আস্থা ভোটের ঠিক আগের রাতেই ওস্তাদের মার দিল বিজেপি। মণিপুরে টানা ১৩৯ দিনের অবরোধ উঠে গেল। নতুন সরকারে বিজেপি ক্ষমতায় আসতেই এল সাফল্য। ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল বা ইউএনসি-র সঙ্গে বোঝাপড়ায় এসে চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা ওই অবরোধ তুলিয়ে নিতে সফল হল বিজেপি। ফলে সোমবার থেকে জনজীবন ফের সচল মণিপুরে। চার মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ওই অবরোধের জেরে মণিপুর কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।
রবিবার মণিপুরের সেনাপতি জেলায় ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল, নাগা ছাত্র সংগঠন, নাগা মহিলা সংগঠন, রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব সত্যেন্দ্র গর্গের মধ্যে হওয়া বৈঠকের পরে ইউএনসি সিদ্ধান্ত নেয়, গত বছর ১ নভেম্বর থেকে রাজ্যের দু’টি জাতীয় সড়কে তারা যে অর্থনৈতিক অবরোধ চালাচ্ছিল— তা তুলে নেওয়া হবে। চার মাস ১৯ দিনের দীর্ঘতম অবরোধ তোলার বিনিময়ে ইউএনসির সভাপতি-সহ গ্রেফতার হওয়া সব নেতা-কর্মীকে মুক্তি দিচ্ছে সরকার। তাদের বিরুদ্ধে চলা মামলাও প্রত্যাহার করা হবে। এক মাসের মধ্যে নাগা এলাকা বিভাজন করে নতুন জেলা তৈরি প্রসঙ্গে পরবর্তী ত্রিপাক্ষিক বৈঠক বসবে। আগামী কাল সকাল সাড়ে ১০টায় আস্থা ভোট। আগে এ দিন সকালে গুয়াহাটির হোটেলে নজরবন্দি থাকা বিজেপি ও শরিক বিধায়কদের ইম্ফলে নিয়ে যায় বিজেপি। নতুন বিধায়কদের এ দিন শপথবাক্য পাঠ করান প্রটেন অধ্যক্ষ ভি হাংখালিয়ানে। নেডার আহ্বায়ক হিমন্তবিশ্ব শর্মা ও মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের দাবি, তাঁদের পক্ষে ৩৩ জন বিধায়ক আছেন, কংগ্রেসের দিকে ২৭ জন। তাই জোট সরকারের জয় নিশ্চিত।
আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের আগে সুর চড়বে হিন্দুত্বের, মোদীর অঙ্ক স্পষ্ট
মণিপুরের পূর্বতন কংগ্রেস সরকার কয়েকটি নতুন জেলা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জাতীয় সড়ক আটকে দিয়ে অবরোধে যায় ইউএনসি। তাদের অভিযোগ ছিল, নতুন জেলা গঠন হলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে নাগা সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষরা যে সব এলাকায় বাস করে আসছেন, সেগুলো ভাগ হয়ে যাবে, ক্ষুণ্ণ হবে নাগা স্বার্থ। নতুন জেলা গঠনের ফলে নাগা সম্প্রদায়ের মানুষ জমিহারা হবেন। নতুন জেলা গঠনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি তোলে তারা। জানানো হয় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়া হবে।
অবরোধের জেরে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল মণিপুর। ইম্ফল-ডিমাপুর ও ইম্ফল-শিলচর হাইওয়েতে ১৩৯ দিন ধরে চলে এই অবরোধ। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আসা ট্রাকের পর ট্রাক ঢুকতে পারেনি মণিপুরে। আসল দামের থেকে অনেক চড়া দামে জিনিসপত্র কিনতে বাধ্য হন মানুষ। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, হাসপাতালে অক্সিজেন ও ওষুধে টান পড়েছিল। তারই মাঝে জঙ্গি হামলায় পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার নেয়। গতকাল মাঝরাত থেকে অবরোধ উঠে যাওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন নাভিশ্বাস উঠে যাওয়া মণিপুরের বাসিন্দারা।
বিজেপি নির্বাচনের আগে জানিয়েছিল, ক্ষমতায় আসার পর তাদের প্রথম কাজ হল দীর্ঘদিন ধরে চলা অর্থনৈতিক অবরোধ তোলার ব্যবস্থা করা। সেইমতো সেনাপতি এলাকায় ইউএনসি সদর দফতরে সদ্য গঠিত বিজেপি সরকার বৈঠকে বসে ইউএনসি’র সঙ্গে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে রাজ্য তাদের আশ্বাস দেয়, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করে নতুন জেলা গঠন হবে না। ইউএনসি জানিয়ে দেয়, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আলোচনার পরিবেশ গড়ে তুলতে অবরোধ তুলে নেওয়া হবে। এরপরই অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।