প্রতীকী ছবি।
সরু বারান্দাটা ভিড়ে থিকথিক করছে। ছেঁড়া, ময়লা পোশাক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আবাসিকেরা। ভিড় ঠেলে আরও একটু এগোতেই তাজ্জব বলে যান মহিলা কমিশনের অফিসারেরা। সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে স্নানাগারের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কয়েক জন নগ্ন মহিলা! প্রকাশ্যে, সেই বারান্দার মধ্যেই। আচমকা পরিদর্শনে গিয়ে দিল্লির একটি মানসিক রোগীদের হোমের ভিতরের এই দৃশ্য দেখে হতভম্ব হয়ে যান মহিলা কমিশনের অফিসারেরা। যা মনে করিয়ে দেয় হুগলির গুড়াপ হোমের কথা। যেখানে দীর্ঘ দিন আবাসিকদের উপরে যৌন নির্যাতন চালাতেন হোমেরই কিছু কর্মী। তবে এ ক্ষেত্রে তেমন কোনও ঘটনা ঘটেছে কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়। হোমের পরিকাঠামো, আবাসিকদের মৃত্যু এবং নগ্ন অবস্থায় তাঁদের কেন ঘুরে বেড়াতে হচ্ছিল তার যাবতীয় কারণ জানতে চেয়ে সমাজকল্যাণ দফতরের সচিবের কাছে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন কমিশনের চেয়ারপার্সন। পাশাপাশি, কমিশনও তাদের তদন্তের আলাদা রিপোর্ট তৈরি করছে।
দিল্লির একটি সরকারি হোম। ওই এই হোমে গত দু’মাসে ১১ জন আবাসিকের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণ যাচাই করতেই সম্প্রতি হোম পরিদর্শনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন দিল্লির মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিবাল। সঙ্গে ছিলেন প্রমিলা গুপ্ত-সহ আরও কয়েক জন কর্মী। সেখানে গিয়েই এই দৃশ্য দেখেন তাঁরা। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, তাজ্জব হওয়ার আরও কিছু বাকি ছিল। বারান্দা থেকে এর পর তাঁরা পৌঁছে যান হোম কর্তৃপক্ষের ঘরে।
কমিশন সূত্রের খবর, সেখানে কয়েক জন আবাসিককে দিয়ে নিজেদের সেবা করাতে ব্যস্ত ছিলেন কর্মীরা। মানসিক রোগীরা তাঁদের পা টিপে দিচ্ছিলেন। আর ওই বারান্দায় যে সিসিটিভি লাগানো রয়েছে, তা মনিটর করছিলেন হোমের পুরুষ কর্মীরা।
দিল্লির মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিবাল
কমিশন সূত্রের খবর, ওই হোমে মোট ৩৫০ জন আবাসিকের থাকার পরিকাঠামো রয়েছে। সে জায়গায় রয়েছেন ৪৫০ জন। মেঝে বিছিয়ে রাখা চাদরে এক জনের বদলে কম করে চার জন করে শুয়ে থাকেন। এমনকী, হোমের শৌচাগার এতটাই অপরিষ্কার যে সেখানে ঢোকা যায় না। দুর্গন্ধে ঠিকমতো শ্বাসও নেওয়া দায়। তার উপর চলাফেরা করতে অক্ষমদের জন্য কোনও ব্যবস্থা নেই। শৌচাগারে পৌঁছতে হলে তাঁরা মেঝেয় ঘষে ঘষে শৌচাগার পর্যন্ত যাচ্ছেন। মানসিক রোগীদের চিকিৎসার জন্য রয়েছেন মাত্র এক জন চিকিৎসক।
আরও পড়ুন: ঠান্ডা মাথার খুনি, ভাগ্যিস ছেলেকে মারেনি, বললেন আকাঙ্ক্ষার বাবা
এই ঘটনা সামনে আসার পরেই ময়দানে নেমে পড়েছে বিজেপি। উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়ার পদত্যাগ দাবি করেছে বিজেপি। তাঁর অধীনেই রয়েছে সমাজকল্যাণ দফতর। দিল্লি বিজেপির সভাপতি মনোজ তিওয়ারি বলেন, ‘‘ওই হোমে ১১ জন আবাসিকের মৃত্যুর সমস্ত দায় মণীশের। তাই তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।’’