্রোনের যাবতীয় খরচা তার বাবা জুগিয়েছেন। ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল সেগুলো বানাতে। তৃতীয় ড্রোনটার জন্য অবশ্য গুজরাত সরকারের পক্ষ থেকে ৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়।
বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে হর্ষবর্ধন
কী ভাবে কাজ করবে ওই ড্রোন?
ইনফ্রারেড, আরজিবি সেন্সর এবং থার্মাল মিটার প্রযুক্তির সাহায্যে চিহ্নিত করবে ল্যান্ডমাইন। মাটি থেকে দু’ ফুট উঁচুতে ওড়ার সময় ড্রোন থেকে নির্গত এই তরঙ্গ আট বর্গ মিটার পর্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। ল্যান্ডমাইন খুঁজে পেলে ড্রোনে লাগানো ২১ মেগাপিক্সলের ক্যামেরা হাই-রেজলিউশন ছবি তুলে তা পাঠিয়ে দেবে নির্দিষ্ট অফিসে যেখান থেকে ড্রোনটি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এরপর নিন্ত্রয়ণকারী যদি মনে করেন, ল্যান্ডমাইন নিষ্ক্রিয় করার প্রয়োজন, তা হলে অফিসে বসেই বোমা ফাটিয়ে তা ধ্বংস করে দেবেন। তার জন্য প্রতিটা ড্রোন ৫০ গ্রাম ওজনের বোমাও বহন করবে।
হর্ষবর্ধনের এই আইডিয়া পছন্দ হয়ে যায় গুজরাত সরকারের। তার জেরেই হয়ে গেল ব্যবসায়িক সমঝোতাপত্রের সইসাবুদ। পেটেন্ট-এর জন্য ইতিমধ্যে তার নামও নথিভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ড্রোন তৈরির নিজস্ব ‘এরোবটিক্স’ নামে কোম্পানিও খুলে ফেলেছে হর্ষবর্ধন। তবে শুধু ড্রোন কোম্পানিতেই থামতে চায় না এই খুদে প্রতিভা। মাথার মধ্যে আরও আইডিয়া ঘুরপাক খাচ্ছে। ড্রোন পর্ব সামলে আরও সামনে এগোতে চায় সে।
আরও পড়ুন: শালিমার থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছিল ‘অপারেশন শ্রীনু’, জানাল পুলিশ, গ্রেফতার ৭